আমরা অনেকে আছি যারা ব্যবসায় আইডিয়া খুঁজতে খুঁজতে হয়রান। কি ব্যবসা করা যায়? কিভাবে শুরু করব, মানুষে কি বলবে, এতো লেখাপড়া করে শেষমেশ ব্যবসা করব? আমার পুঁজি কম ইত্যাদি চিন্তায় যারা ঘুরপাক খাচ্ছে তাদের জন্য কিছু ছোট ব্যবসার বড় আইডিয়া প্রদান করলাম। আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে, বিফলে মূল্য ফেরত।
১। চা/কফি সপঃ আপনি যদি অল্প টাকায় কোন ব্যবসা আরম্ভ করতে চান তাহলে চা/কফি আপনার জন্য বেস্ট। এ ব্যবসায় ঝুঁকি কম লাভ বেশি। দোকানের পজিশন এবং কাস্টমার নিয়ে কোন চিন্তা করতে হয়না। কর্মচারী পাওয়া যায় কম টাকায়। তাই আগ পিছু না ভেবে আজই কফি সফ দেওয়ার চিন্তা করতে পারেন। কিন্তু অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকতে চাইলে আপনার বিজনেস সপকে সুন্দর এবং ব্যতিক্রম ডেকোরেশন করতে হবে, আর চা কিংবা কফির স্বাদে আনতে হবে নতুনত্ব।।
২। ই-কমার্স সাইটঃ একটি ই-কমার্স সাইট খুলে সহজে আপনি অনলাইনে ব্যবসা করতে পারবেন। বিষয়টি না বুঝলে একটু খোলাসা করে বলি, ই-কমার্স সাইট বলতে ব্যবসার অনলাইন প্লাটফর্মকে বুঝায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলীবাবা কিংবা আমাজনের মতো প্রতিষ্ঠান হয়ত আপনি না দিতে পারেন কিন্তু দারাজ, আজকের ডিল মতো প্রতিষ্ঠান আপনি চাইলেই দিতে পারেন। তা না পারলেও আপনার এড়িয়ায় আপনি একটি অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারেন। বাংলাদেশে ফুড পান্ডা ভালো ব্যবসা করছে। অনলাইনে ব্যবসায় ভালো করতে হলে আপনাকে সততার সাথে ব্যবসা করতে হবে, আর আপনাকে একটি ভালো মানের ওয়েব সাইটও ক্রিয়েট করতে হবে। ওয়েব সাইট ক্রিয়েট করার জন্য নিম্ন লিখিত লিংকে ক্লিক করতে পারেনঃ
৩। ফেসবুক পেইজঃ ফেসবুক পেইজ খুলেও আপনি ব্যবসা আরম্ভ করতে পারবেন। ফেসবুক পেইজে আপনি মুদি, কাপড়, ইলেকট্রনিকস যন্ত্রাংশ, প্রসাধনী, মোবাইল, গেজেট, পেস্টি খাবার, বেকারি, কেইক এমনকি গরুর পেটি বা ভুরি বিক্রি করতে পারবেন। ফেসবুক পেইজ খুলে ব্যবসা করা প্রাথমিক অবস্থায় একটু চ্যালেঞ্জিং হলেও আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায়।
৪। এজেন্ট হাউজঃ আপনি চাইলে এজেন্ট হাউজ খুলে মানুষকে সেবা এবং ব্যবসা উভয়ই দিতে পারবেন। এটা অনেকটা ব্যবসার মতো। ঢাকা শহরে এধরণের বিভিন্ন এজেন্ট হাউজ চোখে পড়বে। এই ব্যবসাতে আপনি চাইলে কর্মী সাপ্লাই, রং মিস্ত্রি সাপ্লাই, বাসা বাড়ি পাল্টানোর জন্য লেবার সাপ্লাই, বিভিন্ন কোম্পানিতে শিক্ষিত তরুন সাপ্লাই, কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী সিভি সাপ্লাই, স্টোশনারী প্রেডাক্ট সাপ্লাই ইত্যাদি প্রদান করিতে পারেন। তাছাড়া কল সেন্টার এজেন্ট একটি পরিচিত এবং ভালো মানের ব্যবসা। সিকিউরিটি গার্ড ট্রেনিং এবং রিক্রুটমেন্ট ব্যবসা বাংলাদেশ সহ উন্নত বিশ্বে ভালো অবস্থানে আছে। বাংলাদেশে গার্ড ফর সিকিউরিটি এবং সেন্ট্রি সিকিউরিটি এজেন্সি সুনামের সাথে কর্মাশিয়াল প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি উৎপাদনমুখি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি সরবরাহ করে আসছে।
৫। বাসা বাড়ি ভাড়া দেওয়াঃ আপনি চাইলে এই ব্যবসাটি চালু করতে পারেন। বাড়ির মালিক থেকে সম্পূর্ণ বাসা ভাড়া নিয়ে তারপর অন্য লোকদের নিকট ফ্লাট অথবা ইউনিট আকারে ভাড়া দিবেন। এতে মাস শেষে ভালো পরিমাণ টাকা আয় হবে।
৬। মেস বাড়ি ভাড়াঃ ঢাকা শহর ও বিভাগীয় শহরে প্রচুর পরিমান মেস বাসার চাহিদা রয়েছে। চাকুরিজীবী, ছাত্র এবং ব্যাচেলর ছেলেদের নিকট সহজে মেস বাসা ভাড়া দেওয়া যায়। চীনারা বাংলাদেশে সুপার হোস্টেল নামে মেস বাসা ভাড়া দিয়ে ব্যাচেলর থেকে প্রচুর পরিমান টাকা আয় করছে। আপনি চাইলে বাসা ভাড়া নিয়ে মেস চালাতে পারেন। এতে আপনার ভালো ইনকাম হবে।
৭। ক্যাটারিং সার্ভিস (ভাটি ভাত বিক্রি)ঃ ইদানীং চাকুরিজীবীদের কাছে ক্যাটারিং খুবই জনপ্রিয়।দুপুরে খাবার নিয়ে টেনশন করতে হয়না। কর্মস্থলে সময় মত খাবার পৌছে যাচ্ছে। অনেক এলাকায় তিনবেলা ক্যাটারিং সার্ভিস চলে, বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ, টঙ্গী, কালিগঞ্জ, কেরানিগঞ্জ, ইপিজেড এলাকায়। তাছাড়া আপনি চাইলে স্পেশাল ও খাবার অর্ডার নিয়ে সাপ্লাই দিতে পারবেন। ফ্যাক্টরি, অফিস-আদালতে ক্যাটারিং ভালো চলে।
৮। ফুলের দোকানঃ ফুল সবার প্রিয়। কাউকে শুভেচ্ছা জানাতে, অফিস আদালতের বিশেষ অনুষ্ঠানে, বিয়ে কিং গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে প্রচুর ফুল দরকার হয়। এক ১৪ই ফেব্রুয়ারী আপনি যে পরিমান ফুল বিক্রি করবেন তা নিয়ে আপনার সারা বছরের ব্যবসার খরচ উঠে যাবে। তাই আপনি এই সৌখিন ব্যবসাটা শুরু করে দেখতে পারেন। আশা করি ভালো প্রফিট পাবেন।
৯। হকারিঃ আপনি যদি একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের হন তাহলে লঞ্চে, ট্রেনে, বাসে, গলিতে গলিতে, এমনকি রাস্তার ধারে হকারি ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এক্ষেত্রে ভ্যানে শুরু করলে আপনার যায়গা ও মালামাল বহন নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। হকারি ব্যবসাতে আপনি কাপড়, তরকারি, প্লাস্টিকের খেলনা, জালমুড়ি, ছোলা, বাদাম ইত্যাদি বিক্রি করতে পারেন।
১০। ওয়ান টাইম কাপ/গ্লাস বা প্লেট বানানোঃ পার্টি, অনুষ্ঠানে এবং চায়ের দোকানগুলোতে ওয়ান টাইম কাপ/গ্লাস বা প্লেটের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এই ব্যবসা আপনি মোটামুটি বিনিয়োগ করে শুরু করতে পারবেন। এজন্য আপনার মেশিন, কর্ম দক্ষতা এবং মার্কেটিং অভিজ্ঞতা দরকার হবে। তবে নতুন হলে ভয়ের কিছু নেই, চ্যালেঞ্জিং নিয়ে শুরু করুন। ইনশা আল্লাহ সফল হবেন।
১১। ইউটিউবঃ আপনি চাইলে ইউটিউবে একাউন্ট খুলে তাতে ভালো মানের ভিডিও ক্রিয়েট করে গুগল এডসেন্স থেকে ভালো মানের টাকা আয় করতে পারবেন।
১২। ফ্রিল্যান্সিংঃ এটা অনেকটা মুক্ত পেশার মত। কাজলে করলে টাকা না করলে নাই। আপনি ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিকস ডিজাইন, আর্টিকেল রাইটিং, টাইপিং, ডিজিটাল মার্কেটিং ইত্যাদির মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারেন। এ পেশাতে অনেকেই সফল। বিশ্ব বিখ্যাত কিছু ফ্রিল্যাংন্সিং সাইট হলোঃ Fiverr. Toptal. Jooble. Freelancer.com.Upwork. Flexjobs. SimplyHired. Guru.
১৩। ব্লগিংঃ ব্লগিং করেও আপনি ভালো পরিমান টাকা আয় করতে পারেন। আপনি ফ্রি ব্লগিং শিখতে ও করতে চাইলে ব্লগার ডটকম কে বেছে নিতে পারেন। ব্লগিং করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
১৪। মোবাই সার্ভিসিংঃ এই পেশায় আসতে হলে আপ্নাকে ট্রেনিং নিতে হবে। কম খরচে অথবা ফ্রিতে শিখতে পারবেন। যেকোনো মার্কেটে ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারবেন।
১৫। মোবাইল ব্যাকিং বা এজেন্ট এজেন্ট ব্যাংকিংঃ আমাদের দেশে মোবাইল ব্যাংকি একটি প্রতিষ্ঠিত সেক্টর, বিকাশ, নগদ, রকেট, এম ক্যাশ, শিউরক্যাশ ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিং চ্যানেলগুলো ভালো করছে। তাছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং একটি সম্ভাবনাময় সেক্টর। ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্ বাংলা এজেন্ট ব্যাংকিং খুব ভালো করছে।
১৬। এজেন্ট ব্যাকিংঃ ব্যাংক থেকে এজেন্ট এনে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করতে পারেন। ডাচ্ বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামি ব্যাংক ইত্যাদিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেল চালু আছে।
ইহা ছাড়াও এই ব্যবসাগুলো শুরু করতে পারেন।
১৭। লাইব্রেরি।
১৮। মানি এক্সচেঞ্জ।
১৯। কাপড়ের দোকান।
২০। হার্ডওয়্যার দোকান।
২১। ইলেকট্রনিক শোরুম।
২২। কোচিং সেন্টার
২৩। ট্রেনিং সেন্টার।
২৪। রেন্ট এ কার।
২৫। কম্পিউটার কম্পোজ দোকান।
২৬। প্রিন্টিং হাউজ।
২৭। তরকারীর দোকান
২৮। হাঁস মুরগি, গরু-ছাগলের খামারঃ বাংলাদেশ কৃষি প্রদান দেশ হওয়ায় এবং হাঁস-মুরগি ও গবাদি পশুর খাদ্য সহজ লভ্যতায় আপনি হাঁস মুরগি কিংবা গরু ছাগলের খামার দিয়ে স্বাবলম্ভী হতে পারেন। এই জন্য আপনাকে উপর্যুক্ত যায়গা নির্বাচন ও খামার গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় বিণিয়োগ করতে হবে।
২৯। ফার্মেসীঃ ফার্মেসী ব্যবসা এখন তরুনদের নিকট ট্রেন্ড। ফার্মেসী ব্যবসা করতে হলে আপনাকে ফার্মেসী কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। এবং সরকারী অধিদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় সনদপত্র সংগ্রহ করতে হবে।
৩০। বুটিক হাউজঃ বুটিক ব্যবসা আর টেইলারী উভয়ই পোশাক নিয়ে হলেও আলাদা আলাদা ক্ষেত্র রয়েছে। বুটিক হাউজে পোশাকের উপর ডিজাইন বা কারুকার্য ফুটিয়ে তোলা হয়। এই পেশা ও ব্যবসায় ভালো বুনাফা তোলা যায়। যারা এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত তারা এখানে ভালো করবেন।
...................................................................
এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন