পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২

শ্রমিক ছাঁটাই কাকে বলে? শ্রমিক ছাঁটাই এর কারণ ও প্রতিকার- Sotterchaya

বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। বাংলাদেশে প্রচুর কর্মক্ষম তরুণ জণশক্তি রয়েছে যারা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করে।


অনেক তরুণের কর্ম-সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বেকার জীবন যাপন করছে পর্যান্ত নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের অভাবে। বাংলাদেশে খুব সহজে সস্তা শ্রমিক পাওয়া যায়, যারা উচ্চ শিক্ষিত এবং যাদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিলে একজন দক্ষ কর্মী হয়ে উঠবে। কিন্তু যে দেশে সস্তা শ্রম পাওয়া যায় সেদেশে সহজে শ্রমিক ছাঁটাই হবে এটাই স্বাভাবিক। যদিও বাংলাদেশে শ্রম আইন-২০০৬ নামে একটি আইন আছে, যেখানে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের একটি নির্দিষ্ট কারণ এবং কতগুলো পদ্ধতি কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মালিকপক্ষ কর্তৃক শ্রমিক ছাঁটাইয়ে উক্ত আইন যথাযথ বাস্তবায়ন হয় কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। আবার অনেক শ্রমিক জানেই না ছাঁটাই হল তিনি কি কি প্রাপ্য হবেন।

শ্রমিক ছাঁটাই কাকে বলে?

কোন শ্রমিককে প্রয়োজন অতিরিক্ততার কারণে বা অন্য কোন কারণে শ্রম আইন অনুযায়ী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্য সুবিদাধী দিয়ে যখন কর্ম থেকে বিচ্যুৎ করা হয় তখন তাকে শ্রমিক ছাঁটাই বলে।

শ্রমিক বিভিন্ন কারণে ছাঁটাই হতে পারে, যেমন; প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত হলে, শ্রমিকের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের গুরুতর অপরাধ প্রমাণিত হলে। প্রতিষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, রাষ্ট্র বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকলে, জঙ্গি অর্থায়ণ করলে। এক নাগারে কর্মস্থলে বিনা নোটিশে অনেক দিন অনুপস্থিত থাকলে। চেইন অব কমান্ড অমান্য করলে। শিল্প প্রতিষ্ঠান কাজের যোগান দিতে না পারলে, প্রতিষ্ঠান বেতন দিতে অক্ষম হলে। প্রতিষ্ঠানের সম্পদ আত্মসাধ করলে ইত্যাদি ইত্যাদি। উপরে উল্লেখিত কারণগুলোর কারণে বরখাস্ত হওয়ার ঘটনা বেশি। এখানে জানতে হবে বরখাস্ত আর ছাঁটাই এক নয়। বরখাস্ত তখন করা হয় যখন শ্রমিকের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠে এবং সে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তবে অভিযোগ উঠা কালীন সময়ে শ্রমিককে অস্থায়ী বা সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আর বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ৪২নং আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে শ্রমিক ছাঁটাইয়েত একটি মাত্র কারণের কথা বলা হয়েছে তা হলো- “কোন শ্রমিককে প্রয়োজন অতিরিক্ততার কারণে কোন প্রতিষ্ঠান হইতে ছাঁটাই করা যাইবে।”। বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিক আইন মেনে চললেও অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারী মানের প্রতিষ্ঠান কোন কোন ক্ষেত্রে শ্রম আইন বাস্তবায়নে অনীহা দেখায়। হোটেল, গার্মেন্টস, ডায়গনিষ্টিক সেন্টার, শোরুম, ক্ষুদ্র ও মাঝারী কলকারখানা, ফার্নিচারের কারখানা, কাপড়ের দোকান, ঔষুদের দোকান, মুদি দোকানে শ্রমিক আইন বাস্তবায়ন হয় না বললেই চলে।

ছাঁটাই করার কারণ যা হউক না কেন তা মালিকপক্ষকে তা সুর্নিদিষ্ট করতে হবে। ছাঁটাই প্রক্রিয়া বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ অনুযায়ী অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।ছাটাই করার ফলে শ্রমিক তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কিনা তা মালিক পক্ষকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ ছাঁটাইয়ের পদ্ধতি ও শ্রমিকের প্রাপ্ত সুবিদাধিঃ বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের একটি কারণ কয়েকটি পদ্ধতির কথা নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেছে। যেখানে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের কারণ হিসেবে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত, এবং ধাপ ও নিয়ম হিসেবে শ্রমিককে এক বছর অবিছিন্নভাবে চাকুরীর শর্ত আরোপ করেছে। সেক্ষেত্রে, মালিকপক্ষকে নোটিশ অথবা নোটিশের পরিবর্তে মজুরী, গ্রাচ্যুইটি দিতে বলা হয়েছে। ছাঁটাইকরণ আইনটি দেখে নিনঃ

“( ২০০৬ সনের ৪২ নং আইন )

বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬

দ্বিতীয় অধ্যায়

নিয়োগ ও চাকুরীর শর্তাবলী

২০। (১) কোন শ্রমিককে প্রয়োজন অতিরিক্ততার কারণে কোন প্রতিষ্ঠান হইতে ছাঁটাই করা যাইবে।

 (২) কোন শ্রমিক যদি কোন মালিকের অধীনে অবিচ্ছিন্নভাবে অনূ্যন এক বৎসর চাকুরীতে নিয়োজিত থাকেন, তাহা হইলে তাহার ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে মালিককে-

 (ক) তাহার ছাঁটাইয়ের কারণ উল্লেখ করিয়া এক মাসের লিখিত নোটিশ দিতে হইবে, অথবা নোটিশ মেয়াদের জন্য নোটিশের পরিবর্তে মজুরী প্রদান করিতে হইবে;

 (খ) নোটিশের একটি কপি প্রধান পরিদর্শক অথবা তৎকর্তৃক নির্ধারিত কোন কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করিতে হইবে, এবং আরেকটি কপি প্রতিষ্ঠানের যৌথ দর কষাকষি প্রতিনিধিকে, যদি থাকে, দিতে হইবে; এবং

 (গ) তাহাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ তাহার প্রত্যেক বৎসর চাকুরীর জন্য ত্রিশ দিনের মজুরী বা গ্রাচু্যইটি যদি প্রদেয় হয়, যাহা অধিক হইবে, প্রদান করিতে হইবে।

 (৩) উপ-ধারা (২) এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, ধারা ১৬(৭) এর অধীন ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে উপ-ধারা (২) (ক) এর উল্লিখিত কোন নোটিশের প্রয়োজন হইবে না, তবে ছাঁটাইকৃত শ্রমিককে উপ-ধারা (২) (গ) মোতাবেক প্রদেয় ক্ষতিপূরণ বা গ্রাচ্যুইটির অতিরিক্ত হিসাবে আরোও পনের দিনের মজুরী দিতে হইবে।

(৪) যে ক্ষেত্রে কোন বিশেষ শ্রেণীর শ্রমিককে ছাঁটাই করার প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে, মালিক এবং শ্রমিকের মধ্যে এতদসংক্রান্ত কোন চুক্তির অবর্তমানে, মালিক উক্ত শ্রেণীর শ্রমিকগণের মধ্যে সর্বশেষে নিযুক্ত শ্রমিককে ছাঁটাই করিবেন।”

এই আইন থেকে একজন শ্রমিক ছাঁটাই বা বরখাস্ত হলে- (ক) প্রত্যেক সম্পূর্ণ বৎসর অর্থাৎ পাঁচ বছর চাকুরী করলে পাঁচ মাসের সমপরিমাণ বেতনের টাকা/গ্রাচ্যুইটি পাইবেন। যেটির (বেতন বা গ্রাচ্যুইটি)পরিমাণ বেশি হয় মালিকপক্ষ সেটি প্রদান করিবেন। ইহা ছাড়াও চলতি মাসের বেতন এবং ওভারটাম, সাভির্স বেনিফিট, অজির্ত ছুটির টাকা, কোন পূর্ব নোটিশ ছাড়া ছাটাই করলে, আইন অনুসারে নোটিশ মেয়াদের জন্য মজুরী প্রদান ইত্যাদি।

শ্রকিম প্রাপ্য টাকা না পাইলে কি করবে?

একজন শ্রমিক যদি মনে করে কোম্পানী কর্তৃক ছাঁটাইয়ের কারণে তিনি প্রাপ্ত টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে তাহলে তিনি শ্রম আদালত ও আপিল ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীতে সাতটি শ্রম আপিল আদালত রয়েছে। তবে বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে একজন শ্রমিক আদলতে মামলা করে সেই বিচার পেতে দীর্ঘদিন সময় লাগবে।আইনি ঝামেলা ও আর্থিক সংস্থাপনের অভাবে অনেক শ্রমিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন যেনেও আদালতে যেতে চান না।

শ্রমিক ছাঁটাই নোটিশের নমুনাঃ নিম্নে শ্রমিক ছাঁটাই নোটিশ এর একটি নমুনা দেয়া হলোঃ-

সূত্রঃ কখগ…….        তারিখঃ০৫/১০/২০২২                                              

মোঃ হাসিবুর রহমান
ড্রাইভার,
হাসেম মিয়া এন্ড কোম্পানী লিমিটেড,
২৫৭, গুলশান এভিনিউ,
গুলশান-১, ঢাকা-১২১২।
 

বিষয়ঃ ছাঁটাই প্রসঙ্গে।

এতদ্বারা অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ততার কারণে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ইং এর ২০(১) ধারার সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী আপনাকে ছাঁটাই করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হইয়াছে। যাহা আগামী ২৭শে ডিসেম্বর ২০২২ইং তারিখে কার্যকর বলিয়া গণ্য হইবে।

উল্লেখিত যে, আপনি শ্রম আইনের বিধান অনুযায়ী আইনানুগ সকল পাওনাদি আইনের বিধানমতে যথানিয়মে ও যথাসময়ে প্রাপ্র হইবেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ইং এর ২১ ধারার বিধানমতে পরবর্তী বিভাগের নিয়োগের ক্ষেত্রে আপনি অগ্রাধিকার পাইবেন।

হাসেম মিয়া এন্ড কোম্পানী লিমিটেড এর পক্ষে,


---------------------------------
শুক্কুর আলী
ব্যবস্থাপক,
মানব সম্পদ ও প্রশাসন
 
অনুলিপিঃ
০১। মাননীয় যুগ্ম শ্রম পরিচালক, ঢাকা।
০২। মাননীয় উপ-মহা পরিদর্শক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর, ঢাকা।
০৩। ডিসি সিটি এসবি, সিএমপি, ঢাকা।
০৪। অফিসার ইনচার্জ, ---- থানা। 
০৫। নোটিশ বোর্ড।
০৬। ব্যক্তিগত নথি।
০৭। অফিস কপি।

শেষকথাঃ মালিক শ্রমিকদের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ আচরণই কাম্য। কোন শ্রমিক চাকুরী থেকে বরখাস্ত কিংবা ছাঁটাইয়ের চিন্তা করেন না। মালিকপক্ষও খুব অসুবিধা না হলে শ্রমিক ছাঁটাই করতে চায়না। তারপরও প্রতিবছর ব্যবসায় লোকসান, মহামন্দা, দুর্যোগ, মহামারীর কারণে প্রচুর শ্রমিক ছাঁটাই হয়, আর শ্রমিক ছাটাই বাস্তবতা। সুতরাং নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলুন তাহলে কর্ম নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবেনা।


এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন