পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে, বহুব্রীহি সমাস চেনার উপায় এবং প্রকারভেদ- সত্যের ছায়া

বহুব্রীহি সমাসঃ বহুব্রীহি সমাস জানার আগে বহুব্রীহি সম্পর্কে আলোচনার অবকাশ রাখে, তাহলে বহুব্রীহি সমাসটি বুঝতে সুবিধা হবে। এখানে  বহু শব্দের অর্থ অনেক  এবং ব্রীহি শব্দের অর্থ ধান বা আউস ধান। অর্থাৎ অনেক ধান, কিন্তু এখানে অনেক ধানকে না বুঝিয়ে অনেক ধান আছে এমন লোককে বুঝাচ্ছে।  অর্থাৎ এখানে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করছে। সুতরাং বহুব্রীহি সমাস বলতে ঐ সমাস কে বুঝায়, যেখানে সমস্যামান পদুগলোর কোনাটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কোন পদকে বোঝাবে। যথা বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার= বহুব্রীহি। এখানে ‘বহু’ কিংবা ‘ব্রীহি’ কোনেটিরই অর্থের প্রাধান্য নেই, যার বহু ধান আছে এমন লোককে বোঝাচ্ছে। আবর  ধীর বুদ্ধি যার= ধীরবুদ্ধি। এখানে ব্যক্তিকে না বুঝিয়ে জ্ঞানের (মস্তিষ্কের) কর্মক্ষমতাকে বুঝানো হয়েছে।

বহুব্রীহি সমাস চেনার উপায়ঃ
(ক) বহুব্রীহি সমাসে যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যথা: আয়ত লোচন যার= আয়তলোচনা (স্ত্রী), মহান আত্মা যার= মহাত্মা, স্বচ্ছ সলিল যার= স্বচ্ছসলিলা, নীল বসন যার= নীলবসনা, স্থির প্রতিজ্ঞা যার= স্থিরপ্রতিজ্ঞ, ধীর বুদ্ধি যার= ধীরবুদ্ধি।

(খ) ‘সহ’ কিংবা ‘সহিত’ শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে ‘সহ’ ও ‘সহিত’ এর স্থলে ‘স’ হয়। যেমন: বান্ধবসহ বর্তমান= সবান্ধব, সহ উদর যার= সহোদর,.সোদর। এরূপ- সজল, সফল, সদর্প, সলজ্জ, সকল্যাণ ইত্যাদি। 

(গ) বহুব্রীহি সমাসে পরপদে মাতৃ, পত্মী, পুত্র, স্ত্রী ইত্যাদ শব্দ থাকলে এ শব্দগুলোর সঙ্গে ‘ক’ যুক্ত হয়। মেন: নদী মাতা (মাতৃ) যার= নদীমাতৃক, বি (বিগত) হয়েছে পত্মী যার= বিপত্মীক। এরূপ- সস্ত্রীক, অপুত্রক ইত্যাদি।

(ঘ) বহুব্রীহ সমাসে সমস্ পদে অক্ষি শব্দের স্থলে ‘অক্ষ’ এবং ‘নাভি” শব্দ স্থলে ‘নাভ’ হয়। যেমন: কমলের ন্যায় অক্ষি যার= কমলাক্ষ, পদ্ম নাভিতে যার = পদ্মনাভ। এরূপ- উর্ণনাভ। 

(ঙ) বহুব্রীহ সমাসে পরপদে ‘জায়া’ শব্দ স্থানে ‘জানি’ হয় এবং পূর্বপদের কিছু পরিবর্তণ হয়। যেমন: যুবতী জায়া যায়= যুবজানি (যুবতী স্থলে ‘যুব’ এবং ‘জায়া’ স্থালে জানি হয়েছে)।

(চ) বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘চূড়া’ শব্দ সমস্ত পদে ‘চূড়’ এবং ‘কর্ম’ শব্দ সমস্ত পদে ‘কর্মা’ হয়। যেমন: চন্দ্র চূড়া যায়= চন্দ্রচূড়. বিচিত্র কর্ম যার= বিচিত্রকর্মা।

(ছ) বহুব্রীহি সমাসে ‘সমান’ শব্দের স্থানে ‘স’ এবং ‘সহ’হয়। যেমন: সমান কর্মী যে= সহকর্মী, সমান বর্ণ যার= সমবর্ণ, সমান উদর যাদের= সহোদর।

(জ) বহুব্রীহি সমাসে পরপদে ‘গন্ধ’ শব্দ স্থানে ‘গন্ধি’ বা ‘গন্ধা’ হয়। যথা: সুগন্ধ যার= সুগন্ধি, পদ্মের ন্যায় গন্ধ যার, পদ্মগন্ধি, মৎস্যের ন্যায় গন্ধ যার= মৎস্যগন্ধা।

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ: বহুব্রীহি সমাস আট প্রকারঃ সমানাধিকরণ, ব্যাধিকরণ, ব্যতিহার, নঞ, মধ্যপদলোপী, প্রত্যয়ান্ত, অলুক ও সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।

১। সমানাধিকরণ বহুব্রীহি:পর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হলে সমানধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন: হত হয়েছে স্ত্রী যার= হতশ্রী, খোশ মেজাজ যার= খোশমেজাজ, এরকম: হৃতসর্বস্থ, উচ্চশির নীলকন্ঠ, জবরদস্তি, সুশীল, সুশ্রী, বদবখত, কমবখ্ত।

২। ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি: বহুব্রীহি সমাসের পূর্বপদ এবং পরপদ কোনোটিই যদি বিশেষণ না হয়, তবে তাকে বলে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি। যথা: আশীতে (দাঁতে) শি যার = আশীবিষ, কথা সর্বস্ব যার= কথাসর্বস্ব।পরপদ কৃদন্ত বিশেষণ হলেও ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস হয়। যেমন: দুই কান কাটা যার= দু কানকাটা, বোঁটা খসেছে যার= বোঁটাখসা, অনুরূপভাবে- ছা-পোষা, পা-চাটা, পাতা-চাটা, পাতাছেঁড়া, ধামাধরা ইত্যাদি।

৩। ব্যতিহার বহুব্রীহি: ক্রিয়ার পারস্পরিক অর্থে ব্যতিহার বহুব্রীহি হয়। এ সমাসে পূর্বপদে ‘আ’ এবং উত্তরপদে ‘ই’ যুক্ত হয়। যথা: হাতে হাতে যে যুদ্ধ= হাতাহাতি, কানে কানে যে কথা= কানাকানি। এমনিভাবে- চলে চুলে যে যুদ্ধ= চুলাচুলি, কাড়াকাড়ি, গালাগালি, দেখাদেখি, কোলাকুলি, লাঠালাঠি, হাসাহাসি, গুঁতাগুঁটিত, ঘুষাঘুষি ইত্যাদি।

৪। নঞ্ বহুব্রীহি: বিশেষ্য পূর্বপদের আগে নঞ্ (না অর্থবোধক) অব্যয় যোগ করে বহুব্রীহি সমাস করা হলে তাকে নঞ্ বহুব্রীহি বলে। নঞ্ বহুব্রীহি সমাসে সাধিত পদটি বিশেষণ হয়। যেমন: ন (নাই) জ্ঞান যার= অজ্ঞান, বে (নাই) হেড যার= বেহেড, না (নাই ) চারা (উপায়) যার= নাচার। নি (নাই) ভুল যার= নির্ভুল।

৫।মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
বহুব্রীহি সমাসের ব্যাখ্যায় জন্য ব্যবহৃত বাক্যাংরৈ কোন অংশ যদি সমস্তপদে লোপ পায়, তবে তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি বলে। যেমন: বিড়ালের চোখের ন্যায় চোখ যে নারীর= বিড়ালচোখী, হাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে= হাতেখড়ি। এমনিভাবে- গায়ে হলুদ, মেনিমুখো ইত্যাদি।

৬। প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
যে বহুব্রীহি সমাসের সমস্তপদে আ, এ, ও ইত্যাদি প্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলা হয় প্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি। যথা- এক দিকে ছোখ (দৃষ্টি) যার= একচোখা (চোখ+আ), ঘরের দিকে মুখ যার= ঘরমুখো (মুখ+ও), নিঃ (নেই) খরচযার= নি খরচে (খরচ+এ)। এরকম- দোটানা, দোমনা, একগুঁয়ে, অকেজো, একঘরে, দোনলা, দোতলা, উনপাঁজুরে ইত্যাদি।

৭। অলুক বহুব্রীহি
যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্ব বা পরপদের কোনো পরিবর্তণ হয় না, তাকে অলুক বহুব্রীহি বলে। অলুক বহুব্রীহি সমাসে সমস্ত পদটি বিশেষণ হয়। যথা: মাথায় পাগড়ি যার= মাথায়পাগড়ি, গলায় গামছা যার= গলায়গামছা (লোকটি)। এরূপ- হাতে-ছড়ি, কালে-কলম, মাথায়-ছাতা, কানে-খাটো ইত্যাদি। 

8। স্যখ্যাবাচক বহুব্রীহি:
পূর্বপদ সংখ্যাবাচক এবং পরপদ বিশেষ্য হলে এবং সমস্তপদটি বিশেষণ বোঝালে তাকে সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি বলা হয়। এ সমাসে সমস্ত পদে ‘আ’, ‘ই’ বা ‘ঈ’ যুক্ত হয়। যথা- দশ গজ পরিমান যার= দশগজি, চৌ (চার) চাল যে ঘরের= চৌচালা। এরূপ- চারহাতি, তেপায়া ইত্যাদি। কিন্ত, সে (তিন) তার (যে যন্ত্রের) = সেতার (বিশেষ্য)।

৯। নিপাতনে সিদ্ধ (কোনো নিয়মের অধীনে নয়) বহুব্রীহি: দু দিকে অপা যার= দ্বীপ, অন্তর্গত অপ যার= অন্তরীপ, নরাকারের পশু = নরপশু, জীবিত থেকেও যে মৃত= জীবন্মৃত, পন্ডিত হয়েও যে মূর্খ= পন্ডিতমূর্খ ইত্যাদি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন