পৃষ্ঠাসমূহ

শুক্রবার, ৭ এপ্রিল, ২০২৩

গোসাইরহাটে বাবুই পাখি বিলুপ্তির পথে।


‘বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই,
 কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। 
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকার পরে, 
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে...’। 

কবি রজনীকান্ত সেনের কালজয়ী ছড়াটির নায়ক আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে।

গোসাইরহাটে আগের মতো বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা আজ আর চোখে পড়ে না। গোসাগোসাইরহাট উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বিশেষ করে কোদালপুর, গোসাইরহাট, সাইখ্যা, নলমুরি, হাঁটুরিয়া, আলাওলপুর, সামন্তসার, ইদিলপুরসহ  বিভিন্ন অঞ্চলে খেজুরগাছ কিংবা তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে আবহমান গ্রামবাংলার সেই ঐতিহ্যবাহী নিপুণ বাসা তৈরির কারিগর বাবুই পাখি ও তার বাসা। খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচি পাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করতো বাবুই পাখিরা। বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি মজবুত। প্রবল ঝড়ো বাতাসে টিকে থাকে তাদের বাসা। বাবুই পাখির শক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন। বাবুই একাধারে শিল্পী, স্থপতি এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি। এরা এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যায় পছন্দের সঙ্গী খুঁজতে। সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সাথী বানানোর জন্য কত কিছুই না করে। পুরুষ বাবুই নিজের প্রতি আকর্ষণ করার জন্য খাল-বিল ও ডোবায় গোসল সেরে ফুর্তিতে নেচে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে। এরপর উঁচু তালগাছ, নারিকেল বা সুপারি গাছের ডালে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে।
বাসা তৈরির অর্ধেক কাজ হলে কাঙ্খিত স্ত্রী বাবুইকে ডেকে সেই বাসা দেখায়। বাসা পছন্দ হলেই কেবল পুরো কাজ শেষ করে। বাসা পছন্দ না হলে অর্ধেক কাজ করেই নতুন করে আরেকটি বাসা তৈরির কাজ শুরু করে। অর্ধেক বাসা তৈরি করতে সময় লাগে পাঁচ-ছয় দিন। স্ত্রী বাবুই পাখির বাসা পছন্দ হলে বাকিটা শেষ করতে সময় লাগে চারদিন। কেননা তখন পুরুষ বাবুই মহাআনন্দে বিরামহীনভাবে কাজ করে। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মত নিপুণভাবে বাসা তৈরি করে। প্রসঙ্গত পুরুষ বাবুই পাখি কেবল বাসা তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পুরুষ বাবুই খুঁজতে থাকে আরেক সঙ্গীকে। পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ এরা ঘর সংসার করতে পারে ছয় সঙ্গীর সঙ্গে তাতে স্ত্রী বাবুইয়ের না নেই। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। আর তিন সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা বাসা ছেড়ে উড়ে যায়। বাবুই পাখির প্রজনন মৌসুম হলো ধান ঘরে ওঠার মৌসুম। স্ত্রী বাবুই দুধ ধান সংগ্রহ করে এনে বাচ্চাদের খাওয়ায়। বাবুই পাখি তালগাছে বাসা বাঁধে বেশি। একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী গ্রামগঞ্জের তালগাছগুলো কেটে ইটভাটায় জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করায় দিনদিন তালগাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। এছাড়া রাতের আঁধারে পাখি শিকারিদের জালে বাবুই পাখি আটক হয়ে বিক্রি হচ্ছে শহরের পাখি বিক্রির দোকানে। আবার অনেক কবিরাজ প্রচার করে যে, বাবুই পাখির মাংস খেলে দাপত্য জীবন সুখের হয়। এই কথায় প্রলুব্ধ হয়ে অনেক বাবুই পাখি শিকার করে খাচ্ছে। আবার এলাকার অনেক দুষ্ট ছেলে বাবুই পাখি বাসা বাঁধলে তাতে ঢিল ছুড়ে বাসাগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছে। এভাবে দিনদিন বাবুই পাখি বিলুপ্ত হয়ে আমারেদ মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। 

গোসাইরহাটে বাবুই পাখি আজ বিলুপ্তির পথে। আশাকরি বাবুই পাখি রক্ষায় স্থানীয় বন বিভাগ এবং প্রাণী সম্পদ বিভাগ সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন