আলাওলপুর ইউনিয়ন বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট থানার অর্ন্তগত মেঘনা নদীর তীরবর্তী একটি ইউনিয়ন।
নামকরণঃ মহা কবি আলাওলের
নাম অনুসারে সাবেক গরীবেরচর ইউনিয়নের নামকরণ করা হয় আলাওলপুর ইউনিয়ন। স্থানীয় অধিবাসীদের ধারণা মহা কবি আলাওল গরীবেরচর ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত চরজালালপুর নামক গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। কিন্তু ইহা অনুমান নির্ভর। এই তথ্যের ঐতিহাসিক কোন ভিত্তি নেই। পাঠ্য বইয়ের মধ্যে মহাকবি আলাওল এর যে জীবনী তাতে উক্ত তথ্যের সত্যতা মিলেনা। সত্যতা না মিলুক তাতে কোন সমস্যা নাই, কিন্তু কবি আলাওলকে নিয়ে আলাওলপুর ইউনিয়ন বাসীর যে আবেগ, যে ভালোবাসা এবং যে মিথোলজি আছে তা আলাওলপুর নামকরণের মাঝেই বেঁচে থাকুক হাজার বছর।
অবস্থানঃ আলাওলপুর ইউনিয়ন (Alawalpur Union) এর পূর্ব নাম গরীবেরচর ইউনিয়ন। পরবর্তীতে স্থানীয় কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় অত্র ইউনিয়নের নামকরণ করা হয় আলাওলপুর ইউনিয়ন। আলাওলপুর ইউনিয়নটি গোসাইরহাট উপজেলার সর্ব দক্ষিণে অবস্তিত একটি উন্নয়নশীল ইউনিয়ন। যার পূর্ব দিকে মেঘনা নদী ও নীলকমল ইউনিয়ন। পশ্চিম দিকে পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়ন এবং উত্তর দিকে চরকুমারিয়া ইউনিয়ন অবস্থিত।
ইতিহাসঃ বৃটিশ আমলে আলাওলপুর ইউনিয়ন একটি মৌজা বা গ্রাম ছিলো। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এখানকার অনেক কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। প্রাচীনকাল থেকেই এখানকার মানুষজন ছিলো অত্যন্ত দরিদ্র। পেশা বলেতে ছিলো কৃষিকাজ ও মাছ ধরা। শিক্ষিত মানুষের হার ছিলো খুবই কম। মেঘনা নদীর তীরবর্তী অংশ ছিলো ডাকাত প্রবণ। যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো খুবই অনুন্নত। স্থানীয়দের বাজার সৃষ্টির ধারণা অনেক দেরিতে গড়ে উঠে। বণিক সম্প্রাদায় ছিলোনা বলেই চলে। অবশ্যই বৃটিশ আমল থেকে এই অবস্থার পরিবর্তণ হতে থাকে। বৃটিশ আমলের একটি ঘটনা এখনো অনেক মানুষ কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্মরণ করে। ঘটনার সার-সংক্ষেপ মোটামুটি এই রকম- ব্রটিশ আমলে এখানকার দরিদ্র মানুষদের খাজনা প্রায় বকেয়া থাকত। একদিন বৃটিশ নিয়োগকৃত কালেক্টর আসলেন এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শণে। একে তো খাজনা আদায়ের মওসুম তার উপর বৃটিশ আমলে আলাওলপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিলো অত্যন্ত অনুন্নত। তাই কালেক্টর সাহেবের আসতে অনেক রাত হয়ে যায়। কালেক্টর সাহেব আলাওলপুর এসে দেখলেন সমস্ত এলাকা রাতের অন্ধকার ছেয়ে আছে, কোথাও সাড়াশব্দ নেই, প্রতিটি বাড়ি নিস্তব্ধ। তিনি কৌতুহুল হয়ে জিঙ্গেস করলেন; এলাকা এতো অন্ধকার কেন? মানুষজনের সাড়া পাচ্ছিনা, এযেন ভূতুরে এলাকা! জবাবে তৎকালীন স্থানীয় প্রতিনিধি জনাব মাষ্টার ওহাব ঢালী ও মাষ্টার জমিরউদ্দিন ঢালী বৃটিশ কালেক্টরকে বলেন “ওরা গরীব মানুষ, কুপি-বাতি জ্বালানোর সক্ষমতা তাদের নেই। তাই সন্ধ্যা রাতে ঘুমিয়ে পড়েছেন। কথিত আছে যে, মাষ্টার ওহাব ঢালী ও মাষ্টার জমিরউদ্দিন ঢালী অত্র ইউনিয়নের সকলকে আগেই বলে রেখেছিলেন কালেক্টর সাহেব যেদিন আসবেন সেদিন যেন সবাই রাতের কুপি বন্ধ রাখে। যেদিন কালেক্টর সাহেব আসলেন সেদিন সবাই কুপি-বাতি জ্বালানো বন্ধ রাখেন। ওহাব ঢালী ও জমির উদ্দিন ঢালী জানতেন কবি কালেক্টর সাহেব কবে আসবেন। অনেকের ধারণা কালেক্টর সাহেব রাতে আসার পিছনেও তাদের হাত আছে। অবশ্য কালেক্টর সাহেবের 'গরীব' শব্দটি পছন্দ করেছেন, তাই তিনি অত্র এলাকার নাম রাখলেন 'গরীবেরচর'। পরবর্তীতে গরীবেরচর এলাকাটি ইউনিয়নের মর্যাদা পায়। কালেক্টর এর সুপারিশে বৃটিশ প্রশাসন আপতকালীন সময়ের জন্য খাজনা মওকুফ ও ভূমিহীনদের জন্য জমির বন্ধোবস্ত করেছিলেন।
বিখ্যাত ব্যক্তিঃ আলাওলপুর ইউনিয়নের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ হলেন; মাষ্টার ওহাব ঢালী, মাষ্টার জমির উদ্দিন ঢালী, মকবুল বেপারী, আব্দূল গফুর সরদার, কলিমুল্লাহ বেপারী, মফিজ মাষ্টার, মরহুম সেলিম ঢালী, সাদিম আলী বেপারী, হাজী জাহান আলী পঞ্চায়েত, গোলাম মোস্তফা বাচ্চু সরদার, আমজাদ হোসেন বেপারী, ওসমান গনি বেপারী, মোঃ আকতার হোসেন(সিনিয়র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্ মন্ত্রণালয়)
বিখ্যাত পণ্যঃ আলাওলপুর ইউনিয়নটি মাছ ও কৃষি দ্রব্যের জন্য
বিখ্যাত। মাছের মধ্যে মেঘনা নদীর মাছ সমূহ যেমন- ইলিশ, বোয়াল, রুই, বাইন, পুটি,
বায়লা, চিংড়ি, টাকি, শোল, আড়ই উল্লেখ যোগ্য। কৃষি দ্রব্যের মধ্যে ধান, মরিচ,
পাট, কালোজিরা, সরিষা, গম ইত্যাদি অধিক ফলে। তবে বর্তমানে কৃষকগণ মৌসুমী শাক-সবজি ও
মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
ঐতিহাসিক ও পর্যাটন স্থানঃ আলাওলপুর ইউনিয়নটি নদী বিধৌত ও চরাঞ্চল
হওয়ার কারণে প্রাচীন স্থাপত্য সেভাবে গড়ে উঠেনি। তবে এখানে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান
হলে গরীবেরচ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গরীবেরচর বাজার (ঢালীর বাজার), চরজালালপুর বাজার, মহিউসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা, বেপারী-গো নতুন বাজার, টেকপার ইত্যাদি। তবে চরজালালপুর মেঘনা নদীর পাড়ে পর্যাটনের
অপার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে সরকারীভাবে ইপিজেড প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিমধ্যে সমীক্ষা চালানো হয়েছে।
ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি কর্মকান্ড। আলাওলপুর ইউনিয়নের মানুষ
সাংস্কৃতি প্রবণ। এখানে সকল মানুষের মাঝে সম্প্রতির বন্ধন বিদ্যামান। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড
বলতে নব্বই দশকে বাচ্চু বান্ডারীর বাড়িতে যাত্রাপালার আসর বসত।তাছাড়া এখানকার
মানুষ জারী গান ও মুর্শিদি গান গেয়ে থাকেন। বর্তমান সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড স্কুল পর্যায়ে
চলমান। ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসে প্রতিটি স্কুলে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড
মহা সমারোহে অনুষ্ঠিত হয়।
নদ-নদীঃ আলাওল ইউনিয়নের পূর্ব পাশ ঘেঁষে বাংলাদেশের একটি
বিখ্যাত নদী মেঘনা প্রবাহিত হয়েছে। মেঘনা নদী থেকে একটি শাখা নদী টেকপার হয়ে
মোল্লা বাজার ও বালার বাজারের দিকে চলে গেছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ যোগাযোগ ব্যবস্থা দিন দিন উন্নত হচ্ছে। ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে কার্পেটিং এবং ইটসলিং রাস্তা আছে। চরজালালপুর এবং টেকপার দিয়ে নৌ-পথে ঢাকা, চাঁদপুর, হাইমচর এবং বরিশালে যাতায়াত করা যায়। গোসাইরহাট-সখিপুর সড়কটি গরীবেরচর বাজারের উপর দিয়ে চলে গেছে। আলাওলপুর ইউনিয়নে বিমান ও রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই।
এক নজরেঃ
বর্তমান নামঃ আলাওলপুর ইউনিয়ন।
পূর্ব নামঃ গরীবেরচর ইউনিয়ন।
পোষ্টকোডঃ 8050
আয়তনঃ ১৪.৭০ বর্গ কিঃ মিঃ,
গ্রামঃ গ্রামের
সংখ্যাঃ ২২ টি (কম বেশি)।
মৌজারঃ ৫
টি।
হাট/বাজার
সংখ্যাঃ ৫টি।
সরকারী
প্রাথমিক বিদ্যালয়-১১টি,
উচ্চ
বিদ্যালয়ঃ ২টি,
মাদ্রাসা-
২টি।
কলেজঃ নাই তবে গরীবের মাধ্যমিক বিদ্যালয় কলেজ পাঠদানের অনুমতি পেয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন