বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭

জেনে নিন প্যারোল ব্যবস্থার নানা দিক


‘পাপীকে নয় পাপকে ঘিনা কর’ এই মূল মন্ত্রে উজ্জবীত হয়ে প্যারোল কার্যক্রম পরিচালিত হয়।উনিশ শতকের আগে প্যারোলের সাথে কেউ পরিচিত ছিলনা। মধ্যযুগে মূলত অপরাধীরা রাজ-রাণীর ইচ্ছা বা দয়ামায়ায় উপর ভিত্তি কের যন্ত্রণার কারাগার থেকে মুক্তি পেতেন। উনিশ শতকের পর প্যারোল ব্যবস্থা আইনগত ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।


প্যারোল প্রর্বতনে স্কটল্যান্ডের আলেকজান্ডার ম্যাকোনিওচি এর ভূমিকা অপরিসীম। তিনি
একাধারে ভূগোলবিধ ও রয়্যাল নেভির অধিনায়নক ছিলেন। তিনি 1840 সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের দন্ডবিধির সুপারিটেনডেন্ড হিসেবে নিয়োগ পান। তার দায়িত্ব পরে অস্ট্রোলিয়ার নরফোক দ্বীপে। তিনি নরফোক দ্বীপে অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের সমাজে প্রত্যাবর্তনের জন্য তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেন।
প্রথম দুটি ভাগে- যাদের মধ্যে ভালো আচরণের প্রবণতা, পরিশ্রম করার মানুষিকতা এবং যারা অধ্যায়নে মনোযোগী তাদের কে রাখেন। তৃতীয় ভাগে- যারা কারাগারের বাইরে নিয়ম কানুন মেনে চলবে তাদের কে রাখেন। তবে তিনি শর্ত রাখেন নিয়মের বাইরে গেলে পুনরায় কারাগারে প্রবেশ করতে হবে। ম্যাকোনিওচি তার ছুটির ব্যবস্থায় ‘টিকিট’ (ছাড়পত্র) প্রবর্তন করেছিলেন। যা বিশ্বে প্যারোলের নতুন দিগন্ত উন্মেচন করে।

প্যারোলের ইতিহাসঃ প্যারোল ব্যবস্থায় সংশোধনমূলক কার্যক্রম পর্বের মতোই অপরাধীদের মুক্তি দিয়ে সংশোধনের সুযোগ করে দেয়া হয়, যাতে তারা সমাজে পুর্ণবাসিত হতে পারে। তবে ‘সংশোধনমূলক ব্যবস্থায়’ অপরাধী সাজাভোগ না করে মুক্তি পান কিন্তু প্যারোল ব্যবস্থায় অপরাধী কিছু দিন সাজাভোগের পর মুক্তি পান। সপ্তদশ শতাব্দীতে আমেরিকান উপনিবেশ সমূহে শ্রমিকদের প্রয়োজন দেখা দিলে ইংল্যান্ডের রাজা আদালতের সুপারিশের ভিত্তিতে কুখ্যাত অপরাধে অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েক জনের  জন্য ধার্য করা শাস্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করে প্যারোলে মুক্তি দেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ উপনিবেশগুলোর কনট্রাক্টরদের অধীনে কাজের জন্য নিয়োজিত হতেন এবং তাদের অধীনে কাজ করতেন। আবার কতক পালিয়ে যেতেন কিংবা পুনরায় ইংল্যান্ডে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা করতেন। পরবর্তীতে এরূপ নির্বাচিত অপরাধীদের চলাচল ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এসব শর্ত ভঙ্গ করলে তাদেরকে পুনরায় কারাগারে অন্তরীণ করা হতো। আর যারা আইন পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল তাদের কে শর্তাধীনে মুক্তি দেয়া হয়। বর্তমানে প্যারোল পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের জন্য সরকারি আইন রয়েছে। অষ্টাদশ ঊনবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন দেশে প্যারোল ব্যবস্থা একযোগে গৃহীত হয়, তবে 1921 সালে আমেরিকার চল্লিশটি রাজ্যে প্যারোল আইন কার্যকর করা হয়।

প্যারোল কিঃ
প্যারোল অপরাধ সংশোধনের এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে দণ্ডাদেশ প্রাপ্ত ব্যক্তি কিছুদিন সাজা ভোগের পর কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে প্যারোল অফিসারের তত্ত্বাবধানে সাময়িকভাবে মুক্তি প্রাপ্ত হন।

সমাজকর্মের অভিধানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী: প্যারোল হলো অপরাধীকে কারাগার হতে মুক্তি দানের এমন একটি আইনগত ব্যবস্থা যাতে দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে দন্ডের মেয়াদ পূর্ণ হবার পূর্বেই, সদাচরণ পুর্ণবাসিত হওয়ার প্রতিশ্রুতি এবং ধারাবাহিক শৃঙ্খলার বজায় রাখা এবং প্যারোল অফিসারের তত্বাবধানের থাকার শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ায় নাম

অধ্যাপক গ্রে ডেসলা বলেন; প্যারোল অপরাধ সংশোধনে এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে অপরাধী কিছুদিন শাস্তি ভোগের পর একজন প্যারোল কর্মকর্তার অধীনে  শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি প্রদান করা হয়। যাতে প্যারোল অফিসার অপরাধী সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন।

ডব্লিউ এ ফ্রিডল্যান্ডার বলেন, শাস্তির মেয়াদ শেষ হবার পূর্বেই অপরাধীকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া নামই প্যারোল।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই প্যারোল ব্যবস্থা রয়েছে, সপ্তদশ শতকে বিচ্ছিন্নভাবে আম্রিকায় ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ এর ভিত্তিভূমি রচনা করে। এরপর 1970 সালে অস্ট্রেলিয়া, 1853 সালে আয়ারল্যান্ডে, 1817 আমেরিকার নিউইয়র্কে, এবং 1921 সালে আমেরিকার চালু হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে পড়ার ব্যবস্থা চালু রয়েছে।

প্যারোল অফিসারঃ
প্যারোল অফিসার সাধারণত ম্যাজিস্টেট কিংবা বিচারকগণ হয়ে থাকেন। তবে ক্ষেত্র বিশেষ সমাজকর্ম অফিসারগণও নিয়োজিত হতে পারেন।
একজন প্যারোল অফিসার হতে হয় সৎ, যোগ্য, ন্যায়পরায়ণ, সমস্যার সঠিক সমাধানকারী এবং তত্ত্বাবধানে যথেষ্ট পারঙ্গম।

প্যারোলের শর্তঃ
1। ভবিষ্যৎ অনুরুপ অপরাধ না করার অঙ্গীকার।
2 কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বাসার ঠিকানা পরিবর্তন না করা
3 নির্দিষ্ট সময়ে প্যারোল অফিসারের সাথে সাক্ষাৎ করা।
4।প্যারোল অফিসারের উপদেশ মতো চলা।
5 সকলের সাথে সদাচরণ করা।
6শর্ত ভঙ্গ করলে পুনরা জেল হাজতে থাকার অঙ্গীকার করা।
7। যে কোন সময়ে পেরোলে থাকা ব্যক্তির বাসা তল্লাশি অনুমতি দান।
9বিশৃঙ্খলা মূলক কোন কাজ না করা।
9। প্রয়োজন হলে স্বেচ্ছামূলক কাজে অংশগ্রহণ করা।
10। সমাজ ও রাষ্ট্র বিরোধী কোন কাজে জড়িত না হওয়া।
11। অস্ত্র, মাদক ও চোরা চালানে জড়িত না হওয়া।
12। সমাজে ও রাষ্ট্রে প্রচলিত আইন মেনে চলা।
13। স্থায়ী আবাসন পরিবর্তণ করলে প্যারোল  অফিসার কে জানানো।

প্যারোল শর্ত আরোপের সময় প্যারোল বোর্ড নানা দিক খতিয়ে দেখেন। তারা চাইলে আইনের আওতায় নতুন নতুন শর্ত জুড়ে দিতে পারেন। 


প্যারোলে মুক্তি পেতে হলে অপরাধীকে আবেদন করতে হয়। আবেদন না করা হলে প্যারোলের জন্য বিবেচিত হননা। অপরাধী যখন প্যারোলোর জন্য আবেদন করেন তখন প্যারোল বোর্ড আবেদনটি বিবেচনা করে দেখেন প্যারোল পাওয়ার যোগ্য কিনা। যদি যোগ্য হন তাহলে প্যারোলে মুক্তির ব্যবস্থা করেন এবং একজন প্যারোল অফিসার কে দেখাভাল করার জন্য দায়িত্ব দেন। প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার আগে অপরাধীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, মানুষিক পরীক্ষা নেয়া হয় এবং লিখিত চুক্তিপত্র সই করা হয়।

প্যারোলো থাকা ব্যক্তিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর পুনরায় জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।
আমাদের আমাদের দেশে সাধারণত উচ্চ শ্রেণির লোকেরা এই সুবিধা বেশি পেয়ে থাকেন। রাষ্ট্রপতি এরশাদ দীর্ঘদিন প্যারোলে মুক্তি লাভ করেছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, আমলা খ্যাতিমান ব্যক্তির মূলত  প্যারোলে মুক্তি পান। বর্তমানে বি.এন.পির ভাইস চেয়ারম্যন তারেক রহমান প্যারোলে আছেন।


শেষ কথাঃ প্যারোল ব্যবস্থা অপরাধীকে সমাজে পুর্ণবাসিত করতে সাহায্য করে। আইনি আশ্রয় গ্রহণে  ভুমিকা রাখে। সঠিকভাবে তত্ত্বাবধান করতে পারলে অপরাধী ভালো মানুষে পরিণত হয়।

*প্যারাল
*প্যারোল অফিসার
*প্যারোলের ইতিহাস
*প্যারোলের শর্ত
* প্যারোলে যারা অবদান রেখেছেন




আর্টিকেল লিখতে যেখান থেকে সহযোগিতা নিয়েছি: এখানে দেখুন 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Proposal for Sale of Commercial Lands- Sotterchaya