সূরা ইখলাস মক্কায় অবর্তীণ পবিত্র কুরআনুল কারীমের ১১২ নং সূরা। যার আয়াত সংখ্যা ৪, রুকুর সংখ্যা ১, শব্দের সংখ্যা ১৫, অক্ষর সংখ্যা ৪৭। ইখলাস শব্দের অর্থ একনিষ্ঠতা, একত্ববাদ, একনিষ্ঠ ধর্ম পালন খাঁটি বিশ্বাস ইত্যাদি।
সূরা ইখলাসঃ
قُلْ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ * ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ * لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ * وَلَمْ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدٌ
উচ্চারণ : কুল হুয়াল্লাহু আহাদ। আল্লাহুচ্চামাদ। লাম ইয়ালিদ ওয়া লাম ইউলাদ। ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ। ’
অর্থ : (হে রাসুল! আপনি) বলুন, আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়। তিনি কারো মুখোপেক্ষী নন। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেয়নি। এবং তার সমকক্ষ কেউ নেই ’ (সুরা ইখলাস)।
নামকরণের সার্থকতাঃ সূরার ভিতরেই নামকরণের সার্থকতা লুকিয়ে আছে। এই সূরার মাধ্যমে স্বয়ং আল্লাহ-তাআলা তার পরিচয় তুলে ধরেছেন। তিনি তাওহিদ বা একত্ববাদ ঘোষণা করেছেন। মহাবিশ্বে তার সাথে তুলনা করা যায় এমন কেউ নেই। অর্থাৎ তিনি কেন্দ্রীয় একক শক্তি, যার মাধ্যমে জগতের দৃশ্য ও অদৃশ্য সকল কিছু ঘূর্ণায়ণমান বা চলমান। যেহেতু তিনি কারো পিতা নন আবার কারো সন্তান নন, আবার যেহেতু তার উপর কারো ক্ষমতা খাটানোর অধিকার নেই, সুতরাং তার ইবাদত, আরধণা করতে হবে একনিষ্ঠতার সাথে অর্থাৎ ইখলাসের সাথে।
সূরার অন্তনির্হত বিষয়ঃ রাসূল (সাঃ) এর জবানীতে এই সূরার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ তা'আলা তার জাত ও সিফাত তুলে ধরেছেন। আল্লাহর পরিচয়, আল্লাহর ক্ষমতা, আল্লাহর জন্ম-সৃষ্টির রহস্য, আল্লাহর তাওহীদবাদ (একত্ববাদ) এবং আল্লাহর সার্ববভৌমত্ব তুলে ধরেছেন। এই সূরার মাধ্যমে অবিশ্বাসীদের সকল প্রশ্ন ১৫টি অক্ষরের মাধ্যমে যথাযথভাবে দেয়া হয়েছে, যাতে তারা তার পরিচয় সম্পর্কে দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করতে না পারে। এটাই আল্লাহর হেকমত ও কৌশল এবং এটাই সূরার অন্তনির্হিত বিষয়।
শানেনূযুলঃ আরবের মক্কা শহরে ইসলাম ছিলো একটি বিপ্লব। প্রথম অবস্থায় এই বিপ্লবের ঢেউ সমস্ত শহরবাসীকে প্রকম্মিত করেছে। ইসলাম আগমনের সাথে সাথে আল্লাহর জাত ও সিফাত নিয়ে অবিশ্বাসীদের মনে হাজারো প্রশ্ন জেগেছে। রাসূল (সাঃ) মূর্তিপূজারীদের আল্লাহর একত্ত্ববাদের প্রতি আহব্বান জানালে তারা আল্লাহর পরিচয় নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তুলত। তার জন্ম পরিচয়, ক্ষমতা এবং অংশীদারিত্ব নিয়ে কথা বলত। হাদিসে এসেছে হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত- খয়বারের ইহুদীদের একটি প্রতিনিধি দল রাসূল (সাঃ) এর দরবারে এসে আরজ করল, “হে আবুল কাসেম! আল্লাহ ফেরেশতাদেরকে নূরের পর্দা থেকে, আদমকে পচাগলা মাটির পিণ্ড থেকে, ইবলিসকে আগুনের শিখা থেকে, আসমানকে ধোঁয়া থেকে এবং পৃথিবীকে পানির ফেনা থেকে তৈরি করেছেন। এখন আপনার রব সম্বন্ধে আমাদেরকে জানান ( অর্থাৎ তিনি কোন বস্তু থেকে সৃষ্ট?)” রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একথার কোন জবাব দেননি। তারপর জিব্রীল (আ) আসেন। তিনি বলেন, হে মুহাম্মাদ! ওদেরকে বলে দাও, “ হুওয়াল্লাহু আহাদ” (তিনি আল্লাহ এক ও একক)
অন্য হাদিস এসেছে- ইবনে আব্বাস (রা) বর্ণিত, নাজরানের খৃষ্টানদের সাতজন পাদরী সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রদিনিধি দল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাত করে। তারা তাঁকে বলে: “আমাদের বলুন, আপনার রব কেমন? তিনি কিসের তৈরি?” তিনি বলেন, “আমার রব কোন জিনিসের তৈরি নন। তিনি সব বস্তু থেকে আলাদা।” এ ব্যাপারে আল্লাহ এ সূরাটি নাযিল করেন।
ফজিলতঃ সূরা ইখলাস এর ফজিলত সহীহ বুখারী হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। অনেক নেককার ব্যক্তি প্রত্যেক দিন ফজিলতের আশায় সূরা ইখলাস পাঠ করেন। সূরা ইখলাস পাঠ করলে পবিত্র কুরআন শরীফের এক-তৃতীয়াংশ পাঠ করা হয়ে যায়। হাদিস শরীফের এসেছে, হযরত আবূ সাঈদ খুদরী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) তাঁর সাহাবীদেরকে বলেছেন, তোমাদের কেউ কি এক রাতে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াত করতে অসাধ্য মনে কর? এ প্রশ্ন তাদের জন্য কঠিন ছিল। এরপর তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কার সাধ্য আছে যে, এমনটি পারবে? তখন তিনি বললেন, “কুল হুআল্লাহু আহাদ” অর্থাৎ সূরা ইখ্লাস কোরআন শরীফের এক-তৃতীয়াংশ। (বুখারি হাদিস নং- ৪৬৪৬)
অপর এক হাদিস এসেছে হযরত কাতাদা ইবনু নুমান রাযি থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) এর সময় এক ব্যক্তি শেষ রাতে সালাতে শুধুমাত্র “কুল হুআল্লাহু আহাদ” ছাড়া আর কোনো সূরাই তিলাওয়াত করেন নি। পরদিন সকালে কোন এক ব্যক্তি রাসূল (সাঃ) -এর কাছে আসলেন। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, সে সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন। এ সূরা হচ্ছে সমগ্র কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমান। (বুখারি ৪৬৪৫)।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানলাম যে, সূরা ইখলাসের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালা তার- (ক) একত্ববাদ (খ) তার সার্বভৌমত্ব, (গ) তার জন্মরহস্য ইত্যাদি বর্ণনা করেছেন। তাছাড়া ইখলাস পাঠ করলে পবিত্র কুরআনুল কারীমের এক তৃতীয়াংশ পাঠ হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সকাল ও রাত্রে ঘুমানোর আগে সূরা ইখলাস পাঠ করা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন