পৃষ্ঠাসমূহ

শনিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২২

অপমানের প্রতিশোধ নিবেন যেভাবে- Sotterchaya

আমরা চলার পথে প্রায়ই অন্যের দ্বারা কটুক্তি, অপমান ও অপদস্তের শিকার হই।এতে মানুষিকভাবে ভেঙে পড়ি। অপমানের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে অনেক সময় খুনখারাবির ঘটনা ঘটে।  আমরা চাইলে অপমানের প্রতিশোধ অন্যভাবে নিতে পারি এবং সেটি হবে সবচেয়ে ভদ্র, মানান সই এবং যথাপোযুক্ত।

ঘটনা-১ঃ 
সেলিনা বেগম। গুলশানের একটি নামকরা প্রতিষ্ঠানে কর্পোরেট অফিসে চাকুরির করেন।
বিয়ে করেছেন পাঁচ বছর হয়, কিন্তু নিঃসন্তান। তার সহকর্মীরা প্রায় জিজ্ঞেস করেন বেবি (সন্তান) আসবে কবে? কিন্তু সেলিনা বেগম কোন উত্তর দিতে পারেন না। তিনি এ প্রশ্নে বিব্রত ও লজ্জাবোধ করেন। কারণ তার জানা নেই তিনি কবে সন্তান কন্সিভ করবেন। সহকর্মীরা যে মাঝেমধ্যে ইচ্ছা করেই এই প্রশ্ন করেন তা সেলিনা বেগম সহজে বুঝতে পারেন। তারা মনে হয় মানুষকে লজ্জা ও ছোট করে পৈশাচিক আনন্দ পায়। অথচ বিয়ের পর পরই সেলিনা-হাসিব বেগম দম্পত্তি চেষ্টা করছেন সন্তান নেওয়া জন্য, কিন্তু কিছুতেই সন্তান নিতে পারছেন না। তারা উভয়েই দেশে এই বিষয়ে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ  কয়েকজন ডাক্তার দেখিয়েছেন। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি। এখন ভাবছেন ইন্ডিয়া যাবেন ডাক্তার দেখাতে। 

ঘটনা-২ঃ
হাসিনা বেগম। একটি হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরী করেন। টিচার হিসেবে বেশ সুনাম আছে। কিন্তু হাসিনা বেগমের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা ফেস (মোকাবেলা) করছেন। ছাত্র অবস্থায় তার একটি ছেলের সাথে বিয়ে হয়। তাদের সংসার ভালোই চলছিল, কিন্তু হঠাৎ তার স্বামী সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। তারপর স্বামী বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি এসে পুনরায় লেখাপড়ায় মন দেন। সেখান থেকে অনেক কষ্ট করে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন। কিন্তু বিয়ের বাজারে তিনি ২য় বার পিছে পড়ে যান। তার শরীল কিছুটা খাটো এবং চেহারায় কালশিটে ভাব আছে। বর্তমানে বিয়ের যে অফারগুলো আসে তার ম্যাক্সিমাম- হয় লোকটি ষাটোর্ধ অথবা নেশাগ্রস্ত। এমন অবস্থায় তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভালো বর না পাওয়া পর্যন্ত  বিয়ে করবেন না। কিন্তু বিয়ে না হওয়া নিয়ে সহকর্মী, আত্মীয়স্বজন এবং পরিচিত জনদের কাছ থেকে প্রায়ই নানান কথা শুনতে হয়। সম-বয়েসি কেউ দেখা হলে জিজ্ঞেস করে, কিরে বিয়ে করেছিস কবে? স্কুলের অন্য শিক্ষকরা এক হলে স্বামী, সন্তান, সংসার নিয়ে গাল গল্প করে, তাদের বাবুটা মুত্র বিসর্জণ করতে গিয়ে হাগু করে দেয় সেই গল্প করতেও ছাড়েন না। নানান কিসিমের গল্পের ফাঁকে প্রশ্ন করে বসেন, হাসিনা  ম্যাডামের খবর কি? সংসার পাতছেন কবে? এতো টাকা ইনকাম করে কি করবেন? এই অবান্তর প্রশ্ন  যে তারা ইচ্ছা করেই করে হাসিনা বেগম তা সহজে বুঝতে পারেন। তারপরও চুপ করে থাকে। আসলে এই সমাজে চুপ করা থাকা ছাড়া দ্বিতীয় কোন উপায় নেই। কারণ সমাজের মানুষগুলো নিজেদেরটা থেকে অন্যজনের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু তারা কেন এমন করে? কি মজা পায় অন্যের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে! হাসিনা বেগমের কাছে বিষয়টি অজানা।

ঘটনা-৩
জনাব সোহান সাহেব, অবসর জীবনে প্রবেশ করে  সদ্য রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন। পেশাগত জীবনে ছিলেন একজন জানু ও নামকরা ব্যাংকার। কিন্তু তার বাবা ছিলেন একজন ট্রাক ড্রাইভার। তার বাবা মারা গেছেন প্রায় ২০ বছর হয়। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং দলের প্রতিদ্বন্দীরা প্রায় তার অগোচরে তার বাবার পেশা নিয়ে প্রায়ই কথা বলেন। তারা বলেন, ড্রাইভারের বাচ্ছা এসেছে রাজনৈতিক পদ-পদবি নিতে। এইতো সেদিন তার বাবা ট্রাক চালিয়েছে, সে না হয় ব্যাংকে চাকুরী করেছে। একদিন তো একজন বলেই ফেলল, সোহান সাহেব আপনার বাবা তো আমাদের ভাড়া টেনেছেন। সোহান সাহেব প্রতি উত্তরে কিছু বলেন না, মুচকি মুচকি হাসেন, আর ভাবেন আপনার সন্তানদের জন্য আমার করুণা হয়, কারণ আপনি কিছুই করছেন না, মানুষ আপনার সন্তানদের বাদাম্মার ছেলে বলবে। সোহান সাহেব জানেন অন্যরা যখন সুবিধা করতে না পারে তখন তারা এসমস্ত কথা বলেন। ব্যাংক জীবনে এরকম অনেক দেখেছি। প্রথমে চিটংপটং করছে, তারপর আমি যখন ক্যারিয়ার তরতর করে উন্নতি করতে লাগলাম তখন তারা পিছে পড়ে গেল। শেষমেশ তারা আমার রুমে আমার অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করত, স্যার স্যার করে তেলবাজি করত। আজকে রাজনৈতিক জীবনে আমার পিছনে মানুষের গণ জোয়ার দেখে তারা এমনটা করছে। সামনের ইলেকশনে সংসদ নির্বাচিত হলে তারাও এমনটা করবে। আসলে তাদের ব্যক্তি জীবন নিয়ে গর্ব করার মতো কিছু নাই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে তাদের চুলার ভিতর বিড়াল ঘুমাতো, এবং তাদের তিন পুরুষ পূর্ববর্তী কারো নাম তারা বলতে পারবেনা। আর এই সমস্ত মানুষের স্বভাবটাই এরকম, পিছে সমালোচনা করা।

উপরোক্ত যে ঘটনাগুলো বললাম তা কিন্তু মোটামুটি শিক্ষিত এবং অভিজাত শ্রেণির ঘটনা। সাধারণ মানুষের কথা নাই বললাম।

এখন প্রশ্ন হলো কিভাবে অপমানের জবাব দিবেন? আপমানের জবাব দিতে পারবে যদি-

১। প্রথমত ভাবতে হবে যারা অন্যকে ছোট করে পৈশাচিক আনন্দ পায় তারা স্বভাবতই ছোট লোক ও ছোট মন-মানুষিকতা পোষণ করে থাকেন। সুতরাং তাদের সাথে তর্ক করতে যাবেন না। আপনি যে প্রতিজ্ঞা এবং লক্ষ্য  নিয়ে কাজ করছেন তা বাস্তবায়ন করুণ। একদিন দেখবেন তারাই আপনার সামনে এসে দাঁড়াবে, আপনার সাহায্য কামনা করবে। আর ঠিক তখনই অপমানের প্রতিশোধ বা বদলাটা হয়ে যাবে।

২। অন্যজন আপনার যতই সমালোচনার করুক না কেন আপনি শান্ত থাকুন। আপনি ভালো কাজ করছেন বলেই অন্যরা আপনার সমালোচনা করছেন। সমালোচনা হজম করতে শিখুন। সমালোচনাকে পাত্তা না দিয়ে লক্ষ্যে পৌছান। 

৩। কাজে মনোযোগী হউন। অন্যরা যখন সমালোচনায় ব্যস্ত ঠিক সে সময় আপনি কাজ করুণ। কাজ করলে আপনি এগিয়ে যেতে পারবেন। ফলে অন্যরা পিছিয়ে পড়বে। 


৪। যারা আপনার সমালোচনা করেছে তাদের উপর প্রতিশোধ নিতে যাবেন না। আপনি আপনার  লক্ষ্যে পৌঁছে গেলে এটাই বড় প্রতিশোধ। 

৫। কথা বলুন হাসিমুখে। অন্যরা যখন আপনাকে ছোট করে কথা বলবে তখন আপনি তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলুন। এতে পরিবেশ পরিস্থিতি আপনার অনুকূলে আসবে। আসেপাশের মানুষ আপনাকে সমর্থন ও বাহবা দিবে। 

৬। পরিবার, বাবার পেশা নিয়ে কথা উঠলে কখনো লজ্জিত হবেন না। আমার দয়াল নবীজি ছিলেন মেষপালক, অথচ পৃথিবীতে প্রায় দুইশো কোটি মানুষ তাকে অনুসরণ করে। বাবা মায়ের জন্য দোয়া করুণ। কারণ তাদের সমর্থণ না পেলে এতো দূর পর্যন্ত আসতে পারতেন না। বাবা মা যেটা করেছে এটা তাদের কর্ম, আপনি আপনার কর্ম করেছেন।

পরিশেষে, অপমানের প্রতিশোধ নিতে হলে মনকে শান্ত রাখুন, উত্তেজনা পরিহার করুণ। ইতিবাচক মন মানুষিকতা ধরে রেখে সামনে এগিয়ে যান। অহেতুক তর্ক করতে যাবেন না। আপনি লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারলে আপনার পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আপনার প্রতিশোধ নেয়া হয়ে যাবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন