সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

বয়ঃসন্ধিকাল কাকে বলে? বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনগত প্রভাব ও কিশোর-কিশোরীদের যে তিন ধরণের পরিবর্তণের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তার বিবরণ দাও- সত্যের ছায়া

বয়ঃসন্ধিকাল হচ্ছে মানব জীবনের একটি পর্যায় যেখানে একটি শিশুর নির্দিষ্ট সময়ের পর অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনগত প্রভাবে 

কন্ঠস্বর পরিবর্তন হয়অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আকার বৃদ্ধি পায়মেয়েদের ডিম্বাণু এবং ছেলেদের শুক্রাণু তৈরি হতে শুরু করে এবং শারীরিক ও মানুষিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সে সাবালকত্বের পর্যায়ে পৌঁছায়।

বয়ঃসন্ধিকালে পরিবর্তনঃ বয়ঃসন্ধিকালে সাধারণত তিনটি পরিবর্তন দেখা দেয়। এই তিন ধরণের পরিবর্তন মানব জীবনে বিভিন্ন প্রভাব বিস্তার করে। প্রতিটি পরিবর্তন মানুষ সঠিকভাবে পার করতে হয়। বয়ঃসন্ধিকালে গুরুত্বপূর্ণ  তিনটি পরিবর্তন হলোঃ 

এক. শারীরিক পরিবর্তন 
দুই. মানসিক পরিবর্তন। 
তিন. আচরণগত পরিবর্তন।

শারীরিক পরিবর্তনঃ শারীরিক পরিবর্তন বলতে সেই পরিবর্তনকে বুঝায় যেখানে অন্তক্ষরা গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনগত প্রভাবে কন্ঠস্বর পরিবর্তন, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আকার বৃদ্ধি, মেয়েদের মাসিক ও ডিম্বাণু এবং ছেলেদের শুক্রাণু তৈরি হতে শুরু করে। নিম্নে যে সব শারীরিক পরিবর্তন ঘটে তার একটি তালিকা দেয়া হলোঃ 

১। দ্রুত  লম্বা হয়ে ওঠা।
২। দ্রুত ওজন বৃদ্ধি।
৩। শরীরে দৃঢ়তা আসা।
৪। শরীর গঠনে প্রাপ্তবয়স্কের মতো হয়ে ওঠা।
৫। ছেলেদের ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সে দাড়ি গোঁফ ওঠা। 
৬। শরীরের  বিভিন্ন অংশে লোম গজানো বিশেষ করে  যৌনাঙের চারপাশে। 
৭। ছেলেদের  স্বররভঙ্গ হওয়া ও গলার স্বর মোটা হওয়া। 
৮। ছেলেদের বীর্যপাত হওয়া। 
৯। ছেলেদের বুক ও কাঁধ চওড়া হয়ে ওঠা।
১০। মেয়েদের মাসিক শুরু হওয়া।
১১। মেয়েদের কোমড়ের হাড় মোটা হওয়া।
১২। মেয়েদের স্তনের আকার বৃদ্ধি পাওয়া।
১৩। মেয়েদের মাথার চুল বৃদ্ধি পাওয়া।
১৪। ছেলেদের টেস্টোস্টেরন হরমোনের কারণে লিঙ্গের উত্থানজনিত প্রবনতা বৃদ্ধি পায়।
 
মানসিক পরিবর্তন:

১। অন্যের  বিশেষত নিকট জনের মনোযোগ ভালোবাসা পাওয়ার ইচ্ছা তীব্র হওয়া।

২। আবেগ দ্বারা  চালিত হওয়ার প্রবণতা।
৩। মেয়ে মেয়েদের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হওয়া।

৪। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়া।

৫। নেশা দ্রব্য যেমন সিগারেটের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়া মানসিক পরিপক্ষতার পর্যায় শুরু হওয়া।

৬। পরনির্ভরতার মনোভাব পরিবর্তিত হয়ে আত্মনির্ভর হওয়ার পর্যায় শুরু হওয়া

আচরণগত পরিবর্তন: 

১। বয়সন্ধিকালে নিজেকে পরিপুর্ণ মানুষ হিসেবে প্রকাশ করতে চায়। নিজের স্বাতন্ত্র এবং নিজস্ব বৈশিষ্ট্য পরিবার ও পরিচিতিজনের মধ্যে প্রকাশ। সামাজিক কার্যকর্মে  এন্ট্রি দিতে শুরু করে।

২। আবেগীয় আচরণ নিজের মধ্যে প্রকাশ করে। আগে যেখানে বাবা মায়ের কাছে কিছু পাওয়ার জন্য বায়না ধরত সেখানে এখন সবকিছু আবেগ দিয়ে বিচার করে। কিছু পাওয়া না পাওয়ার মধ্যে আবেগীয় জিদ কাজ করে। ফলে সবার মাঝে নিজেকে প্রকাশ করতে আবেগ দিয়ে কাজ করে বসে।

৩। সবার মাঝে নিজেক প্রকাশ করার জন্য আবেগীয়, বীরত্বপূর্ণ েএবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করে। এ সময় বন্ধু বান্ধবদের ঘনিষ্ঠ হয়। তাদের সাথে সব সময় নিজেকে কল্পণা করে। 

৪। বয়ঃসন্ধিকালে আচরণগত পরিবর্তণের মাঝে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তণ ঘটে পরিবার কেন্দ্রিক চিন্তা ভাবনা। আগে যেখানে সবাইকে এক করে দেখা হতো সেখানে এ পর্যায়ে এসে পরিবারের স্বার্থ প্রধান্য পায়। সমাজে পরিবারকে উঁচু স্থানে ভাবতে কল্পণা করে। এবং আত্মীয় স্বজনের সাথে নিজের পরিবারের বোঝাপড়া বুঝতে চেষ্টা করে।

য়সন্ধিকালে হরমোনাল প্রক্রিয়াঃ বয়ঃসন্ধিকালে হাইপোথ্যালামাসপিটুইটারিগোনাড, ও অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিগুলো এক সাথে কাজ করা শুরু করে দেয়। এই চারটি গ্রন্থিকে একত্রে অন্তক্ষরা গ্রন্থি বলে। তারা একটি ইউনিয়ন বা প্রজননতন্ত্র গঠন করে।। ইহা ছাড়াও মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস অংশ জিএনআরএইচ হরমোন ক্ষরণ শুরু করে দেয়। পিটুইটারি গ্রন্থির বাহিরের অংশ কাজ করা শুরু করে, এবং এলএইচ  এফএসএইচ হরমোন ক্ষরণ হওয়া শুরু হয়, রক্তের মাধ্যমে তা প্রবাহিত হয় এলএইচ এফএসএইচ হরমোনের প্রভাবে যথাক্রমে ডিম্বাশয়  শুক্রাশয় কাজ করা শুরু করে। সেই সাথে এরা  যথাক্রমে এস্ট্রাডিওল  টেস্টোস্টেরন উৎপন্ন করা শুরু করে শরীরে এস্ট্রাডিওল টেস্টোস্টেরনের বৃদ্ধি ঘটায় মেয়ে ছেলের মাঝে বয়ঃসন্ধিকালীন বৈশিষ্টগুলো প্রকাশ পেতে থাকে শরীরে শুরু হওয়া নিউরোহরমোনাল প্রক্রিয়ার এই পরিবর্তন দেখতে - বছর সময় লাগতে পারে

বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক ও শরীরিক স্বাস্থ্যের যত্মঃ বয়ঃসন্ধিকালে মানুষিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে হয়। মানুসিক স্বাস্থ্য বলতে মন-মানুষিকতা ভালো মন্দকে বুঝানো হয়েছে। মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের ভালো রাখার জন্য খেলাধূলো, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড, চিত্ত বিনোদন, ভ্রমণ, ধর্মীয় কাজে অংশ গ্রহণ জরুরী। এ সময় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর পরিমান শাক সবজি ও তরল পান করতে হবে। মনে কোন প্রশ্ন উদয় হলে বাবা মা, ভাই বোন এর সাহায্য নিবে। মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালে মা ও বড় বোনের কাছে সাহায্য নিবে। প্রতিটি মা ও বড় বোন এ ব্যাপারে সাহায্য করে থাকেন। স্যানিটারী ন্যাপকিন ও প্রয়োজনীয় টিকার ব্যবস্থা মা বাবা করে দিবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Proposal for Sale of Commercial Lands- Sotterchaya