বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

বালুচর বাজার বা বালুরচর বাজার অথবা বালুচর পরিচিতি

বালুচর বাজারের পিছন দিকের দৃশ্য


বালুচর বাজার।
অবস্থানঃ বালুচর বাজারটি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের অর্ন্তভুক্ত একটি বাজার ও এলাকা। ইহা(বালুচর বাজার) কোদালপুর ইউনিয়নের সর্বশেষ উত্তরপ্রান্তে অবস্থিত। বালুচর বাজারের দক্ষিণপার্শ্বে কোদালপুর বাজার, উত্তরপার্শ্বে সাবেক গরীবেরচর বর্তমান আলাওলপুর ইউনিয়ন ও বাজার এবং পূর্বদিকে মেঘনা নদী।

নামকরণঃ ‘বালুচর’ নামকরণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, ‍উক্ত এলাকাটি নদী ভাঙ্গণ এলাকা হওয়ার কারণে এক সময় এক বিশাল বালুর চর জেগে উঠে এবং এই চরটি আস্তে আস্তে পশ্চিম পার্শ্বের মূল ডাঙ্গার সাথে মিলিত হয়ে যায়। ফলে এই এলাকার আলাদা বা স্বাতন্ত্র বুঝাতে লোকে বালুরচর বালুচর ডাকতে শুরু করে।

বালুচর বাজারের অন্তর্গত গ্রাম বা কান্দি ও বিশিষ্ট বাড়ি সমূহঃ বালুচর বা বালুরচর বাজারের অর্ন্তগত কয়েকটি গ্রাম বা কান্দি রয়েছে। এই কান্দিগুলো মধ্যে অন্যতম হলোঃ হাজী আশ্রাফ আলী বেপাড়ী কান্দি, মিছির আলী মোল্লাপাড়া, বকাউলপাড়া, হাজীপাড়া (সরদারপাড়া), মালপাড়া, মাধবরপাড়া ইত্যাদি। বিখ্যাত বাড়িগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চেয়ারম্যান বাড়ি, বাচ্চু মোল্লার বাড়ি, খোকা মোল্লার বাড়ি, রফিক মাঝির বাড়ী ইত্যাদি।

কৃষিঃ বালুচর বাজার বা বালুচর অধিবাসী মূলত কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল। এখানকার প্রধান অর্থনৈতিক ফসলের মধ্যে অন্যতম হলো মরিচ, ধান, পাট ইত্যাদি। এখানে প্রচুর পরিমাণ শীতকালীন শাক সবজি ফলে। উৎপাদিত শাক সবজি পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ করে ডামুড্যায় চাহিদায় মিটাতে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া ধনিয়া, কালোজিরা, সরিষা, ডাল ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে জন্মে।পেশাঃ 2000 ইং সালের আগ পর্যন্ত এখানকার মানুষের প্রধান পেশা ছিল কৃষি।তাছাড়া জেলে, চাষী পরিবার ছিলোও উল্লেথ করার মতো। হাতেগোনা কয়েকজন প্রাইভেট এবং সরকারী চাকুরীজীবী ছিলো। তবে বর্তমানে এই অবস্থার পরিবর্তন হতে শুরু করেছে। নতুন নতুন শিক্ষিত প্রজন্ম আসার ফলে অনেকে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হচ্ছে। যারা নিরক্ষর তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন  পেশায় নাম লিখাচ্ছেন।
শিক্ষাঃ 2000 সালের আগপর্যন্ত এখানে বি.এ পাশ ছিলো স্বল্প কয়েকজন এবং অক্ষরজ্ঞান সম্পূর্ণ মানুষ ছিলো নিতান্ত কম। তবে বর্তমানে শিক্ষার হার অনেক বেড়েছে। প্রতিটি ঘরে ঘরে শিক্ষিত ছেলে লেখা পড়া শেষ করে চাকুরীর বাজারে প্রবেশ করেছে।

অর্থনীতিঃ কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতি ব্যবস্থার কারণে এখানকার অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। তবে বিশ্বায়নের প্রভাবে অবস্থার পরিবর্তণ ঘটতেছে। অনেকে প্রবাসী ও ব্যবসায়ীক খাতায় নাম লিখে নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন করতেছে।
জীবন যাপনঃ বালুচর অধিবাসীগণ খুব সহজ সরলভাবে জীবন যাপন করেন। তারা অধিক আতিথেয়তা প্রবণ। এখানে এক সময় একান্নবর্তী পরিবারের আধিক্য ছিলো। কিন্তু বর্তমানে বিদেশী সিরিয়ালের প্রভাবে এবং বিশ্বায়ানের কারণে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে পরিবার ভিত্তিক বিভিন্ন নব্য ঝামেলার সৃষ্টি হচ্ছে।

নদী নদীঃ বালুচর বাজারের পূর্ব, উত্তর ও পশ্চিম দিক দিয়ে মেঘনার একটি শাখা নদী প্রবাহিত। এই নদীটি কোদালপুর ইউনিয়নের ঠান্ডা বাজার নামক স্থান থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিক কোদালপুর উকিল পাড়ায় বা কোদালপুর বাজারঘাটে অপর দুটি শাখী নদীর সাথে মিলিত হয়েছে।এই নদীটি এক সময় অনেক গভীর ছিলো এবং নদীতে অনেক ট্রলার, কার্গো, নৌকা চলাচল করত।
ঐতিহাসিক ও বিখ্যাত স্থানঃ পলিমাটি ও নদীভাঙ্গন প্রবণ এলাকা হওয়ার কারণে বালুচরে কোন ঐতিহাসিক বা প্রাচীন স্থাপনার নির্দেশন নাই।তবে অধুনা বালুচর বেইলী ব্রিজ, বালুচর জামে মসজিদ, বালুচর গণ কবরস্থান ইত্যাদি স্থাপনা সমূহ আলোচিত।

ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিঃ 2000 সালের আগে এখানকার ছেলেরা হাডুডু, দারিয়াবান্ধা,  ডান্ডামারী (গাংগুলি), মার্বেল, নইমারী (মাটির হাড়ি, পাতিলের ভাঙ্গা অংশ দিয়ে মাটির পাড় বা ঢিবির উপর এক প্রকার খেলা), লুডু, ষোল গিট্টা, বারো ঘিট্টা, বাঘ-ছাগল, ফুটবল ইত্যাদি খেলত। মেয়েরা সাধারণত বৌ-ছি, দায়িাবান্দা, ঘইট্টা ঘইট্টা খেলে সময় পার করত। বর্তমানে বালুচর বাজারের ছেলেদের নিকট ক্রিকেট খেলা অধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফুটবলেও তারা ভালো দক্ষ। এখান ক্রিকেট দল পাড়ার অন্যান্য দল থেকে কোন অংশে কম শক্তিশালী ছিলোনা। শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া’র) নেতৃত্বে (2008-2010) সাল পর্যন্ত বালুচর জাতীয় ক্রিকেট দল ছিলো অপরাজিত এবং প্রতিপক্ষের নিকট ছিলো অজয়।

সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বলতে নব্বই দশকে এখানে স্থানীয়দের আয়োজনে মঞ্চ নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল।তাছাড়া খোকা মোল্লার নেতৃত্বে বর্তমানে যেখানে গুচ্ছা গ্রাম বা সরকারী আশ্রয়ণ রয়েছে সেখানে নব্বই দশকে কয়েকবার যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাছাড়া বাচ্চু বান্ডারীর (বালুচর বাজারের পূর্বপাশে নদীর উপারে) তত্ত্বাবধানে তার নিজ বাড়ির পাশে পর পর কয়েক বছর যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়।
উৎসবঃ এখানকার প্রায় সবাই মুসলিম (মাত্র একঘর ব্যতীত, শম্ভুঘোষ পরিবার)তাই উৎসবগুলো মূলত ইসলাম ধর্ম অনুসারে পালিত হয়। প্রধান প্রধান উৎসবগুলো হলো, উদুল আযহা, ইদুল ফিতর, সবে বরাত, সবে কদর, মহরম, রমজানুল মোবারক ইত্যাদি।
বিবাহ, সুন্নৎে খাৎনা অনুষ্ঠানগুলো ধুমধামের সহিত পালিত হয়।
তাছাড়া রাষ্ট্রীয় দিবসগুলো যথাযথ তাৎপর্য অনুযায় পালিত হয়ে থাকে। পহেলা বৈশাখও মানুষ সাদরে গ্রহণ করে থাকে।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Sample Notice of Share Transfer

Intimation of Intended Share Gift by Mr. DK Khan, Managing Director,  ST Securities Limited