আধুনিক বাংলা ব্যাকরণে ধাতু একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যায়। বাংলা ব্যাকরণে রূপতত্ত্ব আলোচনা
ধাতু চেনার সহজ উপায়ঃ প্রচলিত বেশকিছু ধাতু বা ক্রিয়ামূল চেনার একটি উপায় হলো: বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষে ক্রিয়ার রূপ লক্ষ করা। কারণ, এই রূপ আর ধাতুরূপ এক। যেমন- কর্, খা, যা, ডাক্, দেখ্, লেখ, ইত্যাদি। এগুলো যেমন ধাতুও, তেমনি মধ্যম পুরুষের তুচ্ছার্থক বর্তমান কালের অনুজ্ঝার ক্রিয়াপদও। (সূত্রঃ বাংলা ভাষার ব্যাকরণ, নবম ও দশম শ্রেণি)।
লেখার সময় ধাতু বুঝাবার জন্য বা ধাতুকে নির্দেশ করার জন্য শব্দের পূর্বে টিকচিহ্ন ব্যবহার করা হয়। শব্দের ব্যকারণগত আলোচনায় কোন শব্দের পূর্বে যদি টিক চিহ্ন দেয়া থাকে তাহলে বুঝতে হবে শব্দটি ধাতু। যেমন কর, পড়, ধর, খা, পা, বই ইত্যাদি।
ধাতুর প্রকারভেদঃ ধাতু তিন প্রকার, যথা (১) মৌলিক ধাতু (সিদ্ধ ধাতু), (২) সাধিত ধাতু এবং (যৌগিক ধাতু বা সংযোজকমূলক ধাতু)।
১। মৌলিক ধাতুঃ বাংলা ব্যাকরণে
বাংলা ভাষায় যে সমস্ত ধাতুর ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ বা ক্ষুদ্রতম অংশে ভাঙ্গা সম্ভব হয় না তাকে মৌলিক ধাতু বলে। মৌলিক ধাতু স্বয়ংসিদ্ধ
এবং সর্বনিম্ন একক তাই মৌলিক ধাতুকে সিদ্ধ ধাতুও বলা হয়। যেমন পড় কর্, খা, দে ইত্যাদি
মৌলিক ধাতুর প্রকারভেদঃ
ব্যাকরণবিদগণ মৌলিক ধাতুকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন;
(ক) খাঁটি বাংলা ধাতু (খ)
সংস্কৃত ধাতু (গ)বিদেশী ধাতু
(ক) খাঁটি বাংলা ধাতুঃ যেসব
ধাতু সংস্কৃত থেকে না এসে বরং প্রাকৃত, অপভ্রংশের মাধ্যমে বা অন কোনভাবে বাংলা ভাষায়
প্রবেশ করেছে সেসব ধাতুকে খাঁটি বাংলা ধাতু বলে। খাঁটি বাংলা ধাতুর সাথে সংস্কৃত শব্দ
ভান্ডারের কোন যোগসূত্র নেই। এগুলো বাংলা ভাষার নিজস্ব সম্পদ। খাঁটি বাংলা ধাতু গুলো
হচ্ছে কাট্, ছাট্, কাদ, জান্, নাচ্, ইত্যাদি।
(খ) সংস্কৃত ধাতুঃ বাংলা
ভাষায় যেসব তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতু প্রচলিত রয়েছে তাদের সংস্কৃত ধাতু বলে। যেমন কৃ, গম্,
ধৃ, গঠ্, স্থা ইত্যাদি। সংস্কৃত ধাতুগিুলোর সাথে প্রত্যয় যোগ করে বিশেষ্য বা বিশেষণের
ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। ত্যজ (সংস্কৃত) থেকে ত্যাগ করা ইত্যাদি ক্রিয়াপদ হয়। আবার এই ধাতু
থেকে ত্যাগ, ত্যক্ত, ত্যাজ্য ইত্যাদি পদ হয়।
দৃশ থেকে দৃশ্য, দর্শণ ইত্যাদি
সাধিত শব্দ তৈরি হচ্ছে।
সাংস্কত ধাতু+খাঁটি বাংলা
ধাতুর অর্থের মিল সাধিত শব্দ।
সংস্কৃত ধাতু সাধিত পদ বাংলা
ধাতু সাধিত পদ
কৃ কৃত, কর্তৃব্য কর করা, করে করণ
রক্ষ রক্ষক, রক্ষণ রাখ রাখা, রাখি
গিম গমন, গত যা যাওন, যাওয়া
অঙ্ক অঙ্কন, অঙ্কিত আঁক আঁকা
কৃৎ কর্তন, কর্তিত কাট্ কাটা
ধৃ ধৃত, ধারণ ধর্ ধরা, ধরণ
পঠ্ পঠন, পাঠ্য পড় পড়া, পড়ন
(গ) বিদেশী বা বিদেশগত ধাতুঃ বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে হিন্দি, আরবি, ফার্সি ভাষা থেকে আগত ক্রিয়ামূলকে বিদেশী ধাতু বলে।ভিক্ষে মেগে খায়। এ বাক্যে মাগ্ ধাতু হিন্দি মাঙ্ থেকে আগত। এছাড়াও কতগুলো ক্রিয়ামুল রয়েছে যাদের ক্রিয়ামূলের মূল ভাষা নির্ণয় করা কঠিন। এ ধরণের ক্রিয়ামূলকে বলা হয় অজ্ঞাতমূল ধাতু। যেমন ‘হের ঐ দুয়ারে দাঁড়িয়ে কে? এ বাক্যে হের ধাতুটি কোন ভাষা থেকে আগত তা জনা যয় না। তাই এটি অজ্ঞাত ধাতু।
কয়েকটি বিদেশী ধাতুর উদাহরণ দেয়া হলোঃ
থাতু যে অর্থে ব্যবহৃত হয় ধাতু যে
অর্থে ব্যবহৃত হয়
আঁট শক্ত করে বাঁধা ফির্ পুনরায়গমন,
পুনরাবৃত্তি
খাট্ মেহনত করা চাহ্ প্রার্থণা
করা
জম্ ঘনীভূত হওয়া ভিজ্ সিক্ত হওয়া
ঝুল্ দোলা ঠেল্ ঠেলা
সাধিত ধাতুঃ মৌলিক ধাতু কিংবা কোন কোন নাম- শব্দের সঙ্গে ‘আ’ প্রত্যয় যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে। অন্য কথায় বলা যায় যে, যে ধাতু বিশ্লেষণ করলে তার মূলে অন্য একটি ধাতু বা অন্য কোন শব্দ পাওয়া যায়, সে ধাতুকে সাধিত ধাতু বলে। যেমন- দেখ্ + আ= দেখা, পড়+আ= পড়া, বল+আ= বলা ইত্যাদি।
সাধিত ধাতুর শ্রেণি বিভাগঃ
গঠন রীতি ও অর্থের দিক থেকে সাধিত ধাতু তিন প্রকার, যথা- (ক) নাম ধাতু, (খ) প্রযোজক
(নিজন্ত) ধাতু, (গ) কর্মবাচ্যর ধাতু।
(ক)নাম ধাতুঃ বিশেষ্য, বিশেষণ
এবং অনুকার অব্যায়ের পরে ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে যে নতুন ধাতু গঠিত হয় তাকে নাম ধাতু বলে।
যেমন সে ঘুমাচ্ছে। এখানে ‘ঘুম’ থেকে নাম ধাতু হয়েছে ঘুমা’। আবার ‘ধমক’ থেকে নাম ধাতু
‘ধমকা’। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমাকে ধমক দিও না।
(খ) প্রযোজক ধাতুঃ মৌলিক
ধাতুর পরে প্রেরণার্থ (অপরকে নিয়োজিত করা অর্থে) ‘আ’ প্রত্যয় যোগ করে প্রযোজক ধাতু
বা ণিজন্ত থাতু গঠিত হয়। যেমন কর্ + আ= করা (এখানে করা একটি ধাতু। মৌলিক ধাতু নাচ+আ=
নাচা, নাচায়, পড়+আ= পড়া, তিনি ছেলেকে পড়াচ্ছেন।
(গ) কর্মবাচ্যের ধাতুঃ মৌলিখ ধাতুর সঙ্গে “আ” প্রত্যয় যোগে কর্মবাচ্যের ধাতু সাধিত হয়। এটি বাক্যমধ্যস্থ কর্মপদের অনুসারী ক্রিয়ার ধাতু। যথা- দেখ্+আ= দেখা, কাজটি ভালো দেখায় না। হার্+আ= হারা; ‘যা কিছু হারায় গিন্নী বলেন; কেষ্টা বেটাই চোর’।
‘কর্মবাচ্যের ধাতু’ বলে
আলাদা নামকরণের প্রয়োজন নেই। কারণ, এটি প্রযোজক ধাতুরই অন্তর্ভুক্ত। যেমন- ‘দেখায়’
এবং ‘হারায়’ প্রযোজক ধাতু।
৩। সংযোগমূলক ধাতু: বিশেষ্য,
বা বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর, দে, পা, খা, ছাড় ইত্যাদি মৌলিক ধাতু সংযুক্ত
হয়ে যে নতুন ধাতু গঠিত হয় তাকে সংযোগমূলক ধাতু বলে। যেমন যোগ (বিশেষ্য পদ) + কর্ (ধাতু)=
যোগকর (সংযোগমূলক ধাতু)। বাক্য- তিনের সঙ্গে পাঁচ যোগ করে। সাবধান (বিশেষ্য) + হ (ধাতু)=
সাবধান হ (সংযোগমূলক ধাতু)।
সংযোগমূলক ধাতু যোগে গঠিত
কয়েকটি ক্রিয়াপদের উদাহরণ দেয়া হলোঃ
১। কর্- ধাতু যোগে
(ক) বিশেষ্যের সঙ্গে : ভয় কর, লজ্জা কর্, গুণ কর্
(খ) বিশেষণের সঙ্গে : ভালো কর্, মন্দ কর্, সুখী কর্
(গ) ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের সঙ্গে : ক্রয় কর্, দান কর্, দর্শণ কর, রান্না কর্
২. হ-ধাতু যোগে : বড় হ, ছোট হ, ভালো হ, রাজি হ, সুখী হ
৩। দে- ধাতুর যোগে : উত্তর দে, দাগা দে, জবাব দে, কান দে, দৃষ্টি
দে
৪। পা-ধাতু যোগে : কান্না পা, ভয় পা, দুঃখ পা, লজ্জা পা, ব্যথা
পা, টের পা,
আর্টিকেলটি ওয়ার্ড ফাইল ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুণ
ধাতু সম্পর্কিত পোষ্টটি পিডিএফ pdf ডাউনলোড করতে চাইলে এখানে ক্লিক করুণ
ধাতু সম্পর্কিত প্রশ্নঃ
১। ধাতু বলতে কী বোঝ? ক্রিয়াপদ দেখে ধাতু
চেনার উপায় কী?
২। ধাতু কয় প্রকার ও কী কী? সংস্কৃত মূল
ধাতু ও বাংলা মূল ধাতুর পার্থক্য কী? উদাহরণসহ বুঝিয়ে দাও।
পাঠটি পড়ে আপনি-
ধাতু কাকে বলে বা ধাতুর সংজ্ঞা জানতে পারবেন।
ধাতু কত প্রকার ও কিকি জানতে পারবেন।
ধাতু চেনার সহজ উপায় জানতে পারবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন