পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২২

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি এবং তৎপুরুষ সমাস চেনার উপায়- Sotterchaya

পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে

তৎপুরুষ সমাস বলে। তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয় থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোনো বিভক্তি থাকতে পারে; আর পূর্বপদের বিভক্তি অনুসারে এরেদ নামকরণ হয়। যেমন- বিপদকে আপন্ন= বিপদাপন্ন। এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি ‘ক’ লোপ পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ।

তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার, যথাঃ দ্বিতীয়া, তৃতীয়া, চতুর্থী, পঞ্চমী, ষষ্ঠী, সপ্তমী, নঞ, উপপদ ও অলুক তৎপুরুষ সমাস।

১. ত্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা: দুঃখকে প্রাপ্ত= দুঃখপ্রাপ্ত, বিপদকে আপন্ন= বিপদাপন্ন।
২. তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির (দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা: মন দিয়ে গড়া= মনগড়া, শ্রম দ্বারা লব্ধ= শ্রমলব্ধ, মধু দিয়ে মাখা= মধুমাখা।

র্উ্ন, হীন, শূণ্য প্রভূতি শব্দ উত্তরপদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা: এক দ্বারা উন= একোন, বিদ্যা দ্বারা হীন= বিদ্যাহীন, জ্ঞান দ্বারা শূণ্য= জ্ঞানশূণ্য, পাঁচ দ্বারা কম, পাঁচ কম।

উপকরণবাচক বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া ত’ৎপুরুষ সমাস হয়। যথা: স্বর্ণ দ্বারা মন্ডিত= স্বর্ণমন্ডিত, এরূপ- হীরকখচিত, চন্দনচর্চিত, রত্মশোভিত ইত্যাদি।

৪. পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস: পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে ইত্যাদি) লোপে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা- খাঁচা থেকে ছাড়া= খাঁচাছাড়া, বিলাত থেকে ফেরত= বিলাতফেরত ইত্যাদি।
সাধারণত চ্যুত, আগত, ভীত, গৃহীত, বিরত, মুক্ত, উত্তীর্ণ, পালানো, ভ্রষ্ট ইত্যাদি পরপদের সঙ্গে যুক্ত হলে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: স্কুল থেকে পালানো= স্কুলপালানো, জেল থেকে মু্ক্ত= জেলমুক্ত ইত্যাদি। এ রকম জেলখালাস, বোঁটাখসা, আগাগোড়া, শাপমুক্ত ঋণমুক্ত ইত্যাদি।

কোন কোন সময় পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাসের ব্যাসবাক্যে ‘এর’ ‘চেয়ে’ ইত্যাদি অনুসর্গের ব্যবহার হয়। যথা পরাণের চেয়ে প্রিয়= পরাণপ্রিয়।

৫. ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসঃ পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তির (র, এর) লোপ হয়ে যে সমাস হয়, তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা: চায়ের বাগান= চাবাগান, রাজার পু্ত্র= রাজপুত্র, খেয়ার ঘাট= খেয়াঘাট। 

অনুরূপভাবে- ছাত্রসমাজ, দেশসেবা, দিল্লীশ্বর, বাঁদরনাচ, পাটক্ষেত, ছবিঘর, ঘোরদৌঁড়, শ্বশুরবাড়ি, বিড়ালছানা ইত্যাদি। 

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে এবং কর্মধারয় সমাস চেনার সহজ উপায়।

জ্ঞাতব্য
(ক) ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে ‘রাজ’ স্থলে রাজ, পিতা, মাতা, ভ্রাতা স্থানে যথাক্রমে পিতৃ, মাতৃ, ভ্রাতৃ হয়। যেমন গজনীর রাজা= গজনীরাজ, রাজারপুত্র= রাজপুত্র, পিতার ধন= পিতৃধন, মাতার সেবা= মাতৃসেবা, ভ্রাতার স্নেহ= ভ্রাতৃস্নেহ, পুত্রের বধূ= পুত্রবধু ইত্যাদি।

(খ) পরপদে সহ, তুল্য, নিভ, প্রায়, সহ, প্রতিম- এসব শব্দ থাকলেও ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন- পত্নীর সহ= পত্নীসহ, কন্যার সহ= কন্যাসহ, ইত্যাদি।

গ।কালের কোন অংশবোধক শব্দ পরে থাকলে তা পূর্বে বসে। যথা- অহ্নের (দিনের পূর্বভাগ= পূর্বাহ্ন।

(ঘ) পরপদে রাজি, গ্রাম, বৃন্দ, গণ, যূথ প্রভূতি সমষ্টিবাচক শব্দ থাকলে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যথা- ছাত্রের বৃন্ধ= ছাত্রবৃন্ধ,গুণের গ্রাম= গুণগ্রাম, হস্তীর যূথ= হস্তীযূথ ইত্যাদি।

(ঙ) অর্ধ শব্দ পরপদ হলে সমস্তপদে তা পূর্বপদ হয়। যেমন- পথের অর্ধ= অর্ধপদ, দিনের অর্ধ- অর্ধদিন।

(চ) শিশু, দুগ্ধ ইত্যাদি শব্দ পরে থাকলে স্ত্রীবাচক পূর্বপদ পুরুষবাচক হয়। যেমন- মৃগীর শিশু= মৃগশিশু, ছাগীর দুগ্ধ= ছাগদুগ্ধ ইত্যাদি।

৭। ব্যাসবাক্যে ‘রাজাৎ শব্দ পরে থাকলে সমস্তপদে তা আগে আসে। যেমন- পথের রাজা= রাজপথ, হাঁসের রাজা= রাজহাঁস।

অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস: ঘোড়ার ডিম, মাটির মানুষ, হাতের পাঁচ, মামার বাড়ি, সাপের পা, মনের মানুষ, কলের গান ইত্যাদি। কিন্তু ভ্রাতার পুত্র= ভ্রাতুষ্পুত্র (নিপাতনে সিদ্ধ)।

৬। সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস: পেূর্বপদে সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: গাছে পাকা= গাছপাকা, দিবায় নিদ্রা= দিবানিদ্রা। এরূপ- বাকপটু, গোলাভরা, তালকানা, অকালমৃত্যু, বিশ্ববিখ্যাত, ভোজনপটু, দানবীর, বাক্সবন্ধি, বস্তপচা, রাতকানা, মনমরা ইত্যাদি।

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাসে কোনো কোনো সময় ব্যাসবাক্যে পরপদ সমস্তপদের পূর্বে আসে। যেমন- পূর্বৈ ভূত= ভূতপূর্ব, পূর্বে অশ্রুত= অশ্রুতপূর্ব, পূর্বে অদৃষ্ট= অদৃষ্টপূর্ব।

৭। নঞ্চ্ তৎপুরুষ সমাসঃ না বাচক নঞ্চ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয়, তাকে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে। যথা- ন আচার= অনাচার, ন কাতর= অকাতর। এরূপ- অনাদর, নাতিদীর্ঘ, নাতিখর্ব, অভাব, বেতাল ইত্যাদি।

খাঁটি বাংলায় অ, আ, না কিংবা অনা হয়। যেমন- ন কাল= অকাল বা আকাল। তদ্রুপ- আধোয়া, নামঞ্জুর, অকেজো, অজানা, অচেনা, আলুনি, নাছোড়া, অনাবাদী, নাবালক ইত্যাদি।

না বাচক অর্থ ছড়াও বিশেষ বিশেষ অর্থে নঞ তৎপুরুষ সমাস হতে পারে যথা-
অভাব- ন বিশ্বাস= অভিশ্বাস (বিশ্বাসের অভাব)।
ভিন্নতা- ন লোকিক= অলৌকিক।
অল্পতা- ন কেশা= অকেশা।
বিরোধ- ন সুর= অসুর।
অপ্রশস্ত- ন কাল= অকাল
মন্দ- ন  ঘাট= অঘাট

৮। উপপদ তৎপুরুষ সমাস: যে পদের পরবর্তী ক্রিয়ামূলের সঙ্গে কৃৎ- প্রত্যয় যুক্ত হয় সে পদকে উপপদ বলে। কৃদন্ত পদের সঙ্গে উপপদের যে সমাস হয়,তাকে বলে উপপদ তৎপুরুষ সমাস। যেমন- জলে চরে যা= চলচর, জল দেয় যে= জলদ, পঙ্কে জন্মে যা= পঙ্কজ। এরূপ- গৃহস্থ, সত্যবাদী, ইন্দ্রজিৎ, ছেলেধারা, ছা-পোষা ইত্যাদি।

৯। অলুক তৎপুরুষ সমাস: যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তি লোপ হয় না, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: গায়ে পড়া= গায়েপড়া। এরূপ- ঘিয়ে ভাজা, কলে ছাঁটা, কলের গান, গরুর গাড়ি ইত্যাদি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন