একটি রাষ্ট্র যখন তার পরিচালনাধীন সরকারের মাধ্যমে শূণ্য থেকে আঠার বছরের সকল শিশুকে মৌলিক অধিকার যেমন খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, নিরাপত্তা অন্যান্য প্রাসঙ্গিক চাহিদা প্রদান করার নিমিত্তে আইন প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নে যথাযথ ভূমিকা নেয় তখন তাকে শিশুদের সামাজিক সুরক্ষায় রাষ্ট্রের যথাযথ ভূমিকা বলে।
শিশুদের সামাজিক সুরক্ষার রাষ্ট্রের ভূমিকাঃ শিশুদের সামাজিক সুরক্ষার রাষ্ট্র প্রধান ভূমিকা পালন করে। কারণ রাষ্ট্রের অর্থণৈতিক অবস্থা যদি খারাপ থাকে, আর যদি সেখানে জানমালের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকে তাহলে সবচেয়ে বেশি অপুষ্টির শিকার এবং সহিংসতার সসম্মুখীন হয় শিশুরা। একটি দেশে যুদ্ধাবস্থায় থাকলে শিশুরা অরক্ষিত হয়ে পরে এবং তারা হত্যা, ধর্ষণ, অপুষ্টির শিকার হয়। নিম্নে শিশুদের সামাজিক সুরক্ষার রাষ্ট্রের ভূমিকা আলোচনা করা হলোঃ
(১) আইন প্রণয়নঃ শিশুদের সামাজিক সুরক্ষায় রাষ্ট্রের প্রধান ভূমিকা হলো যথাযথ আইন প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়ন করা। বাংলাদেশের শিশুদের সুরক্ষায় অনেকগুলো আইন আছে তার মধ্যে অন্যতম আইন হলো- প্রাথমিক শিক্ষা (বাধ্যতামূলককরণ) আইন ১৯৯০, জাতীয় শিশু সুরক্ষা নীতি ২০১১ এবং শিশু আইন ২০১৩, ২০১৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি, বাল্য বিবাহ নিরোধক আইন-২০১৭ ইত্যাদি। শিশু আইন ২০১৩ সালের অধীনে বাংলাদেশ সরকার শিশু দ্বারা অপরাধ সংঘটিত হলে বিচারাধীন অবস্থায় কিংবা অপরাধে অভিযুক্ত হলে নিরাপদ হেফাজতে রাখার বিষয়টি সর্বশেষ পন্থা হিসাবে বিবেচনা করে। এই আইনে শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা, শিশুকে সেফ হোমে রাখা। কিশোর কিশোরী সংশোধন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।
(২) খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করাঃ একটি রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধান কাজ হলো রাষ্ট্রের সকল অধিবাসীদের খাদ্য, বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা নিশ্চিত করা। যদি রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা যায় তাহলে পিতা-মাতা কর্তৃক শিশুদের সকল চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। আর প্রতিটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্রের সরকার কর্তৃক নাগরিকদের মৌলিক অধিকার পূরণ করার বাধ্য বাধকতা রয়েছে।
(৩) নিরাপত্তা নিশ্চিত করাঃ রাষ্ট্র তার সকল নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু শিশুদের নিরাপত্তার জন্য আলাদা বা স্পেশাল আইন প্রণয়ন করতে হয়, বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০৩ (সংশোধিত) প্রণায়ন করা হয়।
(৪) বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাঃ রাষ্ট্র কর্তৃক বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু যেমন শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য আলাদা নিরাপত্তা মূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী শিশুদের ভাতা দেয়া হয় এবং থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া অবিভাবকহীন শিশুদের দ্বারা ভিক্ষাবৃত্তি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।
(৫) এতিম শিশুদের জন্য মাতৃসদন স্থাপনঃ বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বিভাগীয় শহরে মাতৃসদন স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে এতিম শিশুদের ভরণ-পোষণ, লেখাপড়া, চিত্ত বিনোদন এবং কর্মমুখী কারিগরি শিক্ষা দেয়া হয়। সরকারী চাকুরীতে এতিমখানা নিবাসীদের জন্য আলাদা কোঠা রয়েছে।
পরিশেষে, শিশুদের সামাজিক সুরক্ষার রাষ্ট্রের ভূমিকা ব্যাপক। রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য বাংলাদেশে অনেকগুলো বেসরকারী এনজিও শিশুদের সামাজিক সুরক্ষার কাজ করছে। সেভ দ্যা চিলড্রেন এর মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান শিশুদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সরকার শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক আইন প্রণয়ন করেছে। দরিদ্র ও অপুষ্টিতে ভোগা প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিশুদের ফিডিং (পুষ্টিমূলক খাদ্য যেমন বিনামূল্যে বিস্কুট বিটরণ) কার্যক্রম অব্যহত রেখেছে। তাই বলা যায় যে শিশুদের সামাজিক সুরক্ষার রাষ্ট্রের ভূমিকা ব্যাপক অবদান রাখছে।
লেখকঃ শাহাদাৎ হোসাইন, এমএসএস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন