রবিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২২

পেশাদারিত্বে প্রতিবন্ধকতা ও কর্মক্ষেত্রে সফলতা পাওয়ার উপায়- Sotterchaya

ব্যক্তিগত কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পেশাদারিত্বে নিজের প্রায়োগিক ও তাত্ত্বিক জ্ঞান বৃদ্ধি সাংগঠনিক দক্ষতা অর্জণ, আত্মনির্ভরশীল পরিচালকে রুপান্তর এবং নিজ পদ মর্যদা ও সুযোগ সুবিদার গ্রাফ উচ্চমুখী করাকে কর্মক্ষেত্রে সফলতা বলে।

কর্মক্ষেত্রে সফলতা পাওয়ার উপায়ঃ নিন্মে  কর্মক্ষেত্রে সফলতা পাওয়ার উপায় সমূহ আলোচনা করা হলোঃ

প্রশিক্ষণ ও প্রায়োগিক দক্ষতাঃ কর্মক্ষেত্রে সফলতা পেতে হলে অভিজ্ঞতার পাশাপাশি পোষ্টের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ের উপর কোন স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান হতে প্রশিক্ষণ নিতে হবে। প্রশিক্ষণ নিলে আপনার কর্মদক্ষতা বাড়বে। এই কর্মদক্ষতাকে আপনার পেশাগত জীবনে প্রয়োগ করতে হবে। ফলে বছর শেষে কর্মী মূল্যায়ণ শীটে সবার উপরে আপনার নাম থাকবে।


যেকোন একটি বিষয়ে প্রাধান্য দেয়াঃ প্রথম অবস্থায় কর্মক্ষেত্রে সব কাজের কাজি হতে গেলে গোলমাল বাঁধতে পারে। আপনার দ্বারা সবকিছু হবে কিন্তু আপনি কিছুই হতে পারবেন না। তাই যারা এন্ট্রি লেভেল জব করছেন তারা সব কাজের কাজি হতে যাবেন না। আপনার উপর অর্পিত দায়িত্বটুকু যথাযথভাবে পালন করুণ। পোষ্টের সাথে সম্পর্কিত কাজের দক্ষতা বাড়াতে মনোযোগ দেন। সময়ে সাথে সাথে যখন নতুন কিছু শিখবেন তখন থেকে কাজের পরিধি (Area of Operation) বৃদ্ধি করবেন। প্রথম অবস্থায় সবকিছুতে পান্ডিত্য জাহির করতে নেই, এতে আপনাকে কেউ দাম দিবেনা।


যোগাযোগ নীতিঃ যোগাযোগ নীতির উপর ভিত্তি করে কর্মক্ষেত্রের সফলতা নির্ধারিত হতে পারে। আপনি যাদের সাথে কাজ করছেন এবং যাদের নিয়ে কাজ করছেন তাদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ বৃদ্ধি করুণ। এতে পারস্পরিক সানিধ্য বৃদ্ধি পাবে। ফলে অবিশ্বাস দূর হয়ে সহযোগিতার হাত প্রসারিত হবে। দ্বিমুখী যোগাযোগ নীতি প্রতিষ্ঠিত হলে ক্লায়েন্ট আরো কাছে আসার সুযোগ পাবে। আপনি হয়ে উঠবেন আস্থার প্রতীক।


কাজে সৃজনশীলতার ছাপঃ প্রতিটি কর্মীর কাজ হওয়া চাই পরিপূর্ণভাবে সম্পাদন, সঠিক নিয়মে বিন্যাস এবং দক্ষতা সৃজণশীলতার ছাপে ভরপুর। কোন প্রজেক্ট শেষ করে একাধিক বার রিভিউ (পুণঃমূল্যায়ণ) করতে হবে। যাতে ছোট খাটো ভুল থাকলে চোখে ধরা পড়ে। রিভিউ করলে নতুন কিছু সংযোজনের প্রয়োজন হলে সংযোজন করা যায় আবার বিয়োজনের দরকার হলে বিয়োজনও করা যায়। আপনার কাজ পরিস্কার, পরিছন্ন, বোধগম্যতা এবং মূল পয়েন্ট ধরে এগোতে থাকুন। ওয়ার্কশীট বিবরণীতে কাজের প্রয়োজনীয়তা, গ্রহণযোগ্যতা, অর্থনৈতিক গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করুণ।


প্রযুক্তিগত ব্যবহারে দক্ষতা বাড়ানঃ বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগ। সবকিছু কম্পিউটার ব্যাসড হচ্ছে। কম্পিউটার অর্থাৎ তথ্য ও প্রযুক্তিগত ব্যবহারিক জ্ঞানের দক্ষতা বাড়ান। মাইক্রোসফট অফিস, এক্সেলে, পাওয়ার পয়েন্ট এ দক্ষতা বাড়ান, এডোবি ব্যবহারে দক্ষ হউন, ই-মেইল চালাচালিতে পারদর্শীতা অর্জণ করুণ।

বিনয়ী ও অফিস রীতিনীতি মেনে চলুনঃ আপনি কোন পদে চাকুরী করেছেন সেটা বিষয় নয়, আপনার সময়বর্তিতা, শ্নেহশীলতা এবং আনুগত্যের মাপকাঠি হবে আপনার সামগ্রিক মূল্যায়ণের একটি অংশ। প্রতিদিন নির্ধারিত সময়ে অফিসে হাজির দেয়া, ড্রেস কোড থাকলে সে পোশাক পড়া, আর যদি ড্রেস কোড না থাকে তাহলে রুচিশীল পোশাক যেমন- কালো সু, ফুলহাতা জামা, টাই. ঘড়ি পরিধান করা। অফিসের বস এবং ক্লায়েন্ট এর ফোন কল রিসিভ করা, ই-মেইল এর জবাব সময় মতো দেয়া অফিস প্রোটোকল এর মধ্যে পড়ে।

আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হউনঃ নতুন কোন কাজের চ্যালেঞ্জ আসলে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হউন। ভাবতে থাকুন অন্যজন পারলে আমি কেন পারবেনা, আমার দ্বারা এই কাজ সম্ভব। কাজ সম্পাদনে দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে যান। মাঝপথে বাঁধা আসলে ভেঙ্গে না পড়ে প্রতিকূলতা মোকাবেলা করুণ।

নিজেকে মূল্যায়ণ করুণঃ আপনি কি জানেন আর কি জানেন না সেটা নিরুপণ করুণ। কোম্পানীতে আপনার কি কাজ রয়েছে, আর কোম্পানীর আপনাকে কেন প্রয়োজন সেটা মূল্যায়ণ করুণ। প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা না পেলে সেটাও মূল্যায়ণ করুণ। আপনি নিজেকে কোথায় নিয়ে দাঁড়াতে চান সেটা ভাবুন এবং সেই লক্ষ্য ও পরিকল্পণা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান।

একক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রাধান্য দেয়াঃ একক কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বুদ্ধিমত্তার ছাপ রেখে নিজের সিদ্বান্তের প্রাধ্যন্য দিতে হবে। প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সুবিধা ও অসুবিধাগুলো ভাবতে হবে। প্রজেক্ট শেষ করার সময় কি কি প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে এবং কিভাবে সেই সমস্যা মোকাবেলা করা যাবে তার আগাম ধারণা নিয়ে তার একটি বিস্তারিত রোড ম্যাপ প্রস্তুত করতে হবে। হঠাৎ কোন বিষয়ের উপর সিদ্ধান্ত নেয়া ও দেয়া যাবেনা। প্রয়োজনে আপনার বসকে জিঙ্গেস করুণ।

শেখার আগ্রহ তৈরীঃ নতুন কিছু শেখার জন্য প্রচুর আগ্রহ থাকতে হবে। কেন এবং কিভাবে? এই প্রশ্ন করতে হবে। কাজ না পারলে অন্য সহকর্মীর সহযোগিতা নিতে হবে। তার কাছে শেখার আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। কোন কিছু না পারলে লজ্জার কিছু নেই। একটি মানুষ সবকিছু পারবে এমন কোন কথাও নেই। তাই সফলতা পেতে হলে নতুন কিছু শিখতে হবে। 

ভুল হলে সংশোধন করা: ভুল করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। ভুল করলে তা উপলদ্ধি করে সংশোধন করতে হবে। ভুল করলে ভুলের কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। ভুল থেকে সংশোধনের জন্য প্রয়োজনের বসের সাহায্য চাইতে হবে।

কাজের প্রতি মনোযোগ দেয়াঃ অফিস টাইমে কাজই একমাত্র ধ্যান জ্ঞান হওয়া উচিত। কেননা আপনি প্রতিষ্ঠানে যে সময়টুকু ব্যয় করছেন তার জন্য নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আপনাকে পেমেন্ট করছেন। সুতরাং কাজ সম্পাদনের সময় কোন ফাকিবাজি, গড়িমাসি কিংবা দায়িত্বে অবহেলা করা যাবেনা।

দলগত কাজে সবার মতামত নেওয়াঃ অফিসের দলগত কাজে সবার মতামত ও বসের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। দলগত সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কোন কাজ করা যাবেনা। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক প্রজেক্ট শেষ করতেহ হবে। দলীয় শৃঙ্খলা, দল নেতার আদেশ পালন করা, দলগত কাজ সম্পাদনা করা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য থাকা একজন ভালো কর্মীর উদাহরণ।

আমি পারব স্যারঃ অনেক কাজ আছে যেগুলো সবার দ্বারা করা সম্ভব হয়না, তাছাড়া অনেক কৌশলগত কাজ আছে যেগুলো ব্যাপারে বস সবার নির্ভর করেন না। এধরণের কাজ বা প্রজেক্ট আসলে নিজেকে পিছিয়ে নিবেন না। আপনি আপনার বসকে বলুন স্যার আমি আছি। আমাকে দিলে আমি প্রজেক্ট সুন্দরভাবে ও মান অক্ষুণ্ন রেখে সম্পাদন করে দিতে পারব।

সবার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানঃ কর্মক্ষেত্রে সবার উপর সহযোগিতার হাত বাড়ান। কেননা প্রতিষ্ঠানের সবাই মিলে একটি পরিবার। মানুষ দিনের একটি বেশিরভাগ সময় অফিসে ব্যয় করে। তাই সেখানে যারা আছেন তাদের সাথে একটি সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। কাজের ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা চাইবে তাকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করবে।

সময়ের কাজ সময়ে করা: কথায় আছে সময়ে এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। তাই সময়ে কাজ সময়ে করলে সেই কাজে জটিলতার সৃষ্টি হয়না। বস চাহিবার সাথে সাথেই কাজের ডেলিভারী দেয়া দিতে হবে।অফিস ছুটির আগে কি কি কাজ অপেক্ষামান আছে তার তালিকা করতে হবে। অগ্রাধিকার কাজগুলো তালিকায় সবার উপরে রাখতে হবে। নোটবুক ও ডায়েরি ব্যবহারের পরিমান বাড়ান। ডায়েরিতে কাজের নোট করুণ। প্রয়োজনীয় নাম্বার ও মেইল এড্রেস লিখে রাখুন।

মূল্যায়িত না হলে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তণ করুণঃ আপনি যদি মনে করেন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের জন্য অন্যদের থেকে ভালো সার্ভিস দিয়েও আপনার পদ-পদবি ও সুযোগ সুবিধার পরিবর্তণ হচ্ছেনা তাহলে কর্মক্ষেত্র পরিবর্তণ করুণ। তবে সাবধান রাগের মাথায় কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না। নতুন কর্মক্ষেত্র ঠিক করে সবকিছু ভেবে চিন্তে তারপর করবেন।

পরিশেষে, কর্মক্ষেত্রে সফলতার ক্ষেত্রে সহজ ও শর্টকাট কোন পদ্ধতি নেই। সফলতা পেতে হলে আপনাকে পরিশ্রমী, আত্মপ্রত্যয়ী, চনমনে, বাকপটু, বিনয়ী, চ্যালেঞ্জ নেওয়ার সক্ষমতা ও প্রতিষ্ঠানের টার্গেট পূরণের দক্ষতা থাকতে হবে। তাহলেই কেবল আপনি সফলতা পাবেন।

লেখকঃ শাহাদাৎ হোসাইন।

সিনিয়র কার্যনির্বাহী, এ.কে খান গ্রুপ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Proposal for Sale of Commercial Lands- Sotterchaya