পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২

মিথ্যা কথা কাকে বলে, মিথ্যার কারণ, প্রকারভেদ, মিথ্যা নির্ণয় পদ্ধতি, মিথ্যার ভবিষ্যৎ এবং মিথ্যা প্রচারের মাধ্যম সমূহ- Sotterchaya

মিথ্যা কথাঃ মানুষ যখন একটি ঘটনা, কাজ এবং বাক্যের বাস্তব অবস্থাকে অস্বীকার করে সেই ঘটনা, কাজ বা বাক্যের প্রকৃত অবস্থার বিপরীতমুখী প্রচার করে তখন তাকে মিথ্যা বা মিথ্যা কথা বলে।

মিথার প্রকারভেদঃ মিথ্যা কথা সাধারণত তিন প্রকার, যথাঃ (ক) আংশিক মিথ্যা, (খ) সম্পূর্ণ মিথ্যা (গ) রুপক মিথ্যা।

(ক) আংশিক মিথ্যাঃ আংশিক মিথ্যা হলো কোন ঘটনার একটি সত্য অংশের সাথে মিথ্যা মিশ্রিত করে সম্পূর্ণ ঘটনা প্রচার করা। অপরকে দোষী সাব্যস্ত করতে, কোন ঘটনায় নিজের ক্রেডিট নিতে কিংবা অপরকে বাঁচানোর জন্য এই ধরণের মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়।

(খ) সম্পূর্ণ মিথ্যাঃ এই মিথ্যা দ্বারা কোন ঘটনা, কাজ, বচনকে সম্পূর্ণরুপে অস্বীকার করা। ফৌজধারী এবং জমি সংক্রান্ত অপরাধ ও মামলার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়।

(গ) রুপক মিথ্যাঃ এই মিথ্যা দ্বারা কোন ঘটনা, কাজ এবং বাক্যকে রুপক অর্থৈ (কৌশলগত বাক্য প্রয়োগে) অস্বীকার করা হয়। রুপক মিথ্যা প্রত্যয়টি কূটনৈতিক পাড়ায় বহুল ব্যবহৃত হয়।

কারা বেশি মিথ্যা বলে?

সব বয়েসি মানুষই কম বেশি মিথ্যা বলে। সবচেয়ে বেশি মিথ্যা বলে প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তিরা। পেশাগতভাবে সবচেয়ে মিথ্যা বলে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা, তারপর উকিলরা, তারপর পুলিশরা। আর সবচেয়ে কম মিথ্যা বলে ডাক্তারগণ। স্বামীরা স্ত্রীদের কাছে প্রায়ই মিথ্যা বলে। স্ত্রীরা স্বামীদের কাছে তাদের অতীত নিয়ে কথা বলতে চাননা, চাইলেও ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেন অর্থাৎ রুপক কথা বলেন। শিশুরা অনেক কম মিথ্যা বলেন, আর ছোটরা তুলণামূলক বড়দের কাছে বেশি মিথ্যা কথা বলে।

মিথ্যা বলার কারণ? 

মানুষ বিভিন্ন কারণে মিথ্যা বলে। মিথ্যার বলার অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষা, পারিপার্শ্বিক চাপ, শাস্তির ভয়, সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা, চরিত্রের কলুষিতা না করা, লোভ সংবরণ করতে না পারা, অপরকে ফাঁসানো ইত্যাদি। 

কোথায় মিথ্যার চর্চা বেশি হয়? সব যায়গাতেই মিথ্যার চর্চা হয়, কোথাও বেশি কোথাও কম। মানুষ মনে করে আদালতে মিথ্যার চর্চা হয় বেশি, আর কম হয় প্রার্থণা ঘরে। তাছাড়া অফিসে, টিকেট কাউন্টারে, পুলিশের রিমান্ডে, সংসদ ভনেন, নিয়োগ এজেন্সিতে, পণ্যের বিজ্ঞাপনে এবং হকারদের দ্বারা প্রচুর পরিমাণ মিথ্যা কথার চর্চা হয়।

কিভাবে মিথ্যা নির্ণয় করবেন?

মিথ্যা নির্ণয় করার কতগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি আছে, তার মধ্যে দেহের অঙ্গভঙ্গি, চোখের ইশারা, কথা প্রকাশ করার ধরণ, কথা উপস্থাপন করার ধরণ, উপস্থাপনকারী আত্মবিশ্বাস, ঘটনা সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ জানানো,  শ্বাস প্রশ্বাসের গতি, স্বাক্ষীর অভাব, একই কথা বারবার বলা, মূল ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া, প্রতিপক্ষকে প্রমাণ ছাড়া দোষী সাবস্ত করা, ঘটনার পক্ষে সাফাই গাওয়া  ইত্যাদি।

মিথ্যা ধরার আধুনিক যন্ত্র (লাই ডিটেক্টর) কি আবিষ্কার হয়েছে? ই

ইতিমধ্যে মিথ্যা ধরার যন্ত্র অনেকে আবিস্কার করেছেন, বহুল ব্যবহৃত যন্ত্রটির নাম হচ্ছে "এ্যানালগ পলিগ্রাফ"। অনেক বিজ্ঞানী বিভিন্ন মেথড সামনে নিয়ে আসছেন। তার মধ্যে, এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) মেশিন, আইডিটেক্ট , ভ্রু এবং ঠোঁট সঞ্চালনের অভিক্ষেপ ইত্যাদি ইত্যাদি।

মিথ্যাবাদী নিয়ে বাস্তব ধারণা কি? 

মিথ্যাবাদীকে কেউ পছন্দ করেন না, আর মিথ্যা বাদীকে কেউ বিশ্বাস করতে চায়না। আমরা ছোট বেলায় মিথ্যাবাদী রাখাল গল্প পড়েছিলাম। এই রাখাল একাধিক বার বাঘ আসার চিৎকার করে মানুষকে বোকা বানিয়েছিলো, পরবর্তীতে সত্যি সত্যি বাঘ আসলেও মানুষ তার চিৎকার বিশ্বাস করেনি। ফলশ্রুতিতে সে রাখাল বাঘের পেটে চালান হয়েছিলো। বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাদের কথা মানুষ সহজে বিশ্বাস করেনা। রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য মানুষ সন্দেহ আর আবিশ্বাস চোখে দেখে। তার কারণ হলো রাজনৈতিক ব্যক্তিরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় এবং যেকোন ঘটনা আয়ত্ত্বে রাখার জন্য ঘটনার উল্টোটা প্রকাশ করে। ধর্মীয় গ্রন্থে মিথ্যা বলতে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মিথ্যা বলার জন্য কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। তারপরেও অনেকে মিথ্যা বলেন। কারো কাছে মিথ্যা বলা এক ধরণের আর্ট বা শিল্প চর্চা। যুদ্ধের ময়দানে মিথ্যার মাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বিপক্ষ দললে মানুষিকভাবে দুর্বল করে দেয়া যায় এবং জনমত গঠণে ভূমিকা রাখে। 

মিথ্যা প্রচারের মাধ্যম কি? 

মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমগুলো হলো, ব্যক্তিগত উদ্যোগ, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ।

মিথ্যা প্রচারের মাধ্যম কি?

বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার করা যায়, ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে, সমাজ থেকে সমাজে এবং রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রতে। আধুনিক কালে মিথ্যা প্রচারের জন্য প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।

মিথ্যার ভবিষ্যত কি? মিথ্যার কো ভবিষ্যৎ নেই। মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে আপাতত ঘটনা ধামাচাপা দিতে পারলে ভবিষ্যতে তা প্রকাশিত হয়ে যায়। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যে যে মিথ্যা ছড়ানো তা প্রকাশ পেতে কিছুটা সময় লাগে। আবার অনেক মিথ্যা তদন্ত এবং গবেষণার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। 

মিথ্যা প্রতিরোধের উপায় কি?

মানুব জাতি থেকে মিথ্যা সম্পূর্ণ দূর অনেক কঠিন এবং অসম্ভব। তবে চাইলে মিথ্যাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মিথ্যা নিয়ন্ত্রণে দুটি পদ্ধতি রয়েছে- এক. প্রযুক্তি ব্যবহার করে, দুই. মানুষকে নৈতিক চরিত্রে চরিত্রবান করে। প্রযুক্তির মাধ্যমগুলো হলো কম্পিউটার এলগরিদম পদ্ধতি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পদ্ধতি, এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং) মেশিন, আইডিটেক্ট , ভ্রু এবং ঠোঁট সঞ্চালনের অভিক্ষেপ এবং সিসি ক্যামেরা স্থাপন, স্যাটেলাইট দ্বারা পর্যবেক্ষণ, 

পরিশেষে, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে মিথ্যা পরিহার করা উচিত। মিথ্যার কারণে অনেক সময় নির্দোষ ব্যক্তিরাও সাজা পান। মিথ্যা একটি সত্য ঘটনার বাস্তব ফলকে মুহুর্তেই উল্টিয়ে দিতে পারে। তাই মিথ্যাকে না বলুন।







এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন