বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭

চিঠি লেখার নিয়ম- বাংলা ২য় পত্র

সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ ভাবের আদান-প্রদানের জন্য চিঠি লিখে আসছে। চিঠির লেখার নতুন নতুন বৈচিত্র বা ফিচার যোগ হলেও বডি টেক্স আছে আগের মত। বর্তমানে ইলেকট্রিক চিঠির সাথে পাল্লা দিয়ে কাগজের চিঠি পত্র চলছে সমানতালে। তাছাড়া আমরা আমাদের প্রয়োজনের তাগিদে একে অন্যকে ঠিঠি লিখি। চিটি লিখে একজন আরেকজন কে ভালোলাগা মন্দ লাগা জানাই। বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরি। আদেশ উপদেশ ইত্যাদি প্রেরণ করি।আবার কোন কোন চিঠিতে আবেদন নিবেদন জানানো হয়। আমরা সাধারণত দুটি ক্ষেত্র হিসেবে চিঠি লিখে থাকি, যথা:




1। পারিবারিক প্রয়োজনে
2। ব্যবহারিক, বৈষয়িক বা আনুষঙ্গিক কাজে

চিঠির বিভিন্ন প্রকারভেদ থাকলেও মূলত তাকে সাত ভাগে ভাগ করা যায়। আবার প্রত্যেক ভাগ কে আলাদা আলাদা উদ্দেশ্যে করে ব্যবহার করা হয়। চিঠির উদ্দেশ্যেগত এবং ব্যবহারিক সাতটি ভাগ হলোঃ

1।ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য বা ব্যক্তিগত পত্র।
2। কোন কিছুর আবেদন জানানের জন্য বা আবেদনপত্র।
3। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য - বাণিজ্যিক পত্র।
4। শুভ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য- মানপত্র/অভিনন্দনপত্র।
5। এলাকার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে খবরের প্রকাশের জন্য- সসম্পাদকীয় পত্র।
6। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানের জন্য- আমন্ত্রণ/নিমন্ত্রণ পত্র।
7। ক্ষোভ/দ্বন্দ নিরসনের জন্য বা সমস্যা জানানোর জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার জন্য- স্মারকলিপি/অভিযোগপত্র।

চিঠি লিখার সময় অনেকগুলো বিষয় খেয়াল রাখতে হয়;
যেমন:
  • উদ্দেশ্য নির্বাচন করা।
  • বিষয়বস্তু নির্বাচন করা।
  • কাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখছেন তা ঠিক কররা।
উপরের বিষয়গুলো খেয়াল করে চিঠি লিখার জন্য কাগজ বা পেপার নেয়া হয়। পেপারের আবার বিভিন্ন সাইজ আছে, এই সাইজের মধ্যে সাধারণত-
(ক) লেটার সাইজ
(খ) এফোর(A4)সাইজ
(গ) লিগ্যাল সাইজ
ব্যবহার হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এফোর(A4)সাইজ পেপার বেশি প্রচলন আছে।

এখন আমরা চিঠি লেখার জন্য এফোর(A4)সাইজ পেপার নিব। এই কাগজ বা পেপারে গায়ে বা বডিতে আমাদের প্রথমত,
  • উপরের অংশে তারিখ লিখতে হবে। এটা বাম দিকে বা ডান দিকে যেকোন স্থানে লিখলে সমস্যা নেই। অনেকে আবার নিচের অংশে অর্থাৎ স্বাক্ষরের ঘরের কাছে লিখেন।
  • অফিসিয়াল কাজে বা দাপ্তরিক কাজে সাধারণত কোম্পানির নিজস্ব প্যাডে চিঠি লিখা হয়। সেক্ষত্রে প্যাড হ্যাডারের নিচে তারিখ ও সূত্রের স্থান নির্দিষ্ট থাকে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্যাডে উল্লেখিত নিয়ম অনুসরণ করা বাধ্যতা মূলক।
  • কাকে উদ্দেশ্য করে চিঠি লিখছেন তা নির্দিষ্ট করতে হবে। অর্থাৎ নাম, পদবী, প্রতিষ্ঠান এবং ঠিকানা উল্লেখ করা আবশ্যক, আবার কোথাও কোথাও শুধু পদবী উল্লেখ করলেও চলে। যেমন;
জনাব  এ কে এম. ---- উদ্দিন
যুগ্ম-পরিচালক (বন্দর)
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ -নৌ-পরিবহন কর্তৃৃপক্ষ,
নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দর, নারায়ণগঞ্জ।

বা

বরাবর
প্রধান শিক্ষক
কোদালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়
      কোদালপুর, গোসাইরহাট, শরীয়তপুর।

  • তারপর আপনাকে বিষয় নির্ধারণ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি কোন বিষয় কে ইঙ্গিত করে চিঠি লিখছেন তা সংক্ষেপে লিখতে হবে।

  • প্রাপক ছাড়াও উক্ত চিঠির মাধ্যমে কাউকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইলে তার নাম, পদবী এবং এজেন্সির নাম উল্লে্লেখপূর্বক দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে।

  • দাপ্তরিক চিঠির ক্ষেত্রে পূর্বের কোন চিঠি সূত্র হিসেবে উল্লেখ করতে চাইলে সূত্র্ উল্লেখ করতে হবে। একাধিক এসর্ম্পকিত চিঠি থাকলে তখন সিরিয়াল অনুসারে ক্রমিক নম্বর দিতে হবে।

  • সম্পর্কের ভিত্তিতে সম্বোধন করতে হয়। এক্ষেত্রে বন্ধু বান্ধব হলে, প্রিয়, প্রিয়ভাজন, প্রিয়নেষু, শুভকাঙ্খী অমুক (ব্যক্তির নাম) হয়। বয়স্ক হলে জনাব, জনাব এবং উর্দ্ধতন কর্মকর্তা হলে মহোদয় লিখতে হবে।

  • তারপর আপনার বক্তব্য তুলে ধরবেন। অর্থাৎ বিষয় বস্তুর বিস্তারিত উল্লেখ করবেন। তবে দাপ্তরিক চিঠির ক্ষেত্রে পূর্বের কোন চিঠির রেফারেন্স বা সূত্র থাকলে এবাবে শুরু করতে পারেন-
আপনার সদয় অবগতি এবং উপর্যুক্ত বিষয়ে সূত্রোক্ত পত্রে মাধ্যমে [সূত্র একাধিক হলে নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দিতে হবে, যেমন সূত্র-(1), বা সূত্র-(2)] জানানো যাচ্ছে যে…..।

সর্বশেষ সমপাপিকা বক্তব্য তুলে ধরতে হবে। অর্থাৎ আগামীতে চিঠি লিখার প্রত্যয় ব্যক্ত, ধারাবাহিক যোগাযোগ রক্ষা করার কথা বলা হয়। এবং দাপ্তরিক ক্ষেত্রে সহযোগিত, হস্তক্ষেপ, দিক নির্দেশনা চাওয়া হয়।

তারপর  চিঠি লেখকের স্বাক্ষর দিতে হয়, ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে ‘ইতি’, সমাপিকা, শেষ করছি ইত্যাদি লিখে স্বাক্ষর দেয়া হয়। কিন্ত অফিসিয়াল কিংবা দাপ্তরিক ক্ষেত্রে নাম, স্বাক্ষর, পদবী, কোম্পানির নাম এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যোগাযোগ নাম্বার দেয়া হয়। অধুনা মোবাইল, ই-মেল, টেলিফোন নাম্বার অনেকে দিয়ে দেন।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে,
Ø  চিঠির ভাষা হবে সু-ষ্পষ্ট।
Ø  বর্ণনা সাবালীল।  
Ø  স্তাবক সুন্দর এবং গোছানো।
Ø  হাতে লিখলে যথা সম্ভব লেখা সুন্দর করে লিখতে হবে। কম্পিউটারে কম্পোজ করলে ‍সুতুনি এমজি ফন্ট বা নরমাল ফন্ট ব্যবহার করতে হবে।

দ্বিতীয় পর্যায়ঃ
এ পর্যায়ে এসে আপনাকে ঠিঠি খামে ভরতে হবে। খামের বাম অংশে আপনার নাম ও পূর্ণ ঠিকানা লিখতে হবে। কারণ, কোন কারণে চিঠি প্রাপকের কাছে না পৌঁছালে যাতে প্রেরকের (আপনার) কাছে সহজে ফেরত আসতে পারে। বাম পাশে প্রাপকের নামের আগে জনাব, জনাবা শ্রী, শ্রীমান ইত্যাদি লিখতে হবে, এবং প্রাপকের পূর্ণ নাম ও ঠিকানা লেখা আবশ্যক। যাতে করে ডাক পিয়ন প্রাপককে সহজে খুঁজে পান। চাইলে যোগাযোগ নাম্বারও দিতে পারেন। আবেদন পত্রের খামের উপর স্মারক নং এবং জেলা ও পদের নাম লিখা বাঞ্চণীয়। খাম হাতে হাতে কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রাপকের নিকট পৌঁছালে ডাক টিকিট লাগানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু পোষ্ট অফিসের মাধ্যমে পাঠালে অবশ্যই সিল ও ডাক টিকিট লাগাতে হবে।

ব্যক্তিগত চিঠির ক্ষেত্রে অনেকের তেমন অসুবিধা না হলেও দাপ্তরিক চিঠির ক্ষেত্রে অনেকে সমস্যায় ভুগেন। সেজন্য এখানে নমুনা চিঠি উল্লেখ করা হলো:

নমুনা-1:
সূত্রঃ এবিসি/--৮/২০০১৭                             তারিখঃ ৩০ শে এপ্রিল ২০১৭

বরাবর
চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (ইওডঞঅ)
ইওডঞঅ ভবন, ১৪১-১৪৩ মতিঝিল বা/এ
ঢাকা-১০০০।

দৃষ্টি আকর্ষণঃ মোঃ ------ ইসলাম, অতিরিক্ত পরিচালক, পোর্ট ও ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট, বিআইডব্লিউটিএ।

সূত্রঃ (ক) টিএ শাখা, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় পত্র নং ১৮.০.-------; তারিখঃ ২৪ অক্টোবর ২০১১। 
(খ) --- কোম্পানীর পত্র নং একেকে/৩----/২০১৬; তারিখঃ ---- জুন ২০১৬।
    
বিষয়ঃ নারায়ণগঞ্জ নদীর বন্দরের ঘোড়াশাল নদী বন্দরের সীমানাধীন নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলার কাজৈর    ও কাজিরচর মৌজায় শীতালক্ষ্যা নদীর তীরে ------------------- প্রসঙ্গে।

মহোদয়,
যথাবিহীত সম্মান প্রদর্শণপূর্বক জানানো যাচ্ছে যে, আমরা আপনাদের সূত্র (ক) নং পত্র দ্বারা ----, নরসিংদী, শীতালক্ষ্যা নদীর তীরে শুধুমাত্র ------- জেটি নির্মাণের নিমিত্তে ---- একর তীরভূমি ব্যবহারের জন্য অনুমতি প্রাপ্ত হই। গত ---/---/২০১৫ হতে --/--/২০১৭ইং পর্যন্ত -- বছর সময়ে আমরা এই অনুমতি পত্রের বিপরীতে দাবীকৃত ফী পরিশোধ করে আসছি।

আপনাদের সদয় বিবেচনার জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আলোচ্য তীরভূমিতে জেটিসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হতে আরো যথেষ্ট সময় লাগবে বিধায় প্রজেক্টটি এখানো চালু হয়নি বা আয়ের ধারায় আসে নাই। এতএব বর্তমান অবস্থায় প্রদত্ত অনুমতি এর বিপরীতে ফী পরিশোধের দায় অদ্যাবধি প্রস্তাবিত প্রজেক্ট এর উপরে বর্তায় না। এপ্রেক্ষিতে আমরা ভবিষ্যতে উক্ত তীরভূমিতে নির্মাণ পরিকল্পনাধীন জেটিটির প্রকৃত অপারেশন কাজ শুরুর সময় হতে তীরভূমি ব্যবহারে ফী যথারীতি পরিশোধ করতে বাধ্য থাকব। উল্লেখ্য যে, যেহেতু আমাদের মালামাল উঠানো নামানোর কার্যক্রম শুরু হয়নি সেহেতু আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপনার কর্তৃপক্ষ সদয় হয়ে মালামাল উঠানো নামানোর শুল্ক (---)  স্মারক নং- ১৮৭৩২.০৪৫.------(----/২৪---; তারিখঃ --/---/২০-- ইং দ্বারা অব্যাহতি দেয়া হয়েছে (ফটোকপি সংযুক্ত)। আরো উল্লেখ্য যে, অদ্যাবধি আমরা আমাদের প্রজেক্টের কার্যক্রম শুরু করি নাই এবং আপনাদের লাইসেন্স দেয়া ২.৩৮ একর ফোরশোর (তীরভূমি) ব্যবহার করছি না এবং কোন ধরণের জেটি নির্মাণও করা হয় নাই। সুতরাং ইতোপূর্বে আমাদের কে যেরূপ মালামালের শুল্ক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে তদ্ররুপ সকল ধরণের অবকাঠামো নির্মাণেও অপারেশন শুরুর পূর্ব পর্যন্ত ফোরশোর ব্যবহার ও জেটির শুল্ক অব্যাহতি দেয়ার জন্য আবেদন করছি। এমতাবস্থায় আপনাদের প্রদত্ত --- একর তীরভূমি ব্যবহারের জন্য অনুমতির বিপরীতে দাবীকৃত ফী জেটি নির্মাণ ও অপারেশন শুরুর সময় পর্যন্ত পরিগণ্য না করার জন্য আমরা সবিনয় আবেদন করছি। এবং ইতিমধ্যে পরিশোধিত লাইসেন্স ফি বাবদ -----/-  টাকা আমাদের অপারেশন কার্যক্রম শুরুর সময় হতে কার্যক্রম লাইসেন্স ফির সাথে সমন্বয় করার জন্য অনুরোধ করছি।

অতএব উপরোক্ত বক্তব্যের আলোকে একেকেসিটি এর অনুকূলে আপনাদের প্রদত্ত ফোরশোর এবং স্থাপনা ব্যবহারের অনুমতিটি --/০১/২০-- হতে ৩১/--/২০-- সময়কালের জন্য কোন প্রকার ফি, ভ্যাট ও আয়কর পরিশোধ ব্যতিরেকেই অন্তবর্তকালীন নবায়নের জন্য আপনাকে সন্নির্বন্ধ অনুরোধ করা হল। পরবর্তীতে চূড়ান্ত অনুমতিপ্রাপ্ত হয়ে আলোচ্য তীরভূমিতে জেটি ও পোর্ট অপারেশন কার্যক্রম শুরুর সময় থেকে আমরা সকল যথাযথ ও যৌক্তিক দায় নিয়মিতভাবে পরিশোধ করব এই মর্মে অঙ্গীকার করছি। বিষয়টি আপনার সদয় বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হল।

নিবদেক
----- কোম্পানী লিমিটেড এর পক্ষে,


(আবু ------)
পরিচালক, ---- কোম্পানী লিমিটেড।
ঢাকা, বাংলাদেশ।

অনুলিপিঃ 
(১) অতিরিক্ত পরিচালক, পোর্ট ও ট্রাফিক ডিপার্টমেন্ট,
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন  কর্তৃপক্ষ, ঢাকা।
(২) যুগ্ম পরিচালক, বন্দর, নারায়ণগঞ্জ এর দপ্তর,বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ, নারায়ণগঞ্জ।


কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্যের ঘরে লিখুন।

৪টি মন্তব্য:

Recent Post

Proposal for Sale of Commercial Lands- Sotterchaya