আমরা প্রায়ই নানা বিষয়ে গুগলে অনুসন্ধান করি। এই অনুসন্ধান আমাদের প্রয়োজনেই হয়ে
আমার আসল পিতা কে? আপনার আসল পিতা কে এটা গুগলের জানার কথা নয়। কারণ গুগল জানেনা আপনার আসল পিতা কে। আপনার যদি বর্তমান পরিচয়দানকারী পিতাকে নিয়ে কোন সন্দেহ হয় তাহলে আপনি আপনার মা'কে জিজ্ঞেস করুণ, অথবা ল্যাবে ডিনএনএ টেস্ট করে জেনে নিন বর্তমান পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আপনার আসল পিতা কিনা। জেনে রাখা ভালো গুগলের পক্ষে সেই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব যে প্রশ্নের উত্তর অনলাইনে কোন না কোনভাবে দেয়া থাকে। গুগলের নিজস্ব তথ্য ভান্ডার বলতে কিছু নেই। গুলল একটি র্সাচ ইঞ্জিন। কেউ কোন বিষয় সার্চ করলে গুগল বিভিন্ন ওয়েব সাইট থেকে সবচেয়ে ভালো ফলাফলটি প্রদর্শণ করে। সুতরাং প্রকৃত পিতা কে এটা গুগলে না খোঁজাই ভালো।
সৃষ্টিকর্তা কি সত্যি আছে? সৃষ্টিকর্তা একটি বিশ্বাসগত ধারণা। যারা বিশ্বাস করে সৃষ্টিকর্তা আছে তাদের কাছে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব বিদ্যামান। আর যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেনা তাদের কাছে সৃষ্টিকর্তা বলে কিছু নেই। সবকিছু প্রকৃতির নিয়মে ঘটছে। সৃষ্টিকর্তা সত্যি সত্যি আছে কিনা তা গুগল কখনো জানবেনা। কারণ গুগল একটি সার্চ ইঞ্চিন, যা এলগরিদম, মেশিন লানিং সিস্টেম ইত্যাদি মাধ্যমের সমন্বয়। তাই গুগলের পক্ষে সষ্টিকর্তা আছে কিনা সঠিক উত্তর দেয়া সম্ভব নয়।
বিস্ফোরক দ্রব্য খোঁজাঃ অনলাইনে ভুলেও বিস্ফোরক দ্রব্য খুঁজতে যাবেন না। বিস্ফোরক দ্রব্যের কার্যকারিতা, কিভাবে বিস্ফোরিত হয়, বোমা বানানোর উপায়, কিভাবে বোমা বানানো যায়, কোথায় বোমা পাওয়া যায়, বোমার দাম কত, ককটেল বানানোর পদ্ধতি কিংবা পেট্টল বোমা বানানোর তরিকা এই সমস্ত বিষয় লিখে কখনো র্সাচ করতে যাবেনা না, তাহলে আপনার সার্চকৃত কুকিজ এবং লগ ফাইল গোয়েন্দা সংস্থার কাছে চলে যেতে পারে। আপনি নাশকতার পরিকল্পনাকারী হিসেবে গ্রেফতার হতে পারেন।
শিশু পর্ণগ্রাফিঃ বিশ্বের প্রতিটি দেশে শিশু পর্ণগ্রাফি নিষিদ্ধ। তাই অনলাইনে ভুলেও শিশু পর্ণগ্রাফি খুঁজতে যাবেন না। আর শিশু পর্ণগ্রাফি খোঁজা আপনার বিকৃত রুচির পরিচয় বহন করে, যা নৈতিক ও আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী আপনাকে শিশু পর্ণগ্রাফি খোঁজার কারণে নজরে রাখতে পারে এবং আপনার এলাকায় যদি কোন শিশু ধর্ষণ বা যৌন অপরাধের শিকার হয় তাহলে প্রথমত আপনাকেই সন্দেহ করবে, তাই সাধু সাবধান।
খুন করার আইডিয়া এবং যন্ত্রপাতি বা অস্ত্রঃ মানুষ খুণ করার কোন আইডিয়া গুগলে খুঁজতে যাবেন এবং খুনের সাথে সম্পর্কিত কোন যন্ত্রপাতি যেমন পিস্তল, দা, চাকু, রশ্মি, চাপাতি, স্কচটেপ ইত্যাদি ভুলেও খুঁজবেন না। এই সম্পর্কিত কোন আর্টিকেল যদি খুঁজেন আর যদি আপনার এলাকায় যদি কোন খুন হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথম আপনাকেই সন্দেহ করবে, প্রয়োজনে আপনাকে জিঙ্গাসাবাদ করতেও পারে।
গর্ভপাতঃ বিশ্বের অনেক দেশেই অবৈধ গর্ভপাত আইনত দন্তনীয় অপরাধ। গর্ভপাতকে সহজ বাংলায় ভ্রণ হত্যা বলে। ইহা নৈতিক পরিপন্থী কাজ হিসেবেও বিবেচিত। গর্ভপাতকে মানুষ সামাজিক অবক্ষয় হিসেবে দেখে থাকেন। তাই গর্ভপাত কিভাবে করা যায়, কোথায় করা যায়, গর্ভপাতের খরচ কেমন, গর্ভপাতের ঔষুধ কি? ইত্যাদি প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন।
মানুষের মৃত্যুর পর আত্মা কোথায় চলে যায়?
রোগের ঔষুধ খোঁজাঃ ইন্টারনেটের সহজলভ্যতা এবং হাতে হাতে মোবাইল থাকার কারণে আমরা প্রায় গুগলে বিভিন্ন রোগের ঔঘুধ খুঁজি, যা একেবারে অনুচিত। কেননা মানব দেহের রোগের প্রকৃত কারণ সম্পর্কে গুগল অজ্ঞাত। তাছাড়া একই উপসর্গ বিভিন্ন রোগের থাকতে পারে। গুগল আপনার রোগের নির্দিষ্ট কারণ জানেনা। গুগল হয়ত আপনাকে বিভিন্ন ঔষুধ সাজেশন করবে। গুগলের সাজেশনকৃত ঔষুধ আপনার রোগের জন্য প্রযোজ্য নাও হতে পারে। তাই রোগ হলে গুগলকে জিঙ্গেস না করে ডাক্তার দেখান। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষুধ সেবন করুণ।
পন্যের রিভিউকে চূড়ান্ত না ভাবাঃ বাজারে নতুন কোন প্রডাক্ট বা পণ্য আসলে অনেকে রিভিউ লিখে থাকেন। যারা রিভিউ লিখেন তাদের মধ্যে বেশিরভাগ থাকেন পেইড লিখক বা ভাড়াকৃত পণ্যের গুণগান গাওয়া লোক। ইহাও এক ধরণের বিজ্ঞাপন। সুতরাং গুগলে কোন পন্যের গুণাগুণ দেখলে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে যাবেন না। এতে আপনি ঠকতে পারেন।
ব্যাংক সম্পর্কিত তথ্য খোঁজাঃ ব্যাংকের নির্দিষ্ট ইউআরএল না জানলে গুগলে আপনার চাহিত ব্যাংক সম্পর্কিত তথ্য জানতে যাবেন না, কেননা হ্যাকারা ব্যাংকের ওয়েব সাইটের অনুরুপ আরেকটি ওয়েব সাইট তৈরী করে রাখে। আপনি যদি সেই ওয়েব সাইট ওপেন করে কোন তথ্য প্রদান করেন তাহলে আপনার একাউন্ট বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।
বিনামূল্যে অনলাইন নিরাপত্তা সার্ভিস (ফ্রি এন্টিভাইরাস, র্যাম স্কেন্যার) খোঁজাঃ গুগলে র্সাচ করে কখনো ফ্রি এন্টিভাইরাস কিংবা র্যাম ক্লিনার সফটওয়ার ডাউনলোড করবেন না। অনেক টাউট বাটপার ফ্রি অনলাইন এন্টিভাইরাস ও র্যামস্কেন্যার সফটওয়ার বিনামূল্যে ডাইনলোড ও পরিসেবা দিয়ে থাকে, আদতে তা মূলত ম্যালওয়ার বা হার্মফুল সফটওয়ার (Software)। এই ধরণের পরিসেবা আপনার ডিভাইসে চালু করলে ডিভাইস ক্ষতিসহ তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই নির্দিষ্টি এড্রেস জেনে তারপর এন্টিভাইরাস র্সাচ করবেন।
পরিশেষেঃ গুগল আপনার অবান্তর প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়। আপনার অবান্তর প্রশ্নের সঠিক উত্তর নাও পেতে পারেন। সবকিছু গুগলে খোঁজা আপনার হিউম্যান জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ করে দিবে। তাই বাস্তবতার আলোকে প্রশ্নের উত্তর খুঁজুন, প্রয়োজনে গুগলের সাহায্য নেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন