মানুষের মন ভালো চিন্তা করলেও কিছু কিছু সময় খারাপ চিন্তা উদয় হয়। খারাপ চিন্তারজন্য দায়ী নফসে আম্বারাহ (প্রতারক আত্মা)।
মানুষ মূলত খারাপ চিন্তা ভাবনা করে নফসে আম্বারাহ এর কু-মন্ত্রনা প্রলুব্ধ হয়ে। হিংসা, অনিশ্চয়তা, ভয়, আতংঙ্ক খারাপ স্বপ্ন ইত্যাদির কারণে মানুষ খারাপ চিন্তা করে। মানুষ যখন খারাপ চিন্তা করে তখন তার মাথার মস্তিষ্কের নিউরণ উত্তেজিত বা অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। ফলে মানুষ স্নায়ুবিক চাপ, মাথা ব্যথা, শারীরিক দূর্বলতা ইত্যাদি অনুভব করে।
দুশ্চিন্তার কারণঃ মানুষ বিভিন্ন কারণে দুশ্চিন্তা করতে পারে। এই দুশ্চিন্তার মধ্যে অন্যতম হলো পারিবারিক, অর্থনৈতিক, রাজণেতিক, নিরাপত্তাহীনতা, যৌন সহিংসতা, বেকারত্ব, শত্রুতা, জমি নিয়ে বিরোধে, যুদ্ধ বিগ্রহ, পরীক্ষার ভয়, অপরাধ করা ও অপরাধ প্রকাশিত হওয়ার পর শাস্তির ভয় ইত্যাদি।
দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির আমলঃ আমরা যেহেতু মুসলমান তাই সকল বিপদ আপদ থেকে আল্লাহ কাছে আশ্রয় চাই। নফসে আম্বারাহ কর্তৃক সকল কু-মন্ত্রনা থেকে মহান আল্লাহর কাছেই আ্শ্রয় চাইব। বিপদ আপদে এবং কু-মন্ত্রণা থেকে কিভাবে আশ্রয় চাইতে হবে তা মহানবী (সাঃ) আমাদেরকে শিখিয়ে গেছেন। হাদিসে এসেছে দুশ্চিন্তায় পড়লে নিচের দোয়াটি পড়তে হবে- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউযু বিকা মিন দ্বালা’য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।’ (বুখারি-২৮৯৩, মুসলিম, মিশকাত)
অর্থঃ অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে আপনার আশ্রয় চাই, অপারগতা ও অলসতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে আপনার আশ্রয় চাই আর ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকেও আপনার আশ্রয় চাই।
ইবন ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএকদিন অসুস্থ একজন বেদুঈনকে দেখতে যান। বর্ণনাকারী বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল, অসুস্থ্য রোগীকে দেখতে গেলে বলতেন, কোন দুশ্চিন্তা করবেনা, ইশাআল্লাহ পাপ হতে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। ঐ বেদুঈনকেও তিনি বললেন। চিন্তা করো না গুনাহ হতে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বেদুঈন বলল, আপনি বলেছেন গোনাহ হতে তুমি পবিত্র হয়ে যাবে। তা নয়। বরং এতো এমন এক জ্বর যা বয়োঃবৃদ্ধের উপর প্রভাব ফেলছে। তাকে কবরের সাক্ষাৎ করাবে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাই হোক। বুখারী হাদিস নং ৩৬১৬। তাছাড়া কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ তাআলা বলেছেন; আমি তোমাকে তোমার পালনকর্তার দিকে পথ দেখাব, যাতে তুমি তাকে ভয় কর।- সূরা আন-নযিআ’ত আয়াত-১৯। অন্য যায়গায় আল্লাহ বলেন; যদি আল্লাহ তোমাকে কোন কষ্ট দেন, তবে তিনি ছাড়া অন্য কেউ তা দূর করতে পারবে না; এবং যদি তিনি আপনার জন্য কোন কল্যাণ চান, কেউ তার অনুগ্রহ টলাতে পারে না . তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা কল্যাণ দান করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম করুণাময়। (সুরা : ইউনুস, আয়াত
উমার ইবনু হাফস (রহঃ) ... আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা ঘোষনা করেন, আমি সেইরূপই, যেরূপ বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে মনে মনে আমাকে স্মরণ করে আমিও তাকে নিজেস্মরণ করি। আর যদি সে লোক-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে তবে আমিও তাদের চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। যদি সে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, তবে আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই, যদি সে আমার দিকে এক হাত অগ্রসর হয়; আমি তার দিকে দু হাত অগ্রসর হই। আর সে যদি আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই। সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ৬৯০১।
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়যে, কু-মন্ত্রণা ও বিপদে আপদে ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে, আল্লাহর উপর ভরসা রাথতে হবে। একমাত্র আল্লাহর কাছেই মুক্তি চাইতে হবে। নাজাতের মালিক মহান আল্লাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন