সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পাত্রী বা কনে দেখা- সত্যের ছায়া

নর-নারীর দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন, সংসার গঠন এবং পরবর্তী প্রজন্ম রক্ষার জন্য বিবাহ একটি উত্তম ব্যবস্থা। ইসলাম ধর্ম অনুসারীদের জন্য


স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা বিবাহ করার উপর জোড় দিয়েছেন এবং বিবাহ কে অবশ্যই পালনীয় কর্তব্য (ফরজ) হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। বিবাহ করার পূর্বে প্রতিটি নর-নারী একে অপরকে জানাশোনা ও দেখা প্রয়োজন। এই জানাশোনা ও দেখা অবশ্যই ইসলামী বিধান অনুসারে হতে হবে। আমাদের দেশে পাত্র-পাত্রী দেখার যে প্রচলন রয়েছে তা মূলত সনাতন কালচার।  ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। তাই ইসলাম ধর্মালম্বীদের উচিত ইসলামী বিধান অনুসারে পাত্র-পাত্রী দেখা এবং যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা। নিম্নে ইসলামের দৃষ্টিতে পাত্র-পাত্রী দেখার শরীয়তের বিধান  আলোচনা করা  হলোঃ

পাত্র পাত্রী দেখার বিষয়টি আলোচনা করার আগে পর্দার বিষয়টি আলোচনা করা দরকার। কেননা পাত্র পাত্রী দেখার সাথে পর্দার বিধানটি ওৎপ্রেতভাবে জড়িত। আল্লাহ নারী ও পুরুষ উভয়কে পর্দা ফরয় করে দিয়েছেন। তবে পর্দার বিধান (শরীল বা লজ্জাস্থান ঢাকা) নারী ও পুরুষের মধ্যে কিছুটা তারতম্য রয়েছে। তারতম্য যা হউক উদ্দেশ্য হলো সতের (লজ্জা স্থান) ঢাকা এবং নিজেদেরকে অন্যের কু-মন্ত্রণা থেকে হেফাজত করা। নারী পুরুষদের জন্য আল্লাহ্ পর্দা ও বিবাহ সংক্রান্ত যে আয়াত নাযিল করেছেন তা হলো-“তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মায়েদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাগনকে যাহারা তোমাদেরকে দুগ্ধপান করিয়েছেন, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের হেফাজতে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর তাতে কোন গুনাহ নেই এবং তোমাদের জন্মগত সন্তানের সহধর্মীনীকে এবং দুই বোনকে একত্র করা(তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতকালে যা হয়েছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু- (সুরা নিসা, আয়াত : ২৩)।”

এই আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মাতা, মেয়ে, বোন, ফুফু, খালা, ভাতিজি, ভাগ্নী, দুগ্ধমাতা, দুধবোন, শ্বাশুড়ী, নিজ স্ত্রীর কন্য (অ্ন্য পক্ষের), পুত্রবধু ও স্ত্রীর বোন (যখন এক বোন জীবিত ও সংসার করে) বিয়ে করা যায়েজ নয় এবং তাদের সামনে পর্দা করা জরুরী নয়। তবে অন্য পুরুষের সামনে পর্দা করা ফরয।  ইসলামী শরীয়ত বিধান অনসারে কুরআনে বর্ণিত বিবাহ করা হারাম এমন পুরুষ ব্যতীত শুধুমাত্র পাত্রের সামনে কতগুলো শর্ত সাপেক্ষে পাত্রী তার মুখমণ্ডল, হাত এবং কব্জি দেখাতে পারবে। সুতরাং ইসলামী শরীয়তের বিধান অনুসারে পাত্রী এবং পাত্রের মধ্যে মুখোমুখি সাক্ষাৎের (Face to Face/Viva Voice) সময় নিম্নলিখিত শর্ত পালন করতে হবেঃ

এক. পাত্রের সামনে পাত্রী কেবল টাখনু পর্যন্ত পা ও কবজি পর্যন্ত হাত এবং মুখমণ্ডল শুধুমাত্র একবার দেখানো বৈধ। এ ছাড়া পাত্রী শরীরের অন্য কোনো অঙ্গ বা যৌনাঙ্গ কাপড়ের আবরণ ছাড়া প্রদর্শণ করতে পারবেনা। প্রদর্শণ করা সম্পূর্ণ হারাম এবং কবিরা গুনাহ, পর্দার বরখেলাপ। 

দুই. পাত্র-পাত্রী চাইলে একে অন্যের সঙ্গে সরাসরি (ফেস টু ফেস) কথা বলতে পারবে।কিন্তু একে অন্যকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে পারবেনা। তারা একে অপর থেকে এমনভাবে বসবে যেন চাইলেই একে অপরকে হাত দিয়ে স্পর্শ করতে না পারে। ফেস টু ফেস ইন্টারভিউ এর সময় কোন প্রকার কামভাব চিন্তা করা যাবেনা। অশালীন অঙ্গভঙ্গি কিংবা একে অপরের প্রতি অনুরক্ত হতে পারবেনা। 

তিন. পাত্রী দেখার সময় পাত্র ব্যতীত পাত্র পক্ষের কোনো বালেগা পুরুষ, যেমন— বাবা, দাদা, বন্ধু-বান্ধব, ভাই বা অন্য যেকোন পুরুষ যার উপর পাত্রীর পর্দা করা ফরয করা হয়েছে তারা উপস্থিত থাকতে পারবেনা। গাইরে মাহরাম পুরুষদের পাত্রী দেখা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম।

চার. হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পার্ক, বন্ধুর বাড়িতে, স্কুল কলেজ এর ক্যান্টিনে কিংবা নির্জন স্থানে পাত্র-পাত্রীর একত্র হওয়া বৈধ নয়। এরুপ ক্ষেত্রে ব্যভিচার কিংবা নারী প্রতি সহিংস আচরণ বা যৌন হয়রানির আশংকা থাকে।

পাঁচ. উকিল বাবা’র পাত্রী দেখা বৈধ নয়।

ছয়. বিয়ের আগে পাত্রের প্রকৃত পিতার জন্যও হবু পুত্রবধূকে দেখা বৈধ নয়। 

সাত. পাত্র-পাত্রী দেখার সময় ছবি তোলা ও ভিডিও করাও বৈধ নয়।

আট. পাত্রী দেখানোর সময় এমন কোন অনুষ্ঠান করা উচিত নয় যা ইসলামী শরীয়ত সমর্থণ করেনা।

নয়. পাত্রী দেখায় সময় পাত্রের মা, বোন বা আত্মীয় সম্পর্কের অন্যে কোন নারী আলাদাভাবে দেখতে পারবেন।

দশ, অনুরুপভাবে পাত্রীর বোন বা অন্য যেকোন বালেগা নারী যার উপর পর্দা ফরয করা হয়েছে তাদের জন্য পাত্রের সামনে পর্দা করা ফরয। 


পাত্র-পাত্রী দেখার পর্ব অবশ্যই সুন্নত অনুসরণ করতে হবে। হজরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারিম (সা.) বলেছেন, ‌নারীদেরকে চারটি জিনিসের জন্য বিয়ে করা হয়- 

১। সম্পদের জন্য। 

২। বংশের জন্য।

৩। সৌন্দর্যের জন্য। 

৪। দীনদারীর জন্য। 

অতএব দীনদারকেই অগ্রাধিকার দাও। তোমারা সফল হয়ে যাবে। (বুখারি: ৪৮০২ )| 


পাত্রী দেখার আগে অবশ্যই তার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়ার উচিত। পাত্র পক্ষ কেমন পাত্রী চায় সেটা আগে নির্ধারণ করা জরুরি। পাত্রী দেখানোর সময় খাবার দাবার নিয়ে সমালোচনা করা অনুচিত। পাত্রী পছন্দ না হলে তার সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করা যাবেনা। পাত্রীর পরিবার, সামাজিক অবস্থা, প্রতাপ ও প্রভাব নিয়ে হেয় করে কথা বলা গুণাহের কাজ।

***

এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Sample Notice of Share Transfer

Intimation of Intended Share Gift by Mr. DK Khan, Managing Director,  ST Securities Limited