রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮

sibiu manuscript- সিবিও মানুষক্রিপ্ট বা পান্ডুলিপি-প্রাচীন রকেট বিজ্ঞান


সিবিও- মানুষক্রিপ্ট :
আপনাদের কাছে এই শব্দ যুগল নতুন হতে পারে কিন্তু এই শব্দটি প্রায় ৫০০ শত বছরের পুরানো, যা আমাদেরকে অতীতে মানুষের রকেট বিজ্ঞান  সম্পর্কে চিন্তার খোরাক জোগাবে।

সিবিও পান্ডুলিপিটি ১৯৬১ সালে আবিস্কৃত হয় যা ৪৫০ পাতার একটি বৃহৎ সংগ্রহ, যাতে অনেকগুলো বিষয় বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ও আলোচিত বিষয় হলো তিন স্তর বিশিষ্ট রকেটের ডিজাইন এবং রকেটের মাধ্যমে মানুষের ফ্লাইট সংক্রান্ত তথ্য।


 সিবিও পান্ডুলিপিতে রকেট ও আর্টিলারি সম্পর্কিত ড্রয়িং ও ডিজাইন

আমাদের অধিকাংশ মানুষের প্রাচীণগ্রন্থ গুলো সম্পর্কে  হয়ত বেশি একটা জ্ঞান রাখেন না। কিন্তু এই সমস্ত প্রাচীন গ্রন্থ বা পান্ডুলিপি আবিস্কৃত না হলে আমরা জানতাম না তারা কতটা অগ্রগামী ছিলেন। অতীত কালের মানুষের অসম্ভব চিন্তা-চেতনা এবং কৃতিত্বের ছাপ আছে প্রাচীন গ্রন্থে।

এখন আমি যদি আমি আপনাকে বলি, প্রায় ৫০০ বছরের আগেরকার একটি প্রাচীন পান্ডুলিপি আছে, যাতে রকেটে তরল জ্বালানীর ব্যবহার, মাল্টি স্টেজ রকেট গঠণ প্রণালী এবং রকেট এর মাধ্যমে মানুষের বিজ্ঞানের নানাবিধ অগ্রগামী কার্য-সম্পাদন করবেন তা বর্ণিত হয়েছে।  তাহলে নিশ্চয় আপনারা আপমাকে ধাপ্পাবাজ অথবা খবরটি পুরোপুরি গুজব বলে উড়িয়ে দিবেন। হয়ত আপনারা ভাববেন, লোকেরা কিভাবে এসব গুজব ছড়ায় এবং তারা মানুষের বিশ্বাস নিয়ে কি করে খেলা করে!

ছবিতে সিবিও পান্ডুলিপিতে তিন স্তর বিশিষ্ট রকেটের ডিজাইন ড্রয়িং ও স্পিসিফিকেশন বর্ণনা করা হয়েছে।

আমি বলতে চাই সিবিও পাণ্ডুলিপিটি বাস্তব, এটি জাল খবর নয় এবং সিবিও পান্ডুলিপিতে অন্যান্য বিষয়ের সাথে-তরল জ্বালানী এবং বহু-স্তরের রকেটের বর্ণনা করা হয়েছে। এই গ্রন্থটি ১৬ তম শতাব্দীতে আনুষ্ঠানিকভাবে মানুষের সামনে প্রকাশিত হয়।
১৯৬১ সালে সিবিও পাণ্ডুলিপিটি বুখারেস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ডুরু টডেরসিউইয়ের (Doru Todericiu মাধ্যমে আবিস্কৃত হয়। পাণ্ডুলিপিতে প্রায় ৪৫০ টি পৃষ্ঠা রয়েছে যা রোমানিয়ার সিবিও শহরের আর্কাইভ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। অধ্যাপক টডেরিকু যখন বইয়ের মলাট খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন তখন তাকে অবাক হন যে, প্রাচীন গ্রন্থটিতে আর্টিলারি, ব্যালাস্টিক ক্ষেপানাস্ত্র এবং মাল্টিস্টেজ রকেটের বিস্তারিত বিবরণ সম্মিলিত অঙ্কন ও প্রযুক্তিগত তথ্যের বিশাল সমাবেশ রয়েছে।

অনেকে মনে করেন, Sibiu পাণ্ডুলিপিটি ১৫৫০ এবং ১৫৭০ এর মধ্যে কনরাড হস (Conrad_Haas)নামক একজন ঐতিহাসিক, দার্শনিক ও বিজ্ঞান পাগল মানুষ দ্বারা লেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কনরাড হাস একজন সামরিক প্রকৌশলী ছিলেন, যিনি হাঙ্গেরি কিংডম এবং ট্রান্স্সিলনিয়ার শাসনতন্ত্রের অধীনে কাজ করেছিলেন।

সিবিএ মানুষক্রিপ্টে  দ্বি-স্তর এবং তৃতীয় স্তর বিশিষ্ট রকেট

এই প্রাচীন পাণ্ডুলিপিটির উৎস খুব স্পষ্ট নয়, এমনকি তার লেখক (কনরাড হাস) সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়না, ঐতিহাসিকদের মতে, কনরাড হাস অস্ট্রীয় বা ট্রান্স লিএন এ জন্ম গ্রহণ করেন এবং তিনি রাজা ফার্দিনান্দ আইয়ের অধীনে অস্ট্রীয় সাম্রাজ্যের অস্ত্রাগারের প্রধান হিসাবে নিযুক্ত হন। আর সেখানে তিনি আধুনিক আর্টিলারি, রকেট ও জ্বালানী সম্পর্কিত অস্ত্রের ডিজাইন, ড্রয়িং এবং স্পেসিফিকেনশন (Specification) সম্পর্কিত এই বইটি লিখেন।

সম্প্রতি জার্মানিতে এই পান্ডুলিপিটির সম্পূর্ণরূপ প্রকাশিত হয়েছে, যাতে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র নির্মাণের জন্য একটি তাত্ত্বিক তৎপরতা (বিশ্লেষণ) দেখানো হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইতিহাসে প্রথম বারের  মত মাল্টিস্টেজ রকেট প্রযুক্তিগত ধারণা ও ব্যবহার। এতে নানা ধরণের অস্ত্রশস্ত্রসহ আতশবাজি, হ্যান্ড গ্লাইডারের আকৃতির (পাখির পাখার উপর স্থাপিত বিমানের) নকশা এবং তরল জ্বালানী ব্যবহারের সঙ্গে আনুষঙ্গিক জ্বালানি মিশ্রণ তৈরির বিবরণও রয়েছে। যা আজকাল মানুষ কে সত্যিই অবাক করে।

পাখির পিঠে গ্লাইডার

হ্যাস তার ডিজাইনগুলি ব্যবহার করে বাস্তব ভিত্তিক পরীক্ষা করেছেন কিনা তা একটি অতি রহস্য। কিন্তু অনেকে দাবি করেন, ১৫৫০ সালে একটি রকেট লাঞ্চারের পরীক্ষা মূলক উড্ডয়ন করা হয়েছে বা পরীক্ষা চালানো হয়ে ছিল। যেটি ১৫৫০ সালে সিবিও শহরের ঘটছিলো এবং তা  হাজার হাজার মানুষ  প্রত্যেক্ষ করেছে। কিন্তু এই দাবির সমর্থনে কোন দালিলিক শক্ত প্রমাণ পাওয়া যায়না।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, ১৬ তম শতাব্দীতে Johann Schmidlap (জোহান শিমিডল্যাপ) নামক একজন বৈজ্ঞানিক ফায়ার ওয়ার্ক (Bavarian fireworks) নির্মাতা এবং রকেট অগ্রগতিতে কাজ করেন। তিনি ১৫৯০ এর দশকে প্রথম অবস্থায় দু, স্তর বিশিষ্ট এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে তিন স্তর বিশিষ্ট রকেটের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করেন।

তারপর তিন স্তরের রকেটের প্রথম বিবরণটি (Johann Schmidlap-জোহান শিমিডল্যাপ কর্তৃক প্রবর্তিত)  পোলিশ আর্টিলারির বিশেষজ্ঞ কাজিমিরিজ সিমেনিওউইচজকে (Kazimierz Siemienowicz) দেওয়া হয়, যিনি ১৬৫০ সালের আর্টিস ম্যাগনাই আর্টিলেরিয়া পারস প্রাইমিয়াতে এই সম্পর্কিত বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করেন।

সিবিও তে সচিত্র বর্ণনা সহ রকেটের specification

সার্বিক দিক বিবেচনা করলে একথা প্রতীয়মান হয় যে, কনরাড হাস প্রথম ব্যক্তি যিনি আর্টিলারি এবং রকেটের ড্রয়িং, ডিজাইন এবং স্পেশিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেন। কিন্তু দুভার্গ্যক্রমে তার রকেট সম্মলিত ফিজিবিলিটি এবং মাস্টার প্লানটি (সিবিও মানুষক্রফট) পান্ডুলিপিতে এক সময় মানুষের অন্তরালে চলে যায়। ফলে আবিস্কৃত সূত্র অনুযায়ী রকেটের ফিল্ড টেস্ট করা সম্ভব হয়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, কনরাড হাস তাঁর পাণ্ডুলিপিতে কয়েকটি আকর্ষণীয় বাক্য লিখেছিলেন যাতে তিনি রকেটের সামরিক ব্যবহারের বিষয়ে ধারণা প্রদান করেন।


এছাড়াও তিনি এককভাবে রকেটের আধুনিক যে ধারণা দেন তা বর্তমান কালের রকেটের ডিজাইনের সাথে হুবাহু মিল  আছে, যা একটি বিস্ময়কর। এ থেকে বুঝা যায় তিনি চিন্তা চেতনায় বর্তমানের কালের মানুষদের প্রায় কাছাকাছি ছিলেন। তার সিবিও আবিস্কৃত না হলে আমরা হয়ত তার কথা কখনো জানতাম না। তার sibiu manuscript-ই পৃথিবীর মাঝে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। তার প্রতি রইল অশেষ শ্রদ্ধা।

তথ্য সূত্রঃ
গুগল।

আপনাদের অনুভূতি দয়া করে কমেন্টের মাধ্যমে জানান।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Proposal for Sale of Commercial Lands- Sotterchaya