“সামাজিক কাজ হল একটি অনুশীলন-ভিত্তিক পেশা এবং একটি একাডেমিক শৃঙ্খলা যা সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন, সামাজিক সংহতি এবং মানুষের ক্ষমতায়ন ও মুক্তিকে উৎসাহিত করে। সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতি, মানবাধিকার, সম্মিলিত দায়িত্ব এবং বৈচিত্র্যের প্রতি শ্রদ্ধা সামাজিক কাজের কেন্দ্রবিন্দু। সমাজকর্ম, সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক এবং আদিবাসী জ্ঞানের তত্ত্ব দ্বারা আবদ্ধ, সামাজিক কাজ মানুষের এবং কাঠামোকে জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবং সুস্থতা বাড়াতে নিযুক্ত করে। উপরের সংজ্ঞাটি জাতীয় এবং/অথবা আঞ্চলিক স্তরে পরিবর্ধিত হতে পারে।"- গ্লোবাল ডেফিনেশন
সামাজিক
পরিষেবা প্রদানের সাথে এবং বিশেষত অর্থনৈতিক, শারীরিক, মানসিক বা সামাজিকভাবে সুবিধাবঞ্চিতদের তদন্ত, চিকিত্সা এবং বস্তুগত সহায়তার সাথে দৃঢ়ভাবে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশাগত কার্যক্রম বা পদ্ধতি। - মারিয়াম
সাধারণ অর্থে- সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী পেশা। সামাজিক বিজ্ঞানের একটি শাখাবিশেষ; যেখানে সামাজিক ও ব্যক্তি মানসিক পরিবর্তন বা সমাজকর্ম ও মানব সম্পর্কের উন্নয়ন বিষয়াবলি নিয়ে আলোকপাত করা হয়।
আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাসোসযি়শেন অফ সোশ্যাল ওযর়্ার্কাস (এনএসডব্লিউ) প্রকাশিত সমাজকর্ম অভিধানের (১৯৯৫) সংজ্ঞানুযায়ী, “সমাজকর্ম হলো ব্যক্তি, দল ও সমষ্টিকে সাহায্য করার এক পেশাগত কর্মকা-, যা তাদের সামাজিক ভূমিকা পালন ক্ষমতাকে পুনরুদ্ধার ও শিল্পবিপ্লবোত্তর আধুনিক শিল্পসমাজের জটিল সমস্যার বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধানের প্রয়াসে সমাজকর্ম ধারণার উদ্ভব ও বিকাশ ঘটে।” বর্তমানে ঘঅঝড কর্তৃক প্রদত্ত এই সংজ্ঞাটি বহুল প্রচলিত।
ওয়াল্টার এ. ফ্রিডল্যান্ডার তাঁর ইনট্রোডাকশন টু সোশ্যাল ওয়েফেয়ার গ্রন্থে বলেন, “সমাজকর্ম হলো মানবীয় সম্পর্ক বিষয়ক বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও দক্ষতাভিত্তিক এমন এক পেশাদার সেবাকর্ম, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক সন্তুষ্টি এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য একক বা দলীয়ভাবে ব্যক্তিকে সহায়তা করে।”
আরমান্ডো টি. মোরেলস এবং ব্রাডফোর্ড ডব্লিউ শেফর (১৯৮৬ : ১৮) তাঁদের “সোশ্যাল ওয়ার্ক: এ প্রোফেশন অব ম্যানি ফেসেস) “গ্রন্থে বলেন, “সমাজকর্ম ক্রমবর্ধমান সমাজের জটিলরূপ ধারনকারী সমস্যা সমাধানের জন্য সৃষ্ট একটি ব্যবস্থা যে সমাজের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানে প্রচলিত আন্তক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যকরভাবে তাদের চাহিদা পূরণকে জটিল করে তোলে।”
সমাজকর্ম বিশ্বকোষ এর ব্যাখ্যানুযায়ী, “সমাজকর্ম হলো এমন একটি সুসংগঠিত প্রচেষ্টা, যা ব্যক্তি ও পরিবারকে সমষ্টির সাথে সামঞ্জস্যবিধানে সহায়তা করে এবং একইভাবে সমষ্টিকেও ব্যক্তি ও পরিবারের প্রয়োজন পূরণে উপযোগী করে তোলে।”
ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব সোশ্যাল ওয়ার্কাস- আইএফএসডব্লিউ(২০১৪) এর সংজ্ঞানুযায়ী, সমাজকর্ম হলো অনুশীলনভিত্তিক একটি পেশা ও জ্ঞানের একটি বিশেষ শাখা, যা সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন, সামাজিক সংহতি এবং জনগণের সক্ষমতা ও স্বাধীনতার উন্নয়ন সাধিত করে। সামাজিক ন্যায়-বিচার, মানবাধিকার, সামষ্টিক দায়িত্ববোধ এবং বৈচিত্র্যময়তার প্রতি সম্মানবোধের নীতিমালা সমাজকর্মের মূল কেন্দ্রবিন্দু।”
“Social work is a practice-based profession and an academic discipline that promotes social change and development, social cohesion, and the empowerment and liberation of people. Principles of social justice, human rights, collective responsibility and respect for diversities are central to social work.”
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, সমাজকর্মের সংজ্ঞা সমাজকর্ম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ও কৌশলনির্ভর একটি পেশাগত কর্মকা- ও প্রক্রিয়া, যা সামাজিক কল্যাণ আনয়নে প্রয়াস চালায়। সমাজকর্ম মূলত একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান যা সাহায্যকারী ও সক্ষমকারী মানবহিতৈষী পেশাগত সেবাকর্ম হিসেবে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে বস্তুগত ও অবস্তুগত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের যাথাযথ সামাজিক ভূমিকা পালনে সক্ষম করে তোলে।
বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও সমাজকল্যাণ প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত সংজ্ঞার আলোকে বলা যায়, সমাজকর্ম হচ্ছে একটি পেশাগত প্রক্রিয়া, যা মানুষের ব্যক্তিগত, দলীয় ও সমষ্টিগত ক্ষেত্রে পরিকল্পিত পরিবর্তন আনয়ন, মানবীয় শক্তি-সামর্থ্য বাড়ানো ও পুনরুদ্ধার করা এবং এক্ষেত্রে অনুকূল সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলে সাহায্যার্থীর ক্ষমতায়ন ও সক্ষমতা লাভে সহায়তা করে। অন্যভাবে বলা যায় যে, সমাজকর্ম একটি সাহায্যকারী প্রক্রিয়া ও পেশা, যা কতগুলো পদ্ধতির মাধ্যমে মানুষের সমস্যার টেকসই সমাধান করে এবং ব্যক্তিগত, দলীয় এবং সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে সক্ষম করে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট থাকে।
****
এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন