শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৭

পরিবার কাকে বলে এবং তার প্রকারভেদ

মানুষ সামাজিক জীব। তাই মানুষ কে সমাজে বসবাস করতে হলে পারিবারিক পরিচয় বহন করতে হয়। মানুষের জীবনে পারিবারিক শিক্ষা, শিষ্টাচার ব্যাপক ভূমিকা রাখে। মানুষ অলিখিতভাবে সামাজিক সন্মান, ক্ষমতা, এবং আঞ্চলিক কর্তৃত্ব অনেকটা পরিবার থেকে পেয়ে থাকে। পরিবারের বিভিন্ন প্রকারভেদ আছে। নিন্মে পরিবার এবং তার প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।


পরিবার: পরিবার হলো একটি প্রাচীনতম সংগঠন। পিতামাতা যৌন সম্পর্কের উপর ভিত্তি করে এই সংগঠন গঠন করে, এবং সন্তান সন্তানাদি উৎপাদন ও লালন পালনের মাধ্যমে তার অস্তিত্ব ধরে রাখে।

সমাজবিজ্ঞানী ম্যাকাইভার মতে,
যৌন সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে সন্তান-সন্ততির জন্মদান এবং লালন-পালনের উদ্দেশ্যে যে সংগঠন গড়ে ওঠে তাকে পরিবার বলে।

encyclopedia americana গ্রন্থে বলা হয়েছে, পরিবার পথটি সাধারণত কিছু ব্যক্তির সমষ্টিকে বোঝায়, যারা জন্ম এবং বিবাহসূত্রে একইক আবাসগৃহে বসবাস করে। সাধারণত দেখা যায়, পরিবার পথটি পূর্বপুরুষের ধারণা পর্যন্ত গ্রহণ করে।

পরিবারের প্রকারভেদ:  সামাজিক ও নৃবিজ্ঞানীরা যেসব উপাদানের ভিত্তিতে পরিবারকে শ্রেণীবদ্ধ করেছেন সেগুলো হলো:

১। বিবাহ ভিত্তিক পরিবার: বিবাহের ধরণ অনুযায়ী পরিবার তিন প্রকার। যথা:

(ক) একক বিবাহ ভিত্তিক পরিবার
(খ) বহুস্ত্রী বিবাহ ভিত্তিক পরিবার।
(গ) বহু স্বামী বিবাহ ভিত্তিক পরিবার।

 (ক) একক বিবাহ ভিত্তিক পরিবার: একক বিবাহ ভিত্তিক পরিবার এমন এক ধরণের পরিবার, যেখানে একজন পুরুষ একজন স্ত্রীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এবং তাদের সংসার কিংবা দাপত্য জীবনে তৃতীয় কোন নারী কিংবা পুরুষ অনুপস্হিত থাকে।

(খ)  বহু স্ত্রী বিবাহভিত্তিক পরিবার: যে পরিবারে একজন পুরুষ একাধিক নারী কে ঘর সংসার করার জন্য বিবাহ করে তাকে বহু বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে।

আমাদের দেশে অঞ্চলভেদে বহুবিবাহ ভিত্তিক পরিবার হাতেগুনা কয়েকটি পাওয়া যেতে পারে। বহু বিবাহ ভিত্তিক পরিবার সাধারণত আদিবাসী, উপজাতিদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। আফ্রিকা মহাদেশে বিভিন্ন উপজাতিদের মধ্যে এখনো বেশি মাত্রায় বহু বিবাহ প্রচলন আছে। মধ্যপ্রাচ্যে ধনী শেখদের বহু বিবাহ করা বিলাসিতা মনে করা হয়।
ইসলাম ধর্মে শর্ত সাপেক্ষে বহু বিবাহ করা যায়েজ। রাষ্ট্রীয় আইনেও বহু বিবাহ স্বীকৃত, তবে আইনি কতগুলো শর্ত পূরণ করতে হয়।


(গ) বহু স্বামী বিবাহ ভিত্তিক পরিবার : যে পরিবারে একজন নারী একাধিক পুরুষকে বিবাহ করার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে এবং একই সাথে সকলের সাথে বসবাস করতে পারে কিংবা পর্যায়ক্রমে তাদের সাথে আলাদা আলাদা থাকতে পারে তাকে বহুস্বামী বিবাহভিত্তিক পরিবার বলে।

এই ব্যবস্হা কিছু উপজাতি বা আদিবাসীদের মধ্যে প্রচলিত আছে। আমাদের দেশে, ধর্মে এবং সমাজে বহু স্বামী  বিবাহভিত্তিক পরিবার গঠন করা নিন্দনীয়।

২। বংশানুক্রম এর ভিত্তিতে পরিবার: বংশানুক্রমে ভিত্তিতে পরিবারকে চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(ক) পিতা দিক থেকে বা পিতৃসূত্রীয় পরিবার।
(খ) মায়ের দিক থেকে বা মাতৃসসূত্রীয় পরিবার।
(গ) উভয়ের দিক থেকে বা উভয় সূত্রীয় পরিবার।
(ঘ) দ্বিমাত্রিক পরিবার।

(ক) পিতা দিক থেকে বা পিতৃসূত্রীয় পরিবার: পিতমসূত্রীয় পরিবারে পিতার দিক হতে ক্রমধারা অনুসারে  বংশানুক্রমের ধারা ঠিক থাকে। এটি একটি বহুল প্রচলিত ব্যবস্হা। যা সমাজে বেশি প্রভাব বিস্তার করছে। এ ধরনের পরিবারের সদস্যরা পিতার পরিচয়ে বড় হন। যেখানে মাতৃ পরিচয় থাকে উহ্য। অধুনা উন্নত বিশ্বসহ আমাদের দেশে মাতৃসূত্রীয় কিংবা মাতৃ পরিচয় আইনগত স্বীকৃতি পেয়েছে।

(খ) মাত্র সূত্রীয় পরিবার:  মাত্র সূত্রীয় পরিবারে মাতা পরিবারের একক কতৃত্ব লাভ করেন। যেখানে পরিবারের অন্য সদস্যরা মায়ের পরিচয়ে বড় হন। মাতার পরিচয় কে বংশানুক্রমিক মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  এধরনের পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তিগত অধিকার তার মায়ের সাথে সম্পর্কের উপর নির্ভর করে।

(গ) উভয় সূত্রীয় পরিবার: যখন একটি  বংশের ধারা মাতার দিক হতে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু পিতা অন্য বংশানুক্রম বিবেচিত হয়ে তার বংশানুক্রম ধারা ঠিক রাখেন তাকে উভসূত্রীয় পরিবার বলে। 

(ঘ) দ্বিমাত্রিক পরিবার:  যদি একজন ব্যক্তিকে মাতাপিতা উভয়ের বংশানুক্রমে ভিত্তিতে বিবেচনা করা হয় তাকে দ্বিমাত্রিক পরিবার বলে।

(৩) বাসস্থান ভিত্তিতে পরিবার:  বাসস্থানের ভিত্তিতে পরিবারকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায় যথা :
(ক) পিতৃস্থানীয় পরিবার: যে পরিবার ব্যবস্হায় স্ত্রী তার স্বামীর বাড়িতে বসবাস করে তাকে পিতৃস্হানীয় পরিবার বলে।

(খ) মাতৃস্হানীয় পরিবার: যে পরিবার ব্যবস্হায় স্বামী তার স্ত্রীর গৃহে বসবাস করে তাকে মাতৃস্হানীয় পরিবার বলে। আঞ্চলিক ভাষায় তাকে "ঘর জামাই" বলা হয়।

(গ) দ্বৈত আবাসস্থল পরিবার: যখন স্বামী তার নিজ স্ত্রীর পিতামাতার বাড়ির নিকট কিংবা স্ত্রী তার নিজ স্বামীর পিতামাতার বাড়ির নিকট বসবাস করে তখন তাকে দ্বৈত আবাসস্হান পরিবার বলে।

(ঘ) এই ব্যবস্হায় স্বামী তার নিজ স্ত্রীর ভাইয়ের বাড়ির নিকট বসবাস করে।

(ঙ) নয়াবাস পরিবার: এটা এমন এক ধরণের পরিবার যেখানে নব দম্পতী তাদের জ্ঞাতিকুল থেকে দূরে বসবাস করে।

৪। কর্তৃত্বের ভিত্তিতে পরিবার: কর্তৃত্বে ভিত্তিতে পরিবারকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(ক) পিতৃতান্ত্রিক পরিবার: যে পরিবারে পিতা ক্ষমতা চর্চায় এবং সিদ্বান্ত গ্রহনে প্রধান ভূমিকা পালন করে তাকে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে।
 (খ) মাত্র তান্ত্রিক পরিবার: যে পরিবারে মাতা ক্ষমতা চর্চায় এবং সিদ্বান্ত গ্রহনে প্রধান ভূমিকা পালন করে তাকে মাতৃতান্ত্রিক পরিবার বলে।

৫। আয়তনের (পরিসর) দিক থেকে:  পরিবারের ব্যাপ্তি অনুযায়ী তাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
(ক) একক পরিবার: যেখানে শুধু স্বামী-স্ত্রীর ও সন্তান থাকে কিংবা শুধু স্বামী-স্ত্রী থাকে।

(খ) যৌথ পরিবার বা একান্নবর্তী পরিবার: যে পরিবারের স্বামী স্ত্রী, সন্তান, চাচা-চাচী দাদা-দাদী আরো অনেক সম্পর্কের আত্মীয় একত্রবাস করে থাকে যৌথ পরিবার বলে।

(গ) বিস্তৃত পরিবার:  বিস্তৃত পরিবার অনেকটা যৌথ পরিবারের মতো যেখানে পিতা,মাতা, জ্যেষ্ঠতাত, খুলতাত ভাই, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা অবিবাহিত একত্রে বাস করে। 
                         --------------

যেখান থেকে তথ্য পেয়ে উপকৃত হয়েছি। 
১। ড. আহসান হাবিব, নৃবিজ্ঞান পরিচিত, গ্রন্থকুটির।
২। নারী ও পরিবার কল্যান, মো: শহিদুল ইসলাম, জ্ঞান প্রকাশন।
৩। বন্ধু নেট (অনলাইন)

## ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।

৩টি মন্তব্য:

Recent Post

Sample Notice of Share Transfer

Intimation of Intended Share Gift by Mr. DK Khan, Managing Director,  ST Securities Limited