পৃষ্ঠাসমূহ

রবিবার, ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭

২০১৭ সালের আলোচিত ঘটনা এবং ২০১৮ সালের প্রত্যাশা

দেখতে দেখতে আরেকটি বছর চলে গেল। 2017 সাল কে বিদায় জানোনোর প্রস্তুতি আমরা এক প্রকার সেড়ে ফেলেছি। এখন কেবল ঘড়ির কাটা রাত বারোটা অতিক্রম করার অপেক্ষা। 2017 সাল ছিল মানুষের আশা-বেদনার বছর। সিরিয়া সংকট, আইএসএস এর পরাজয়, মিয়ানমার কর্তৃক নিরীহ রোহিঙ্গাদের প্রতি অমানবিক নির্যাতন, লক্ষ লক্ষ অভিবাসন প্রত্যাশীদের ইউরোপে গমন এবং ভূমধ্য সাগরের মাঝে তাদের সলিল সমাধি, তুরস্কে ব্যর্থ অভুত্থানের চেষ্টা, বিতর্কিত দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাল্টাপাল্টি প্রক্সি রণকৌশল, অস্ট্রোলিয়ায় ছন্নছাড়া নির্বাচন, ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের অপসারণ বা ব্রেক্সিট, ট্রাম্প কর্তৃক পূর্ব জেরুজালেম কে অন্যায়ভাবে  ইস্রারাইলের রাজধানী ঘোষণা ইত্যাদি ছিল বিশ্বব্যাপী আলোচিত ঘটনার সার-সংক্ষেপ ।


২০১৭ সালের আলোচিত ও সমালোচিত ঘটনা

আন্তর্জাতিক ইস্যুর পাশাপাশি আমাদের দেশীয় নানা ঘটনাও আলোচনা- সমালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিল। যেমন; চিকুনগুনিয়া, পাঠ্য পুস্তকে ভুল, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলার রায়, এমপি লিটন হত্যা কান্ড, পাঠ্য পুস্তকের সিলেবাস নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা, বনানীতন দুই বেজন্মা  ধনীর ঘরের দুলাল কর্তৃক দুই মডেল কন্যাকে ধর্ষণের অভিযোগ, রোহিঙ্গাদের ঢল, পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলত সিদ্দিকুরে চোখে পুলিশের অযৌক্তিক টিয়ারশেল নিক্ষেপ, রাস্তায় সন্তান প্রসব, ধর্ষণের বিচার না পেয়ে গরীব বাবা ও মেয়ের একসাথে ট্রেনের নিচে আত্মহুতি, চলন্ত বাসে মেধাবী ছাত্রী রুপাকে ধর্ষণ, এবং প্রত্যারক আহসান হাবীব পিয়ার উল্লেখযোগ্য । 

এছাড়াও মিডিয়াকে অঙ্গনে তারাকাদের ঘর ভাঙ্গার খবর ছিল আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। তাছাড়া অনলাইনে আরো যে সকল ঘটনা আলোচিত ছিল তাহলো- মাহফুজুর রহমানের একক গানের সন্ধ্যা, লুডু স্টার, মিস ওয়াল্ড, ব্লু হোয়েল গেম, তারকা ক্রিকেটার তাসকিনের বিয়ে, ঢাকা অ্যাটাক মুভি, অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত কে নিয়ে বানানো প্যারোডি গান "দেশবাসীতো"- এবং নাটক বড় ছেলে।

আমাদের সবার আশা  2018 সালে আমরা সকল মানবিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারব। বিশ্বব্যাপী অসহায় ও দারিদ্রপীড়িত মানুষের যে সকল সমস্যা রয়েছে তা মিটে যাবে। সিরিয়া ইরাক, প্যালেস্টাইন, রোহিঙ্গা সহ যে সকল মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার আশু সমাধানের পথ খুঁজে পাব।

2018 সালে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা থাকবে ব্যাপক, কেননা 2018 সালের শেষের দিকে বর্তমান আওয়ামী সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। ফলে নতুন সরকার নির্বাচনে জনগণ তাদের ভোটাধিকার  প্রয়োগ করে  পছন্দ অনুযায়ী সরকার নির্বাচিত করতে পারবে।

2018 সালে আমাদের মনে যে আশা রয়েছে তা নিম্নরুপ:
1.  দেশের তৈরী পোষাক শিল্পের যে অনিশ্চয়তা  রয়েছে তার উত্তরণ ঘটবে।
2.  দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতী ঘটবে।
3.  মানুষের বাক স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে।
4.  মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত হবে।
5. দ্রব্যমূলের মাত্রা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।
6.  বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর গতি আগের থেকে বৃদ্ধি পাবে।
7.  মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং সড়ক ও নৌ দুঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিবে।
8.  বেকারদের জন্য অধিকতর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
9.  শিক্ষাক্ষেত্র নকল ও প্রশ্ন ফাঁসমুক্ত হবে।
10. ঘুষ বাণিজ্য রোধ পাবে।
11. চাকুরীক্ষেত্রে অধিকতর মেধাবীরা নিয়োগ পাবে।
12. সামাজিক অস্থিরতা রোধ পাবে।
13. পারিবারিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় সম্প্রতি বৃদ্ধি পাবে।
14. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।
15. মিডিয়াতে গলাবাজী বন্ধ হবে।
16. নির্বাচনী অস্থিরতা দূর হবে।
17. মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটবে।
18. প্রিয় বাংলাদেশ পাচাটা দালাল মুক্ত হবে।

একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয় তাহলো, বর্তমানে শিশু নির্যাতন উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলছে। পথ শিশুদের জীবন ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এতিম ও দুস্থ শিশুদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। তাই সবার প্রত্যাশা ২০১৮ সাল শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ বছর হবে।

আরেকটি বিষয় আমাদের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাহলো  দেশে বিদেশেী সিরিয়ালের প্রভাবে পরকীয়া, ধর্ষণ, খুন, হত্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলছে। স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেট ভিত্তিক অপসাংকৃতির কারণে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধের ফ্রেমওয়ার্ক ভেঙ্গে যাচ্ছে, ফলে সন্তানেরা বিপদগামী পথে ধাবমান হচ্ছে। এথেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। আশা রাখি, নতুন বছরের এই অপসাংস্কৃতি থেকে জাতি কিছুটা হলেও মুক্ত হতে পারবে।

পরিশেষে,  2018 সাল হউক গরীব দুখী ও মেহনতী মানুষের- এই কামনা রইল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন