পৃষ্ঠাসমূহ

মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২২

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে এবং কর্মধারয় সমাস চেনার সহজ উপায়- সত্যের ছায়া

বিসিএস, ব্যাংক, প্রাথমিক শিক্ষক নিবন্ধন সহ সকল প্রকার চাকুরী পরীক্ষায় সমাস থেকে প্রশ্ন করা হয়।

সমাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকারভেদের নাম কর্মধারয় সমাস। এই কর্মধারয় সমাস থেকে স্কুল পরীক্ষায় এবং নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় প্রশ্ন আসে। অনেকে না বুঝার কারণে চিনতে ভুল করেন। তাই আজকে কর্মধারয় সমাস ও কর্মধারয় সমাস চেনার সহজ উপায় আলোচনা করব।

কর্মধারয় সমাসঃ যেখানে বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রাধান্য থাকে, তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। যেমন- নীল যে পদ্ম- নীলপদ্ম। কাঁচা অথচ মিঠা- কাঁচামিঠা, শান্ত অথচ শিষ্ট= শান্তশিষ্ট।

কর্মধারায় সমাস সাধন প্রক্রিয়াঃ কর্মধারায় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়-
১। দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বোঝালে। যেমন- যে চালাক সেই চতুর= চালাক-চতুর।
২। দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে। যেমন- যিনি জজ তিনিই সাহেব= জজ সাহেব।
৩। কায়ে পরম্পরা বোঝাতে দুটি কৃতন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন- আগে ধোয়া পরে মোছা= ধোয়ামোছা।
৪। পূর্বপদে স্ত্রীবাচক বিশেষণ থাকলে কর্মধারয় সমাসে সেটি পুরুষ বাচক হয়। যেমন- সুন্দরী যে লতা= সুন্দর লতা, মহতী যে কীর্তি= মহার্কীতি।
৫। বেশষণবাচক মহান বা মহৎ শব্দ পূর্বপদ হলে, মহৎ ও মহান স্থান মহা হয়। যেমন মহৎ যে জ্ঞান= মহাজ্ঞান, মহান যে নবী= মহানবি।
৬।পূর্বপদে কু বিশেষণ থাকলে এবং পরপদের প্রথমে স্বরধ্বনি থাকলে কু স্থানে কৎ হয়। মেযন- কু যে অর্থ= কদর্থ, কু যে আচার= কদাচার।
৭। পরপদেরাজা শব্দ থাকলে কর্মধারয় সমাসে রাজ হয়। যেমন- মহান যে রাজা= মহারাজ।
৮। বিশেষণ ও বিশেষ্য পদে কর্মধারয় সমাস হলে কখনো কখনো বিশেষণ পরে আসে, বিশেষ্য আগে যায়। যেমন- সিদ্ধ যে আলু= আলুসিদ্ধ, অধম যে নর= নরাধম।

কর্মধারয় সমাসের প্রকারভেদঃ কর্মধারয় সমাস চার প্রকার, যথা- ১. মধ্যপদলোপী, উপমান, উপমিত ও রূপক কর্মধারয় সমাস।

১. মধ্যপদলোপী কর্মধারয়ঃ যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসাক্যের মধ্যপদের লোপ হয়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাসবলে। যথা- সিংহ চিহ্নিত আসন= সিংহাসন, সাহিত্য বিষয়ক সভা= সাহিত্যসভা, স্মৃতি রক্ষর্থে সৌধ= স্মৃতিসৌধ।

২. উপমান কর্মধারয়ঃ উপমান অর্থ তুলনীয় বস্তু। প্রত্যক্ষ কোনো বস্তুর সাথে পরোক্ষ কোন বস্তুর ‍তুলনা করলে প্রত্যক্ষ বস্তুটিকে বলা হয় উপমেয়, আর যার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে তাকে বলা হয় উপমান। উপমান ও উপমেয়ের একটি সাধারণ ধর্ম থাকবে। যেমন- ভ্রমরের ন্যায় কৃষ্ণ কেশ= ভ্রমরকৃষ্ণকেশ। এখানে ভ্রমর উপমান এবং কেশ উপমেয়। কৃষ্ণত্ব হলো সাধারণ ধর্ম। সাধঅরণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। যথা- তুষারের ন্যায় শুভ্র= তুষারশুভ্র, অরুণের ন্যায় রাঙ্গা= অরুণরাঙ্গা।কোকিলের ন্যয় কন্ঠ= কোকিলকন্ঠ। গন্ডারের ন্যায় সিঙ্গ= গন্ডারসিঙ্গ। ময়ূরের ন্যায় কন্ঠ= ময়ূরকন্ঠ। ময়ূরের ন্যায় সিংহাসন= ময়ূরসিংহাসন।

৩। উপমিত কর্মধারয়: সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয়, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে (এক্ষেত্রে গুণটিকে অনুমান করে নেওয়া হয়) এ সমাসে উপমেয় পদটি পূর্বে বসে। যেমন- মুখ চন্দ্রের ন্যায়= চন্দ্রমুখ। পুরুষ সিংহের ন্যায়= সিংহপুরুষ।

৪। রূপক কর্মধারয়: উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়। এ সমাসে উপমেয় পদ পূর্বে বসে এবং উপমান পদ পরে বসে এবং সমস্যামান পদে ‘রূপ’ অথবা ‘ই’ যোগ করে ব্যাসবাক্য গঠন করা হয়। যেমন- ক্রোধ রূপ অনল= ক্রোধানল, বিষাধ রূপ সিন্ধু= বিষাদসিন্ধু, মন রূপ মাঝি= মনমাঝি।
 
আরও কয়েক ধরণের কর্মধারয় সমাস রয়েছে। কখনো কখনো সর্বনাম, সংখ্যাবাচক শব্দ এবং উপসর্গ আগে বসে পরপদের সাথে কর্মধারয় সমাস গঠন করতে পারে। যেমন-
অব্যয়: কুকর্ম, যথাযোগ্য।

সর্বনাম: সেকল, একাল।
সংখ্যাবাচক শব্দ: একজন, দোতলা।
উপসর্গ: বিকাল, সকাল, বিদেশ, বেসুর।


এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন