পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৭

গোসাইরহাট- অসংখ্য ভুলে ভরা গোসাইরহাট উপজেলার সরকারী ওয়েবসাইট

মাঝে মাঝে হাতে কাজ না থাকলে নেটে ডু মেরে নানান কিছু জানতে চেষ্টা করি। আজকে গোসাইরহাট উপজেলার সরকারী ওয়েব সাইটে ঢুকে মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম। অসংখ্য ভুলবাল নিজিষ চোখে পড়ল। ভুল তথ্য ও মনগড়া কিছু লেখা দেখলাম। এবার আসুন তার কিছু নমুনা ও স্কিন শর্ট দেখি।

চিত্র: গোসাইরহাট সরকারী ওয়েবসাইটে প্রদর্শনকৃত ভুলবাল ঐতিহ্যের পাতা।

গোসাইরহাট উপজেলার সরকারী ওয়েব সাইটের ঐতিহ্য পাতায় সিরমঙ্গল গ্রাম কে গোসাইরহাটের ঐতিহ্য স্থান হিসেবে দেখানো হয়েছে; যা মারাত্মক ভুল। আচ্ছা আপনার বলুন সিরমঙ্গল নামে গোসাইরহাটে কোন ঐতিহ্যগত স্থান বা গ্রাম আছে কি? উত্তর নাই, তাহলে এখানে সিরঙ্গল গ্রাম আসলো কেন? আর সিরঙ্গল কোথায় কোথায়?

এবার আসুন জেনে নিই সিরঙ্গল কোথায়ঃ
সিরঙ্গল গ্রাম একটি কারণে বিখ্যাত; তাহলো উপন্যাসিক আবু ইসহাকের জন্মস্থান।
আমরা জানি বাংলার কালজয়ী উপন্যাসিক আবু ইসহাক (জন্মসাল: 1 নভেম্বর, 1926) পূর্বেকার মাদারীপুর মহাকুমার বর্তমনে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার আওতাধীন শিরঙ্গল গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন এবং তিনি শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন শিরঙ্গল গ্রামে 2003 সালে ইহলোক ত্যাগ করেন (তার বিগত আত্মা জান্নাতবাসী হউক)।  
উপরের পাঠ থেকে জানতে পারলাম, শিরঙ্গল গ্রাম গোসাইরহাটে নয় বরং নড়িয়া থানায় অবস্থিত।


আবার তাদের (ওয়েব সাইটে) শিরঙ্গল গ্রামের ইতিহাস লিখতে গিয়ে লিখেছে; সম্রাট আকবর তার পুত্র জাহাঙ্গীর কে শিরঙ্গলে প্রেরণ করেন শরীয়তপুর কে মুগল শাসানাধীন আনার জন্য। এবং(গোসাইরহাটের পূর্ব নাম নাকি ছিল জাহাঙ্গীর নগর! হাউ ফানি! সত্যি কি তাই? এবার আসুন সত্যিটা জানি।

শরীয়তপুর অঞ্চলটি মূলত নদী মাতৃক অঞ্চল। এলাকার ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং মানুষদের কে মুগল সম্রাটদের বুঝতে কষ্ট হতো। তাছাড়া এখানকার শাসক ও জনগণ দিল্লির অধীনতা মেনে নেওয়ার জন্য কখনো প্রস্তুত ছিলোনা। তাই তারা সুযোগ বুঝে বারবার দিল্লীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করত। এ বিদ্রোহের নেতৃত্ব দিত ইতিহাসখ্যাত বারো ভূঁইয়ারা। বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে দু’জন বারো ভূঁইয়া এ অঞ্চলের শাসক ছিলেন; এই দু’জন হলেনঃ
এক. কেদার রায়
দুই. চাঁদ রায়।

ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, কেদায় রায় মুগল সেনাপতি মানসিংহের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিহত হন। পরবর্তীতে বহুবারই দিল্লীর মুগল সম্রাট আকবর শরীয়তপুরের অঞ্চল দখল করার জন্য শক্তিশালী সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং সম্রাট জাহঙ্গীরের আমলে পুরোপুরি শরীয়তপুর দখলে আনেন। জাহাঙ্গীর শরীয়তপুরে মুগল প্রভাব ধরে রাখার জন্য নড়িয়াতে একটি সেনানিবাস স্থাপন করেন। আর তার নাম অনুসারে এলাকার নাম রাখেন জাহাঙ্গীর নগর।  সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে (বঙ্গের গভর্ণর ইসলাম খার (১৬০৮-১৬১৩) আমলে) সমস্ত শরীয়তপুরে মুগল শাসনের ভিত্তি মজবুত হয়।


মশুরা/শিবলিঙ্গঃ একেবারে শেষে দেখানো হয়েছে যে, ইহা গোসাইরহাটে অবস্থিত। শিবলিঙ্গ  কি গোসাইরহাটে অবস্থিত? গোসাইরহাট তথা শরীয়তপুরের প্রতিটি মানুষ জানে, শিবলিঙ্গ শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নে অবস্থিত।এখানে প্রতি বছর বাৎসরি মেলা বসে। মেলাতে প্রচুর মানুষের সমাগম হয়। দেশের দূর দূরান্ত থেকে এ মেলা দেখার জন্য মানুষজন এসে থাকেন।


চিত্রঃ নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের শিবলিঙ্গ।
নদ নদীঃ
গোসাইরহাট উপজেলার নদ নদীর পরিচিতি দেখাতে গিয়ে তারা দমোদর নদীর কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু গোসাইরহাটে দমোদর নদী নামে কোন নদী নাই।
আমরা জানি,
গোসাইরহাটের পার্শ্ব দিয়ে দেশের বড় নদীগুলোর একটি- মেঘনা নদী প্রবাহিত হয়েছে এবং এই মেঘনা নদীর শাখার নদী হলো জয়ন্তী নদী। অথচ জয়ন্তী নদীর নাম তাদের ওয়েব সাইটে কোথাও উল্লেখ নেই। 

চিত্রঃ জয়ন্তী নদী (ছবি: গুগল ম্যাপ)

তাহলে প্রশ্ন করতে পারেন, দামোদর নদী গোসাইরহাটে আসলো কিভাবে এবং সেই দামোদর নদী কোথায় অবস্থিত? 

উত্তর: দামোদর নদী খুঁজতে গিয়ে আমরা পেয়েছি, গঙ্গার শাখা হুগলীর উপনদী দমোদর। যাহা দমোদর নদ হিসেবে বিখ্যাত। এই নদী ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের অন্তর্গত ছোটনাগপুর মালভূমিতে, পালামো জেলার টোরির নিকট উচ্চগিরি শৃঙ্গ থেকে সৃষ্ট। যার রয়েছে 24245 বর্গ কিলোমিটার অববাহিকা। ইহা কলকাতার 50. কি.মিটার দক্ষিণে হুগলী নদীতে মিলেছে। অর্থাৎ নদীর প্রবাহের স্থান  এবং উৎপত্তি স্থান আমাদের দেশে (বাংলাদেশে) নয় বরং ভারতে। 

চিত্রঃ দমোদর নদী (ছবি ও তথ্য: ইউকিপিডিয়া)



কিছু কথাঃ গোসাইরহাটে বিখ্যাত ও ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যে গোসাইরহাটের জ্বিনের মসজিদ। হাটুরিয়ার জমিদার বাড়ি বিখ্যাত। কিন্তু সেগুলো সু-কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন?

আবার এমন কয়েকজন ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন যাদের জন্মস্থান এ উপজেলায় হয়নি! কিন্তু কি উদ্দেশ্যে তাদের নাম এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তা একটি বড় প্রশ্ন।
আর ভারতের একটি শাখা নদী কিভাবে গোসাইরহাটে এলো এটি একটি কোটি টাকার প্রশ্ন।
এখন কথা হলো সরকারী কোটি টাকা খরচ করে যারা এই ভুলভরে তথ্য ওয়েব পইজে আপলোড করেছেন তাদের কে জবাব দিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।



কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য করুন।






1 টি মন্তব্য: