পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২

বারোটি খারাপ চিহ্ন বা প্রতীক যা আমাদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।


প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ যোগাযোগ করার জন্য বিভিন্ন চিহ্ন বা প্রতীক ব্যবহার করে আসছে। এই চিহ্ন বা প্রতীকগুলো আমাদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।বর্তমানকালে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ কালে তাদের সাজোয়াযানে জেড (Z) চিহ্ন ব্যবহার করছে। সামরিক বাহিনীতে প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহারের এই রীতি সেই প্রাচীনকাল থেকে বিদ্যমান। আজকে এমন বারোটি খারাপ চিহ্ন বা প্রতীক নিয়ে আলোচনা করব যা আমাদের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে সামাজিক জীবনেও ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

১। তালিকায় এক নাম্বারে থাকা এই চিহ্নটি  খারাপ প্রতীক (Bad sign) বা ফাক চিহ্ন (Fuck Sign) বা ফিঙ্গারিং চিহ্ন হিসেবে পরিচিত। অনেকে এই চিহ্নটিকে ধর্ষণের চিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করেন। কাউকে খারাপ বা অশুভ ইঙ্গিত করতে এই চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। হাতের তর্জণী আঙ্গুলের এই ইশারা প্রদর্শণ মানে 'আমি তোমার অনিষ্টা বা খারাপ করতে চাই। তোমার চরিত্রে কলংঙ্ক লেপন করতে চাই। তোমার ভালো কাজকে খারাপের দিকে ধাবিত করতে চাই। তোমার সাথে অবৈধ মেলামেশা করতে চাই ইত্যাদি ইত্যাদি। মানব শরীর দ্বারা যতগুলো খারাপ ইঙ্গিত করা যায় তারমধ্যে ফাক চিহ্ন তালিকায় সবার উপরে থাকবে।
চিত্রঃ তর্জণী আঙ্গলের ইশারায় ফাক (Fuck)  চিহ্ন বা ফিঙ্গারিং চিহ্ন।

২। নিচের প্রতীক বা চিহ্নটি 'টপাটপ' চিহ্ন হিসেবে পরিচিত। যখন কেউ ব্যাপক আক্রমণের শিকার হবে, বা কেউ  উত্তেজনার আগুনে জ্বলবে, অথবা কেউ ব্যাপক শারীরিক সম্পর্কের মুখামুখি হবে, এই রকম বুঝাতে হাতের ইশারায় 'টপাটপ' প্রতীক বা চিহ্নটি ব্যবহার করা হয়। এই চিহ্ন দ্বারা এটাই বুঝানো হয় যে, একদম সাইজ করে দিবে। মাটির সাথে মিশিয়ে দিবে। জায়গায় খাইয়া দিবে। অথবা কোন কথা হবে না, শুধু মাইর হবে, সাব্বাস কিরকিরা ইত্যাদি ইত্যাদি। 


চিত্রঃ টপাটপ অঙ্গভঙ্গি।

৩। তিন নব্বরে  চিত্রটি সাধারণত জলদস্যুরা ব্যবহার করে থাকে। এই চিত্রটিকে সাইন অব পাইরেটস বলা হয়  (The skull and crossbones symbol on a black flag — was used during the 1710s by a number of pirate captains including Black Sam Bellamy, Edward England, and John Taylor- ‍সূত্র: ইউকিপিডিয়া) ।  

মরুভূমি বা গভীর সাগরে ভাসমান জাহাজে পাইরেটস অব সাইন সম্বলিত পতাকা দেখা মানে আপনি জলদস্যুদের দ্বারা সম্ভাব্য  আক্রমণের শিকার হতে যাচ্ছেন, যেখানে আপনার ভাগ্য কেবল জলদস্যুদের হাতেই নির্ধারিত থাকবে। আপনাকে হয় নিহত অথবা তাদের  কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হবে।

চিত্রঃ জলদস্যুদের চিহ্ন বা প্রতীক ( সাইন অব পাইরেটস)

৪। আমরা যারা শহরে বসবাস করি তারা ইর্মাজেন্সি এক্সিট বা জরুরী বর্হিমণ চিত্রের সাথে অতি পরিচিত। ইর্মাজেন্সি এক্সিট বা জরুরী বর্হিগমণ চিত্র দ্বারা বুঝায় ভবনে আগুণ লাগলে এই পথ বা দরজা দিয়ে তারাতাড়ি বের হতে হবে। জরুরী মহুর্তে তারাতাড়ি বের হওয়ার নির্দেশাবলিত প্রতীককে জরুরী বর্হিগমণ বা Emergency Exit সাইন বলে।


চিত্রঃ জরুরী বর্হিগমণ প্রতীক।

৫। চিত্রে একটি নিষিদ্ধ প্রতীক (Ban symbol) দেখানো হয়েছে। নির্দিষ্ট এলাকায় নির্দিষ্ট বিষয়ের উপর আরোপিত বিধিনিষেধ সম্বলিত সাইনবোর্ড 'নিষদ্ধ প্রতীক বা ব্যান সাইন (Ban sign) বলে। কোথাও ব্যান সাইন দেখা মানে এখানে আপনাকে কিছু বিধি নিষেধ মানতে হবে। যেমন এখানে পার্কি করা নিষেধ, এখানে পানের পিক ফালোনা নিষেধ। এখানে জোতা রাখা নিষেধ। এখানে ছবি তোলা নিষেধ, এখানে মদপান করা নিষেধ, এখানে ধূমপান করা নিষেধ ইত্যাদি ইত্যাদি। 
চিত্রঃ নিষিদ্ধ বা ব্যান সাইন

৬। ধর্মীয় সীমিতকরণ প্রতীক বা রিলিজিয়ন নিউট্রলাইজ সাইন বলতে এমন চিত্রকে নির্দেশ করে যেখানে ব্যবহারিক ধর্ম পালন করা সীমিত করা হয়েছে। কোথাও ধর্মীয় সীমিতকরণ প্রতীক  দেখলে বুঝতে হবে এখানে ধর্মীয় কর্মকান্ড নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এখানে প্র্যাকটিক্যাল ধর্ম পালন থেকে বিরত থাকতে হবে, অথবা ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রকাশ করা যাবেনা, বা এখানে ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ। অথবা এখানে সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে কোন ধর্মীকে সুপিরিয়র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা। এই ধরণের চিহ্ন পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যক  যায়গায় সাঁটানো রয়েছে। সুতরা এই নিয়ে অতিরিক্ত টেনশন করার কিছু নেই। আপনি ধর্মভীরু হলে মনের সুখে ধর্ম পালন করুণ।
চিত্রঃ ধর্মীয় সীমিতকরণ চিহ্ন।

৭। সাত নং চিত্রটি ডোন্ট’স সাইন। একটি  কোন নির্দিষ্ট সংখ্যক কাজ থেকে বিরত রাখতে অথবা নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রশ্নের ভুল উত্তর দিলে ডোন্ট’স সাইন ('ভুল উত্তর') প্রতীক ব্যবহার করা হয়। ছাত্রছাত্রীরা ভুল উত্তর বাছাই করলে অথবা ভুল উত্তর দিলে পরীক্ষকরা 'ডোন্ট’স সাইন' (ভুল প্রতীক) ব্যবহার করেন। ডিজিটাল মাধ্যমে কোন ভুলের ফলাফল প্রদর্শন করতে  ডোন্ট’স সাইন ব্যবহার করা হয়। সুতরাং ভুলভাল উত্তর দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

চিত্রঃ ডোন্ট’স সাইন।

৮। হাহা রিয়েক্ট। এই চিত্রটি ইদানিংকালে ব্যাপক আলোচিত এবং সমালোচিত হচ্ছে। ফেসবুকে হাহা রিয়েক্ট দেওয়ার কারণে বাংলাদেশে অনেক জায়গায় খুন খারাবি সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক নেটিজেন এই চিত্রটি ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করছেন। হাহা রিয়েক্টি দিয়ে নেটিজেনরা কোন কাজকে অবজ্ঞা, তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য অর্থে ব্যবহার করে। দর্শক বা শ্রোতা যখন বক্তার সাথে একমত না হতে পারে কিংবা বক্তার কাজকে অবজ্ঞা, অবহেলা করে তখন হাহা রিয়েক্ট দিয়ে প্রতিবাদ স্বরুপ সেটি  জানানো হয়।

চিত্রঃ হাহা রিয়েক্ট।



৯।  সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কিছু অপছন্দ করা অর্থে ডিজ লাইক বাটন বা ইমোজি চাপা হয়। ফেসবুক অন্যান্য ও অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ডিস লাইক বাটনের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে।

চিত্রঃ ডিজ লাইক বাটন।

১০। কাকের বা কাউয়ার প্রতীককে  অশুভ প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।  ভারতীয় উপমহাদেশে যাত্রাপথে বা যাত্রার শুরুতে কেউ যদি কাক বা কাকের  চিহ্ন দেখে তাহলে সে ভাবে তার দিনটি আজ খারাপ যাবে। কাক বা কাউয়া বাংলাদেশে গালি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষেত্রে; যেমন কাউয়া কাদের।

চিত্রঃ কাকের প্রতীক।

১১। এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, রাষ্ট্রীয় জরুরী যোগাযোগের প্রতীক হিসেবে ফায়ার এর্লামিং বাজানো হয় এবং ফায়ার এর্লামিং সাইনটি দ্বারা জনগণকে সাবধানে চলাচল ও নিরাপদে থাকতে বলা হয়।


চিত্রঃ ফায়ার এর্লামিং সাইন।


১২।  সম্পর্কের অবনতি,  বিবাহ বিচ্ছেদ, প্রেমিক-প্রেমিকার ছাড়াছাড়ি, প্রিয়জনকে হারানো, মনের মানুষ অন্য কারো হওয়াকে বুঝাতে হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ বা  হার্টব্রোকেন সাইন ব্যবহার করা হয়। আমাদের বাংলাদেশে ঊনিশো নব্বই দশকে এই চিহ্নের ব্যাপক প্রচলন ছিলো। 

চিত্রঃ হার্টব্রোকেন সাইন।

পরিশেষে, খারাপ চিহ্ন বা প্রতীক আপনি কিভাবে নিবেন সেটা আপনার পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে। তবে যেখান খারাপ প্রতীক বা চিহ্ন দেখবে সেখানে মনকে স্থির রেখে সিদ্ধান্ত নিবেন। এতে করে আপনার মঙ্গল হবে। 


এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন