মৃত্যুর
পরে আত্মা নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। প্রধান প্রধান ধর্মের মূল কনসেপ্ট (বিশ্বাস) হলো মৃত্যুর
পর আত্মা কৃতকর্ম অনুযায়ী স্বর্গে অথবা নরকে যায়| সেজন্য মৃত্যুর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেহেকে সমাধিস্থ
করে। প্রধান কয়েকটি ধর্ম ব্যতিত অন্য সব ধর্মের আত্মার প্রস্থানের মতবাদে কিছুটা ভিন্নতা
আছে; বিশেষ করে উপজাতীয়দের ধর্মীয় মতবাদে আত্মা সম্পর্কে ভিন্নতা দেখা যায়। কোন কোন
উপজাতী বিশ্বাস করে মৃত্যুর পর আত্মা পুনরায় আগমণ করে। আবার অনেক উপজাতী কিংবা আদিবাসী
বিশ্বাস করে মৃত্যুর সাথে সাথে আত্মা ইতি ঘটে। উপজাতী কিংবা আদবাসীদের বিশ্বাস অনুযায়ী
মৃত্যুর পর দেহ থেকে আত্মার বিদায় নিয়ে পরপারে চলে যায় কিংবা পুনরায় বিভিন্নরুপে পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারে। এই বিশ্বাসগত কারণে তারা জাকজমকপূর্ণভাবে মৃতদেহের কুলখানি
করে আত্মার বিদায় দিয়ে থাকে। ইসলাম ধর্মেও মৃত দেহের জানাযা পড়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেহকে কবরাস্থ করা হয়।
তবে আত্মার প্রস্থান বিশ্বাসে একটি উপজাতীদের মধ্যে ব্যতিক্রম আছে। তারা হলো দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনোশিয়ার সুলাওয়েসি দ্বীপের টোরাজা
উপজাতি। টোরাজা উপজাতিরা মৃত দেহের সাথে বসবাস করে মাসের পর মাস বছরের পর বছর। তাদের
বিশ্বাস অনুযায়ী, মৃত ব্যক্তিরা তাদের জীবনের একটি অংশ। মৃতরা তাদের ইহ জগৎের মায়া ত্যাগ
করতে সময় লাগে, তাই মৃত দেহ তাদের কাছে থাকা অধিক মঙ্গলজনক। অন্য দিকে মৃত ব্যক্তিদের কাছের আত্মীয় যারা আছেন তাদের মোহ বা মায়া ত্যাগ করতেও কিছুটা সময় লাগে। তাই উভয়ে পাশাপাশি থাকতে পারলে এই কষ্ট কিছুটা লাগব হয়। নিম্নে টোরাজা উপজাতিদের মৃতদেহের সাথে বসবাস সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ
টোরাজা উপজাতিরা মৃত দেহের জন্য একটি আলাদা কক্ষ বা ঘর বরাদ্ধ রাখেন। যাতে মৃতরা শান্তিতে থাকতে পারে। সেখানে মৃতদেহের অনুকূলে সব ধরণের আসবাবপত্র থাকে।
আসবাবপত্র মূলত বিছানা, বালিশ, খাট, ছবি, ধর্মীয় প্রতীক এবং পূর্বে ব্যবহৃত নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র এবং বিশেষ ধরণের কফিন বা বাক্সও থাকতে পারে।
মৃত এই মানুষদের যারা অভাব অনুভব করেন তারা ঘরে এসে তাদের সাথে কিছুক্ষণ থেকে যান। প্রিয় মানুষের দেহ স্পর্শ করে তারা আবেগে আপ্লুত হয়।
টোরাজা উপজাতীরা বিশ্বাস করে যে, মৃত দেহের সাথে যে আত্মা থাকে তাকে সন্তুষ্ট করতে হলে খাবার দিতে হয়, তা না হলে অমঙ্গল হওয়ার সম্ভবনা আছে।
ছোট শিশুরা এসে তাদের সমবয়সী মৃত ভাইবোনদের সাথে এসে খেলা করে। অনেকে খুব কাছ থেকে তাদের সাথে মিশে। এতে চলে যাওয়ার অভাব কিছুটা হলেও পূরণ হয়। এটা এক অন্য রকম অনুভূতি।
আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন এটা কত দিন চলতে থাকে? অর্থাৎ মৃতদেহের সাথে কতদিন তারা বসবাস করেন? উত্তর যতদিন তারা চান এবং যতদিন পর্যন্ত না তারা মৃত দেহ ও আত্মাকে জাকজমকপূর্ণভাবে বিদায় দিতে না পারেন তত দিন তাদের সাথে বসবাস করেন।
বিদায় দেয়ার সময় হলে তারা দেহটিকে অত্যন্ত জাকজমকপূর্ণভাবে সজ্জিত করেন।
সজ্জিত করার পর কফিনে বা বিশেষ ধরণের বাহনে চড়িয়ে তারা একটি বিশেষ স্থানে নিয়ে যান।
এবং বছরের নির্দিষ্ট দিনে এরকম বিদায়গামী দেহগুলো একত্রে করে প্রদর্শণের ব্যবস্থা করেন, যাতে সবাই সবাই শেষ দেখা দেখে নিতে পারে এবং প্রিয়জনের সাথে আনন্দঘন মহুর্ত কাটাতে পারেন।
শিশুদের বিদায় দেয়ার সময় পিতারা আবেগী হয়ে যান এবং তারা হাসিমুখে বিদায় দেয়ার চেষ্টা করেন।
মায়েরা তাদের বুকে হাজার কষ্ট ও ভালোবাসা লুকিয়ে প্রিয় সন্তানদের বিদায় দেন।
শ্রদ্ধা অনুষ্ঠানে বিদায়গামী মানুষের মিলন মেলা বসে।
টোরাজা উপজাতীরা বিশ্বাস করে যে, আত্মা বিদায় নেয়ার সময় মহিষে চড়ে বিদায় নেয়। সেজন্য বিদায় অনুষ্ঠানের দিন মহিষ জবাহ করা হয় যাতে আত্মারা মহিষের আত্মাদের সাথে স্বর্গে চলে যায়।
মহিষের মাংস দিয়ে চলে আয়োজন।
মহিষের মাংস আয়েজন চলছে।
মৃতদেহগুলো প্রদর্শণ শেষে প্রার্থণা গৃহে নেয়া হয়।
প্রার্থণা ঘরে আনা হয়েছে মৃত দেহগুলো।
মৃত আত্মাদের স্বর্গীয় শান্তি পাওয়ার আশায় দেহটিকে প্রার্থণা ঘরের সামনে রাখা হয়েছে যাতে সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের কৃপা পান।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ এখন বিদায় দেয়ার পালা। তাই কবরে থাকার উপযোগী করে সাজানো হয়েছে এবং তাদের কে কফিনের ভিতর রাখার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।
এখানে কিছু মৃতদেহকে শেষ বারের মত বিদায় দেয়ার অপেক্ষায়।
এখন সমাধিস্থ করার পালা, তাই একে একে সমাধিস্থ করা হচ্ছে।
টোরাজা উপজাতীরা তাদের সামর্থ অনুযায়ী মৃতদেহ এবং আত্মাদের বিদায় দিয়ে থাকে। এবং বিদায় দিন উপলক্ষ্যে বিশেষ ধরণের আয়েজন ও মেলা চলে। সে আয়োজনে দেশ বিদেশের অনেক পর্যটক ও দর্শনার্থী উপস্থিত হন।
ছবিঃ ফেসবুক থেকে সংগ্রহ।
যেখান থেকে তথ্য পেয়ে উপকৃত হয়েছিঃ ইউকিপিডিয়া ও বিবিসি অনলাইন।
সবাইকে ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন