মানুষ চিন্তা করে এক হয়ে যায় আরেক। অনেক সময় মন্দও ভালো পরিণতি বয়ে আনে আবার
এই পাঁচ বিষয় সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে হয়েছে-
اِنَّ اللّٰہَ عِنۡدَہٗ عِلۡمُ السَّاعَۃِ ۚ وَیُنَزِّلُ الۡغَیۡثَ ۚ وَیَعۡلَمُ مَا فِی الۡاَرۡحَامِ ؕ وَمَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌ مَّاذَا تَکۡسِبُ غَدًا ؕ وَمَا تَدۡرِیۡ نَفۡسٌۢ بِاَیِّ اَرۡضٍ تَمُوۡتُ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌ خَبِیۡرٌ ٪
“নিঃসন্দেহে আল্লাহই কেয়ামতের জ্ঞান রাখেন এবং তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভে যা আছে তা জানেন। এবং কোন আত্মা বুঝতে পারে না যে সে আগামীকাল কি অর্জন করবে এবং কোন আত্মা বুঝতে পারে না কোন দেশে তার মৃত্যু হবে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও অবহিত।”- সূরা লোকমান- আয়াত ৩৪।
হাদিস শরীফে নবী করীম (সাঃ) এই পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে বলেন;
«مَفَاتِيحُ الْغَيْبِ خَمْسٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلَّا اللهُ:
إِنَّ اللَّهَ عِندَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِى الاٌّرْحَامِ وَمَا تَدْرِى نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَداً وَمَا تَدْرِى نَفْسٌ بِأَىِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلَيمٌ خَبِيرٌ
ইবনে উমর হতে বর্ণিত- গায়েবের চাবি পাঁচটি, যা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না: নিশ্চয়ই আল্লাহ, কেয়ামতের জ্ঞান তাঁর কাছে, তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জানেন যা মাতৃগর্ভে রয়েছে। কেউ জানে না সে কি আগামীকাল রোজগার করবে, এবং কেউ জানে না কোন জমিতে সে মারা যাবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বজ্ঞাতা। -সহীহ বুখারী।
উপরোক্ত কুরআনের আয়াত এবং হাদিস পাঠ করে জানা গেল যে পাঁচটি বিষয়ে আল্লাহ অবগত আছেন এবং আল্লাহর হেকমতেই সংঠটিত হচ্ছে বা হবে। অতএব কিয়ামত, বৃষ্টিবর্ষণ, মাতৃগর্ভে ভ্রূণ, আগামীকাল সংগঠিত বিষয় এবং মৃত্যুর কোথায় হবে সে সম্পর্কে আলোচনার দাবি রাখে।
কিয়ামত কখন হবে?
কেয়ামত বা পৃথিবীর শেষ দিন সম্পর্কে আমরা আগাম কেউ কিছু জানিনা। কিন্তু সব মানুষ কিংবা বিজ্ঞানীগণ এই বিষয়ে একমত ”পৃথিবী একদিন ধ্বংস হবে।” সেটা আল্লাহর হুকুমের মাধ্যমে হবে। পরিবেশ দূষণ, পারমানবিক বিস্ফোরণ কিংবা গ্রহাণুর আঘাত পৃথিবী ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুরোপুরি ধ্বংস হবেনা। মানুষ সৃষ্ট কারণে পৃথিবী বিপর্জয়ের মুখে পড়বে। পৃথিবী থেকে সব প্রাণী বিলুপ্তি হবে না। কিন্তু আল্লাহ হুকুমে পৃথিবী ধ্বংস হলে সবকিছু শেষহয়ে যাবে। কিয়ামত সংঘটনের বিভিন্ন আল্লামত ও সময়ের একটি বিবরণ হাদিসে এসেছে তদাপি সঠিক ও নির্দিষ্ট সময় তাতে উল্লেখ নেই। এ সম্পর্কে নবী করিম (সাঃ) বলছেন, কিয়ামত কখন নিশ্চিতরুপে সংঘটিত হবে তা একমাত্র আল্লাহই জানেন, তবে তা না জানে কোন ফেরেশতা, না জানে কোন প্রেরিত নবী।
বৃষ্টিপাত কিভাবে কখন বর্ষিত হয়?
এখানে আল্লাহতাআলা বৃষ্টিপাত বর্ষণের ক্ষমতা সম্পর্কে বলেছেন; যদিও অনেক তাফসীরগণ এই আয়াতের ব্যাখ্যা করেছেন বৃষ্টিপাতের খবর সম্পর্কে কিন্তু আমি তার সাথে একমত নই। কেননা এখানে তিনি বলেছেন বৃষ্টি বর্ষণ করেন অর্থাৎ তার হুকুমে মেঘমালা গঠিত হয় এবং তারই হুকুমে মেঘমালা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ হয়। সুতরাং এখানে দেখা যাচ্ছে বৃষ্টিপাত দ্বারা তার ক্ষমতাকে বুঝানো হয়েছে, সময় সম্পর্কে নয়।মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব নয় কোথায় এবং কখন মেঘমালা গঠিত হবে। তিনি (আল্লাহ্) মেঘমালা গঠন করলে মানুষ আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে বাতাসের আদ্রতা বিশ্লেষণ করে বৃষ্টিপাত সম্পর্কে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারেন। তবে এখন পর্যন্ত আধুনিক বিজ্ঞান বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার শতভাগ সফল পূর্বাস করতে পারেনি, তারপরও আমি বলব এখানে বৃষ্টিপাত দ্বারা মহান আল্লাহ্ তায়ালা ক্ষমতাকে বুঝানো হয়ছে, যদিও সময়কে পরোক্ষভাবে নির্দেশ করে।
মাতৃগর্ভে ভ্রুণের অবস্থা?
এখানে মাতৃগর্ভে ভ্রুণের অবস্থা বলতে আগত সন্তানের চরিত্র, কর্ম, সন্তান পরিপূর্ণ নাকি বিকলাঙ্গ হবে তা বুঝানো হয়েছে। তাছাড়া ইহা দ্বারা সন্তান মৃত হবে নাকি জীবিত হবে তাও বুঝায়। কোন পিতা মাতাই জানেনা তার নবজাতক তার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে কিনা। তাছাড়া মাতৃগর্ভে ভ্রুণ নিষিক্ত হওয়ার আগে কিংবা নিষিক্ত হওয়ার পরপর কেউই জানেনা ভ্রুণের প্রকৃত অবস্থা অর্থাৎ সে কোথায় নিষিক্ত হবে, অথবা সে ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে ইত্যাদি। তাই মাতৃগর্ভে নিষিক্ত ভ্রুণ সম্পর্কে আল্লাহই ভালো জানেন।
আগামীকাল কি হবে?
এখানে আগামীকাল কি হবে বুঝাতে তার বেঁচে থাকার নিশ্চয়তাকে বুঝানো হয়েছে। যদিও অনেক মুফাসিরগণ এই কথার ব্যাখায় কাজ বুজিয়েছেন। কিন্তু আমার মতে এখানে কাজ নয় বরং বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা বুঝানো হয়েছে। আপনি আজকে মারা গেলে কালকে কি উপার্জণ করবেন? যদিও বর্তমান সময়ে মানুষ তার কাজ নির্দিষ্ট সিডিউল মেনে করে, কিন্তু বেঁচে থাকার সময়কে নির্দিষ্ট করতে পারেনি। আপনি আগামীকাল কি কি কাজ করবে তা যদি ওয়ার্ক সিডিউলে রাখেন অথচ আপনি বিকালে মারা গেলেন তাহলে তো আপনার দ্বারা কাজ সমাপন করা সম্ভব নয়। তাই তো আল্লাহ বলেন ”কোন আত্মা বুঝতে পারে না যে সে আগামীকাল কি অর্জন করবে”।
কোথায় মৃত্যু হবে?
মানুষ তার মৃত্যুর নির্দিষ্ট স্থান জানেনা। এখানে কোথায় মৃত্যু হবে বলতে দুটি বিষয়কে বুঝানো হয়েছে-
দুই. স্থান অর্থাৎ তার মৃত্যুর নির্দিষ্ট জায়গায়।
ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামীগণ অপরাধের পূর্বে জানেনা যে তোর ফাঁসি হতে পারে, আর হলেও কোথায় কখন ফাঁসি হবে সে সম্পর্কে সে অজ্ঞাত থাকে। স্বাভাবিকভাবে মানুষ জানেনা কখন ও কোথায় তার মৃত্যু হবে। মানুষের মৃত্যুক্ষণ অনিশ্চিত।
শেষ কথাঃ আমাদের কুরআন এবং নবী করীম (সাঃ) এর আদর্শ অনুসরণ করে জীবন গঠন করতে হবে। তাহলে এই পাঁচটি বিষয় আমাদের অনুকূলে হবে ইনশাআল্লাহ।
লেখকঃ শাহাদাৎ হোসাইন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন