পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ২৭ জুন, ২০২২

“স্মার্ট ও আধুনিক শরীয়তপুর” কি রাজনৈতিক স্লোগানেই সীমাবদ্ধ থাকবে?

বাংলাদেশের সবচেয়ে অনুন্নত জেলার মধ্যে শরীয়তপুরের নাম সবার আগে চলে আসবে। শরীয়তপুর ঢাকা বিভাগের কাছের জেলারগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেই প্রাচীন আমল থেকে শুরু করে ৪৭ এর দেশভাগ, একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রাম সহ প্রতিটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী শরীয়তপুর। অথচ বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন চিত্রের সাথে শরীয়তপুর জেলার সামগ্রিক উন্নয়ন তুলনা করলে শরীয়তপুর জেলাটি একবারে তলানীতে থাকবে। পাঠকদের সুবিধার্থে নিম্নে শরীয়তপুর জেলার কিছু জীবনমান উন্নয়ন সূচকের তথ্য উপাত্ত পেশ করলামঃ দরিদ্র মোট গ্রহস্থের ৪৪%, অতি দরিদ্র মোট গৃহস্থের ২১%,  স্বাক্ষরতার হার মোট জনসংখ্যার (+ বছর) ৩৮%, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার সুবিধাপ্রাপ্ত ঘর মোট গৃহস্থের ৩৮%, গ্রামীণ পানি সরবারাহ (সক্রিয় টিউবওয়েল) প্রতি ৮৪ জনে একটি, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার সুবিধাপ্রাপ্ত ঘর মোট গৃহস্থের (৩৬%), হাসপাতালের শয্যাপতি জনসংখ্যা (সরকারী), ৪৮৭৫ জন/শয্যা, নবজাতক মৃত্যুর হার, ৪৪জন প্রতি হাজারে।

 

    চিত্রঃ শরীয়তপুরের তিনজন নির্বাচিত সংসদ সদস্য

উপরের তথ্যগুলো প্রতি একশত জন ধরে শতকে হিসাব করা হয়েছে। তথ্যগুলো আপনি বিশ্লেষণ করলে জেলার  সামগ্রিক উন্নয়নের বিষয়টি উপলদ্ধি করতে পারবেন। এখানে বলে রাখা ভালো, উপরোক্ত উপাত্তগুলো আমি সরকারী ওয়েব সাইট থেকে নিয়েছি। বেসরকারী হিসাব করলে উন্নয়নের পার্সেন্টিজ আরো কমতে পারে বলে আমার ধারনা।
 
স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি নির্বাচনে এখান থেকে সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক সহ অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী বিপুল ভোটে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে আওয়ামী সরকার একটানা একযুগের বেশি ক্ষমতায় রয়েছে। এই প্রজন্ম থেকে তিনজন সংসদ সদস্য যথাক্রমে  কে. এম. এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), নাহিম রাজ্জাক (শরীয়তপুর -৩),  এবং ইকবাল হোসেন অপু (শরীয়তপুর-১) পার্লামেন্টে প্রতিনিধিত্ব করছেন। বর্ণিত তিনজন সংসদ সদস্যের উপর উন্নয়ন বিষয়ক জনগণের নানা অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শরীয়তপুর জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করা। বর্তমানে পদ্মা বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের পর নতুন করে নানা প্রশ্ন ও অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে। অনেকে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে  তাদের উপর নানা ক্ষোভ ঝাড়ছেন।

 মোঃ আফিস ইকবাল নামে একজন লিখেছেন; “গত ১৫ বছরে শরীয়তপুরে যোগাযোগের ব্যবস্থার উন্নয়ন কি? #মাননীয় সংসদ সদস্যগণ।

 মোজাম্মেল হক নামের একজন লিখেছেন;

“#গোসাইরহাটে বিআরটিসির বাস চাই 

হোক প্রতিবাদ.... 

প্রিয় শরীয়তপুর বাসী আপনাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে শরীয়তপুরের বাসীর দীর্ঘদিনের আশা এই জেলায় বিআরটিসি গাড়ি চলাচল করুক, সেই হিসাবে আজকে বিআরটিসি চেয়ারম্যান মহোদয় কতৃক উদ্বোধনের মাধ্যমে ঢাকার গুলিস্তান ফুলবাড়িয়া থেকে সকাল ৯ টায় শরীয়তপুরের ৪ টি উপজেলা রুটে(নড়িয়া, শরীয়তপুর সদর, ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ, গোসাইরহাট) ৭ টি এসি বাস চালু করা হয়। ঘটনা হলো শরীয়তপুর জেলা বাস মালিক সমিতির নোংরা রাজনীতির স্বীকার বিআরটিসি গাড়ি। গাড়ি গুলো শরীয়তপুর পৌঁছামাত্র তারা জেলা বাস স্টান্ডে সব কয়টা গাড়ি আটক করে রাখছে এবং সকল যাত্রীদের নামিয়ে লোকাল বাসে তুলে নিয়েছে।

সবার পক্ষ থেকে থেকে এটার একটা প্রতিবাদ চাই।”

মোহাম্মদ বিন ইয়ামিন নামের আরেকজন লিখেছেন: “শরীয়তপুরে কী কোন গণমাধ্যমে নেই, ২দিন যাবত শরীয়তপুরে এতো ভোগান্তি হচ্ছে যাত্রীরা, সড়কে জ্যামজট, গাড়ী একসিডেন্ড হলো বিআরটিসি বাস আটকিয়ে যাত্রীদেরকে তাদের গাড়ীতে নিয়ে গেল, বাস মালিক সমিতি, একটি নিউজ হইলো না কিন্তু কেন, আপনাদের কী নিউজ করতে নিষেধ করা হচ্ছে?”

 তাছাড়া মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন নামের একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন:

“#পদ্মাসেতু নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু আমাদের #শরীয়তপুর এর সড়কের কি যে অবস্থা, দুইটা বাস পাশাপাশি ক্রসিং করতে পারে না রাস্তা দিয়ে। ☹️☹️  অথচ শরীয়তপুর-১ আসনের এমপি শ্রদ্ধেয় #ইকবাল_হোসেন_অপু ৭/৮ দিন আগেও সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন তার নাকি আর চাওয়ার কিছু নাই। তিনি নাকি সব পেয়ে গিয়েছেন। এই সব পেয়ে যাওয়ার নমুনা? 🤔🤔

যাইহোক, আজকে যারা BRTC বাস দিয়ে গ্রামে গিয়েছিলেন আমাদের ৪ জন এমপির বাবা মায়েরা যদি শুনতে পেতো আজকে জনগন তাদের কি পরিমান .... দিতেছে বা দিয়েছেন ? তাহলে তাদের বাবা-মায়েরা তাদেরকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করতো।কারন, যে তোদের ব্যার্থতার জন্য আমরা কেন গালি শুনবো?

দুইটা বাস রাস্তায় ক্রস করতে পারেনা আর কি উন্নয়নে বাণী শুনায় সারাদিন। 😡😡

#উন্নয়ন #স্বপ্নের_পদ্মাসেতু #শরীয়তপুর

#জয়বাংলা ”


চিত্রঃ শরীয়তপুরের অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল। রোডগুলো অত্যন্ত সরু, অনেক যায়গা একসাথে দুটি বাস পাশ কাটিয়ে চলতে পারেনা। ছবিঃ সংগ্রহীত।

অন্য আরেকজন লিখেছেন: “শরীয়তপুর বাসির জন্য পদ্মা সেতুর উদাহরণ অনেকটা বেকার ছেলের অবৈধ প্রেম করার মত, সারা বছর  বুক ভরা আশা নিয়া ঘর বাধার সপ্ন দেখে,  হঠাৎ পাশের এলাকার চাকুরীজীবী ভাই এসে বিয়ে করে আসল মজা নিয়ে যায়,

সেতু শারীয়তপুর হলেও রাস্তার অভাবে আসল মজা লুটতাছে ফরিদপুর মাদারীপুরের লোকজন, শরীয়তপুর বাসির এখন একটাই কাজ মমতাজের কন্ঠের সাথে তাল মিলিয়ে চিল্লাইয়া গান গাওয়া বন্দু যখন বউ লইয়া আমার বাড়ির সামনে দিয়া রংগ কইররা হাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়।”

যা হউক আমরা আশা করি শরীয়তপুরের তিনজন কৃতি সন্তান জনাব, কে এম এনামুল হক শামীম, নাহিম রাজ্জাক, ইকবাল হোসেন অপু বিষয়টি সংসদে (পার্লামেন্টে) উপস্থাপন করবেন এবং অতিদ্রুত শরীয়তপুরের যোগযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য  মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ ও আশু হস্তক্ষেপ কামনা করবেন।

২টি মন্তব্য: