মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

গোসাইরহাটের নদী মাতৃক জীবন ও বাস্তবতা- সত্যের ছায়া

পলি পড়ে নাব্যতা হারিয়েছে গোসাইরহাটে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া জয়ন্তী নদী সহ ছোট বড় অনেক নদী নাব্যতা হারিয়ে নৌ চলাচল হুমকির মুখে পড়েছে। ড্রেজিং না করার ফলে নদীতে নৌ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে ।


চিত্রঃ বালুচর বাজার এর পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী।

পদ্মা ও মেঘনায় চর পরার পর থেকেই শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ১০টি খেয়াঘাট হারিয়ে গেছে। যা আছে সেগুলোও বিলিন হওয়ার পথে । 

নদীতে মাছ ধরে নদীর ধারে জমি চাষসহ বিভিন্নভাবে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল চরাঞ্চলের মানুষ। নদীতে পানি কমে যাওয়ায় মাছও হারিয়ে গেছে। 

অন্যদিকে, নদীতে নাব্যতা সংকটের কারনে অবাধে বালু কেটে নিয়ে যাচ্ছে একটি বালু খেকো চক্র। ফলে নদীর তীর ভেঙ্গে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে।


চিত্রঃ কোদালপুর তিন নদীর মোহনা (খালাসী কান্দি ও উকিল কান্দি সংলগ্ন)

খরস্রোতা এ সব নদী গুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে পানি প্রবাহ কমে গিয়ে নাব্যতা একে বারেই হারিয়ে ফেলেছে। 

গোসাইরহাট উপজেলা উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সবগুলো নদ-নদীর পানী কমে যাওয়ায় সেগুলো শাখা প্রশাখায় ভাগ হয়ে এখন শীর্ণকায় রূপ নিয়েছে।

আকস্মিক পানি শূন্যতায় প্রাণ চাঞ্চল্যে ভরা নৌঘাটগুলোর অস্তিত্ব এখন বিপন্ন। ইতিমধ্যে অনেক নৌঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। যে সব নৌ ঘাট এখনও কোন রকম টিকে রয়েছে সেগুলোরও এখন বেহাল দশা। চ্যানেলের অভাবে নৌযান কমে গেছে বেশির ভাগই। যে কোন সময় নৌ চলাচল সম্পূর্ণ রূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। উল্লেখ্য পানি সংকটের কারণে নৌ যোগাযোগ এখন হুমকির মুখে।

বালুচর বাজার ব্রিজ ঘাট

সবচেয়ে মারাত্মক হুমকিতে রয়েছে জয়ন্ত নদী। তাছাড়া মেঘনা নদীর বুক ফেরে গোসাইরহাটের চরজালালপুর থেকে মেঘনার একটি শাখা নদী মোল্লা বাজারের দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এই নদীটি দিয়ে আলাওলপুর (গরীবেরচর)ও চরকুমারিয়া ইউনিয়নের লোকজন চাঁদপুর এবং হাইমচরের সাথে নৌ চলাচল করে থাকে। বর্তমানে নদীটি নাব্যতা সঙ্কটে ভুগছে। এর একটি শাখা জন্ম লাভ করে হারিছার খেয়া থেকে প্রবাহিত হয়ে গরীবের বের চর নতুন বাজার হয়ে উত্তর কোদালপুর হাজীপাড়ায় এসে মালেকের খেয়াঘাটে শেষ হয়েছে। বর্তমানে এটি মৃত প্রায়।

তাছাড়া কোদালপুর ইউনিয়নের মন্তা দেয়ানের কান্দি থেকে (ঠান্ডা বাজার)মেঘনার কোল ঘেষে দুটি শাখা নদী জন্ম লাভ করেছে যার একটি বালুচর বাজার হয়ে কোদালপুর উকিল পাড়া দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে যেটি দিয়ে ডামুড্যা যাতায়াত করা যায়। সেখানে আবার ভেদরগঞ্জ গামী গরীবেরচর ও পূর্ব ডামুড্যার সীমান্তে ঘেষে প্রবাহিত আরেকটি নদীর সাথে মিলিত হয়ে ত্রিমোহনার সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে এই নদীটি দু”ধারে শুকিয়ে একে বারে র্শীণ আকার ধারণ করেছে। এর জন্য এলাকাবাসী বালুচর বাজার বেইলি ব্রিজ, শম্ভুকাটি ব্রিজ কে দায়ী করেছেন। শুষ্ক মৌসুমী এই নদী থেকে একদল বালু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করে থাকে। 

আবার মেঘনার বুক ফেড়ে আরেকটি নদী মাইজারা হয়ে গোসাইরহাটের পট্টি ব্রিজের কাছে আরো দুটি প্রবাহমান নদীর সাথে মিলিত হয়েছে যার একটি পশ্চিম দিকে ডামুড্যার দিকে চলে গেছে। অন্য একটি শাখা দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়েছে যেদি দিয়ে গোসাইরহাটের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যাতায়াত করে থাকে। 

অতীতে ডামুড্যা থেকে চাদপুরের উদ্দেশ্যে শাহজালাল, ভান্ডারী এক্সপ্রেসসহ অংসখ্য ট্রলারের মাধ্যমে মানুষজন যাতায়াত করত। আবার ডামুড্যা টু হাইমচর ভায়া মাঝের চর সিরাজ মাজির একটি ট্রলার সার্ভিস ছিল। যা দিয়ে গোসাইরহাট ও ডামুড্যার মানুষ চাঁদপুর ও হাইমচরের সাথে দৈনন্দিন যাতায়াত রক্ষা করত। আরেকটি শাখা নদী কোদালপুর হয়ে কুচাইপট্টির প্রান্ত ঘেঁষে গোসাইরহাট সদরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ডামুড্যার দিকে চলে গেছে এবং দক্ষিণ দিক থেকে আরেকটি শাখা নদী গোসাইরহাটের এসে মিলিত হয়ে ত্রিমোহনার সৃষ্টি করেছে। মোহনা পশ্চিম দিকে পটি দক্ষিণদিকে চলে গেছে।এই নদীটি দিয়ে ডামুড্যাগামী আওলাদ,যুবরাজ, স্বর্ণদ্বীপ লঞ্চ যাতায়াত করে থাকে কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদীর নাব্যতা হারিয়ে ফেললে লঞ্চ চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। এতে যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন।

কোদালপুর বাজারের উত্তরপশ্চিম পাশে ডামুড্যাগামী ট্রলার ঘাট থেকে কোদালপুর বাজারের সাথে নৌ যাতায়াত ও ফসলি জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য প্রায় ২৫ বছর আগে একটি খাল খনন করা হয়, সেই খালটিতে বর্ষা মৌসুমে কোন রকম পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে কাট হয়ে যায়। এছাড়াও গোসাইরহাটের অনাচে কানাচে অনেক খাল খনন করা হয়েছিল। সেই খালের অস্তিত্ব বর্তমানে লোপ পেয়েছে। এবং মেঘনার শাখা নদী থেকে আরো কতগুলো গাল প্রবাহিত ছিল যেগুলো এখন বিলীন হয়ে ফসলি জমি অথবা গ্রাম হয়ে একে বারে বিলীন হয়ে গেছে।

এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় মেঘনার দান বলে খ্যাত গোসাইরহাট উপজেলাটিতে পরিবেশের ব্যাপক ভারসাম্য নষ্ট হবে। ড্রেজিং না করলে নদীতে নৌ চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে পড়বে।


চিত্রঃ বালুচর বাজার এর পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী।

নদীগুলো শুকিয়ে যাওয়ায় ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও ক্রমেই নিচে নেমে যাবে। এর ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েবে ধান উৎপাদনের উর্বর ভূমি খ্যাত গোসাইরহাটের চরাঞ্চরলের কয়েকটি ইউনিয়ন। বর্তমান সময়কার জেলে পরিবারগুলো এক সময় বিরুপ পরিস্থিতির শিকার হবে। যার ফলে জীবিকার তাগিদে শহরাঞ্চলে গিয়ে রিকশা এবং বস্তিতে মানববেতর জীবন যাপন করবে। 

তাই উপরোক্ত বিষয়টির প্রতি সু-বিবেচনা করে গোসাইরহাটের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, উপজেলা প্রশাসনকে নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সদয় দৃর্ষ্টি আকষণ করছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Sample Notice of Share Transfer

Intimation of Intended Share Gift by Mr. DK Khan, Managing Director,  ST Securities Limited