পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ১০ অক্টোবর, ২০২২

ধার দেনা চুক্তিপত্র কাকে বলে? ধার দেনা চুক্তি পত্রের শর্ত ও নমুনা- Sotterchaya

মানুষ প্রয়োজনে ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানিকভাবে ধার দেনা বা লোন করে থাকে। এই ধার দেনা করার সময়

কটি চুক্তিপত্র সম্পাদিত হয়। চুক্তিপত্রে কতগুলো শর্ত উল্লেখ থাকে যাতে দেনাদার ও পাওনাদার এর মধ্যে সু-সম্পর্ক বজায় থাকে। নিম্নে ধার দেনা বা লোন গ্রহণের চুক্তিপত্র সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ


ধার দেনা কি?
ধার দেনা হলো যখন কোন মানুষ বা প্রতিষ্ঠান তার ব্যক্তিগত, পারিবারিক অথবা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অন্যের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় টাকা বা টাকার মূল্যবান সম্পদ কোন শর্তে অথবা বিনা শর্তে চেয়ে নেয়। এই চেয়ে নেয়া টাকা বা সম্পদকে ধার বা দেনার টাকা বলে।

দেনাদার কাকে বলে?
দেনাদার হলো যখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের অন্যের কাছ থেকে শর্তে বা বিনা শর্তে প্রয়োজনীয় টাকা বা টাকার মূল্যবান সম্পদ শর্তে বা বিনা শর্তে গ্রহণকারী।
পাওনাদার কাকে বলে?
পাওনাদার হলো যখন কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অ্ন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শর্তে বা বিনা শর্তে টাকা ধার বা লোন দিবেন।
লোন বা ধার দেনার চুক্তি কাকে বলে?
সাধারণত দুটি পক্ষ যথা দেনাদার ও পাওনাদার যখন টাকা বা সম্পদ লেনদেনের সময় নির্দিষ্ট শর্তে কতিপয় স্বাক্ষীর সম্মুখে সরকারী রেজিষ্টার্ড স্টাম্প পেপারে যে চুক্তি স্বাক্ষর করে তাকে ধার দেনা অঙ্গীকারনামা বা লোন গ্রহণের চুক্তিনামা বা ঋণ গ্রহণের অঙ্গীকারনাম বলে 

ধার দেনা গ্রহণের অঙ্গীকারনামার নমুনাঃ মানুষ বিভিন্ন কারণে দেনা করে থাকে। দেনাদার ও পাওনাদার ধারদেনা করার সময় বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে থাকেন। একেকজনের শর্ত একেক রকম হয়। আবার একজনের সাথে অন্য জনের দেনার ধরণ ও শর্ত নাও মিলতে পারে। তবে অঙ্গীকার নামায় কয়েকটি বিষয় স্পস্ট উল্লেখ থাকতে হয় যেমন; তারিখ প্রথম পক্ষ এবং দ্বিতীয়পক্ষ এর বিবরণ, দেনার কারণ, ধার দেনার শর্ত, টাকার পরিমাণ, টাকা পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখ; টাকার উপর ধার্যকৃত সুদের পরিমাণ, টাকা প্রদানের ব্যর্থ হলে আইনগত করণীয়, সাক্ষীর নাম ও শর্ত। নিম্নে কয়েকটি অঙ্গীকার নামার নমুনা উল্লেখ কর হলোঃ

 নমুন-১

টাকা ধার গ্রহনের অঙ্গীকারনামা

নাম:.............., পিতা:.....................ঠিকানা:................... জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- ব্যবসা। -    - - - ১ম পক্ষ/ টাকার মালিক।

 নাম:.............., পিতা:.....................ঠিকানা:................... জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- ব্যবসা। -    - - - - ২য় পক্ষ/টাকা গ্রহিতা।

 পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার নাম স্মরণ করিয়া চুক্তিপত্র দলিলের আইনানুগ বয়ান আরম্ভ করিতেছি যে, আমি ২য় পক্ষ নুরূন নাহার  আমার বাড়ি র্নিমাণের কাজের জন্য ১ম পক্ষের নিকট হইতে অদ্য ১৮/০৪/২০১৮ইং তারিখে নগদ ১,০০,০০০/-  (এক লক্ষ) টাকা ধার হিসাবে গ্রহণ করিলাম। উল্লেখিত টাকার লভ্যাংশ  ৮,০০০/ (আট হাজার) করে আমি ২য় পক্ষ ১ম পক্ষকে প্রতি মাসের ১৮ তারিখ এর মধ্যে প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবো।

 উল্লেখ থাকে যে, যদি উল্লেখিত মোট টাকা আমি ২য় পক্ষক সময় মত ১ম পক্ষকে পরিশোধ না করি তাহলে ১ম পক্ষ আমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবেন এবং  উক্ত টাকা ফেরৎ প্রদানে যদি কোন প্রকার তাল-বাহানা  করি তাহলে ১ম পক্ষ আইনগত ভাবে বা সালিশী আদালতের মাধ্যমে আমার (২য় পক্ষ) যে কোন সম্পদ হইতে উক্ত টাকা আদায় করিতে পারিবেন। ইহাতে আমার বা আমার ওয়ারিশগনের কোন প্রকার ওজর আপত্তি থাকিবে না।

আমি ২য় পক্ষ আমার অবর্তমানে আমার ওয়ারিশগণ ও উক্ত চুক্তি বা অঙ্গিকারনামার শর্ত পালনে বাধ্য থাকিবে।

এতদ্বার্থে, স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে সুস্থ’ শরীরে, সরল মনে অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র ধার গ্রহনের অঙ্গীকারনামা দলিলের যাবতীয় মর্ম ও ফলাফল অবগত হইয়া উপস্থিত স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে আমি ২য় পক্ষ নিজ নাম সহি স্বাক্ষর করিলাম। ইতি, তারিখঃ ১৮/০৪/২০১৮ইং।

 প্রথম পক্ষের নাম ও স্বাক্ষরঃ                   দ্বিতীয় পক্ষের নাম ও স্বাক্ষর

 প্রথম পক্ষের স্বা্ক্ষীগণের নাম ও স্বাক্ষর            প্রথম পক্ষের স্বা্ক্ষীগণের নাম ও স্বাক্ষর

  

নমুন-২

টাকা ধার গ্রহনের অঙ্গীকারনামা

নাম:.............., পিতা:.....................ঠিকানা:................... জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- ব্যবসা। -    - - - ১ম পক্ষ/ টাকার মালিক।

 

নাম:.............., পিতা:.....................ঠিকানা:................... জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- ব্যবসা। -    - - - - ২য় পক্ষ/টাকা গ্রহিতা।

পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার নাম স্মরণ করিয়া চুক্তিপত্র দলিলের আইনানুগ বয়ান আরম্ভ করিতেছি যে, আমি ২য় পক্ষ, কামরুল ইসলাম, আমি  জমি ক্রয়ের জন্য ১ম পক্ষের নিকট হইতে অদ্য ২৮/০৪/২০১৮ইং তারিখে নগদ ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা ধার হিসাবে কতগুলো শর্তে গ্রহণ করিলাম।

 শর্ত

১। টাকার পরিমান ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা।

২। টাকার উপর প্রতি মাসে সুদের পরিমান ৮০০০ টাকা (৮%)।

৩। সুদ (৮০০০) টাকা প্রদানের তারিখ প্রতি মাসের ২০ তারিখের মধ্যে।

৪। সময়কাল ১ (এক বছর)। সমুদয় টাকা (আসল+ চলতি মাসের সুদ) ফেরত দেয়ার তারিখ হবে আগামী ২৮/০৪/২০১৯ তারিখ। দ্বিতীয়ক্ষ চাইলে সময়কাল বর্ধিত করতে পারবে তবে প্রথমপক্ষ এতে রাজি থাকতে হবে। সময় বর্ধিত করতে চাইলে প্রথমপক্ষকে তা লিখিত আকারে সময় শেষ হওয়ার দুই মাস আগে জানাতে হবে। প্রথম পক্ষ মেয়াদকাল (এক বছর) শেষ না হওয়া পর্যন্ত মূল টাকা ফেরত চাইতে পারবেনা। তবে দ্বিতীয় পক্ষ চাইলে মূল টাকার সাথে বাকী মাসের সুদ সহ টাকা ফেরত প্রদান করিতে পারিবে।

৫। মোট টাকা ২য় পক্ষকে সময় মত ১ম পক্ষের নিকট পরিশোধ করিতে হইবে। সময়মত ১ম পক্ষের নিকট টাকা পরিশোধ করিতে না পারিলে ২য় পক্ষের  বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবেন। উক্ত টাকা ফেরৎ প্রদানে যদি কোন প্রকার তাল-বাহানা  করি তাহলে ১ম পক্ষ আইনগত ভাবে বা সালিশী আদালতের মাধ্যমে (২য় পক্ষ) যে কোন সম্পদ হইতে উক্ত টাকা আদায় করিতে পারিবেন। ইহাতে ১ম পক্ষের ওয়ারিশগনের কোন প্রকার ওজর আপত্তি থাকিবে না।

৬।এই চুক্তির শর্ত ২য় পক্ষের অবর্তমানে তার ওয়ারিশগণের উপর বর্তাবে। উক্ত চুক্তি বা অঙ্গিকারনামার শর্ত পালনে তারা বাধ্য থাকিবে।

এতদ্বার্থে, স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে সুস্থ’ শরীরে, সরল মনে অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র ধার গ্রহনের অঙ্গীকারনামা দলিলের যাবতীয় মর্ম ও ফলাফল অবগত হইয়া উপস্থিত স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে আমি ২য় পক্ষ নিজ নাম সহি স্বাক্ষর করিলাম। ইতি, তারিখঃ ১৮/০৪/২০১৮ইং।

 প্রথম পক্ষের নাম ও স্বাক্ষরঃ                   দ্বিতীয় পক্ষের নাম ও স্বাক্ষর

 

প্রথম পক্ষের স্বা্ক্ষীগণের নাম ও স্বাক্ষর            প্রথম পক্ষের স্বা্ক্ষীগণের নাম ও স্বাক্ষর

 

 নমুনা-৩

 টাকা ধার গ্রহনের অঙ্গীকারনামা

নাম: কলিমুল্লাহ পিতা: ছালামত উল্লাহ, ঠিকানা: গ্রাম- আরশি নগর, পোষ্ট: আরশিনগর, উপজেলা ভেদরগঞ্জ, জেলা- শরীয়তপুর জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- ব্যবসা। ---- ১ম পক্ষ/ টাকার মালিক।

 

নাম: হাফিজ খান, পিতা: জিন্নাত আলী খান, ঠিকানা: আরশি নগর ভবের পাড়া, পোষ্ট: আরশিনগর, উপজেলা ভেদরগঞ্জ, জেলা- শরীয়তপুর, জাতীয়তা- বাংলাদেশী জাতীয়তা- বাংলাদেশী, ধর্ম- ইসলাম, পেশা- ব্যবসা। ----- ২য় পক্ষ/টাকা গ্রহিতা।


চুক্তিপত্রের কতিপয় শব্দের অর্থঃ
প্রথমপক্ষ বলেতে, যিনি টাকা ধার দিবেন।
দ্বিতীয়ক্ষ বলতে, যিনি টাকা ধার নিবেন,
মেয়াদকাল বলতে, যে মেয়াদের উপর টাকা ধার নিবেন।
আসল বলতে, প্রথমপক্ষ মোট যে পরিমান টাকা নিবেন তাকে বুঝাবে।
সুদঃ বলতে ধারকৃত টাকার উপর প্রতিমাসে নির্দিষ্ট পরিমান মুনাফাকে বুঝাবে।

পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালার নাম স্মরণ করিয়া চুক্তিপত্র দলিলের আইনানুগ বয়ান আরম্ভ করিতেছি যে, আমি ২য় পক্ষ, আজিজুল ইসলাম, আমার ব্যবসায়ের সম্প্রসারণের জন্য ১ম পক্ষের নিকট হইতে অদ্য ২৮/০৪/২০১৮ইং তারিখে নগদ ১,০০,০০০/- (এক লক্ষ) টাকা ধার/কর্জ/লোন হিসাবে কতগুলো শর্তে সাপেক্ষ গ্রহণ করিলাম।

শর্ত

১।একলক্ষ টাকা প্রথমপক্ষ কর্তৃক নগদ অথবা একাউন্ট পেয়ি চেকে দ্বিতীয়পক্ষকে প্রদান করিবেন। উক্ত একলক্ষ টাকার উপর প্রতি মাসে সুদের পরিমান হবে ১০০০০ টাকা (১০%)। প্রথমপক্ষ প্রতিমাসে সুদের বিপরীতে ১০,০০০ টাকা মাসের ২০ তারিখের মধ্যে ১ম পক্ষকে প্রদান করিবেন। কর্জের হবে ১ (এক বছর) এবং সমুদয় টাকা (আসল+ চলতি মাসের সুদ) ফেরত দেয়ার কোন নির্দিষ্ট তারিখ নেই। দ্বিতীয়পক্ষ যখন চাইবে তখন সমুদয় টাকা (আসল + সুদ) ফেরত প্রদান করিতে পারিবে। দ্বিতীয়পক্ষ সমুদয় টাকা ফেরত চাইলে অবশ্যই দু’মাস আগে জানাতে হবে।

 

২। মোট টাকা ২য় পক্ষকে সময় মত ১ম পক্ষের নিকট পরিশোধ করিতে হইবে। সময়মত ১ম পক্ষের নিকট টাকা পরিশোধ করিতে না পারিলে ২য় পক্ষের  বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবেন। উক্ত টাকা ফেরৎ প্রদানে যদি কোন প্রকার তাল-বাহানা  করি তাহলে ১ম পক্ষ আইনগত ভাবে বা সালিশী আদালতের মাধ্যমে (২য় পক্ষ) যে কোন সম্পদ হইতে উক্ত টাকা আদায় করিতে পারিবেন। ইহাতে ১ম পক্ষের ওয়ারিশগনের কোন প্রকার ওজর আপত্তি থাকিবে না।

৩। এই চুক্তির শর্ত ২য় পক্ষের অবর্তমানে তার ওয়ারিশগণের উপর বর্তাবে। উক্ত চুক্তি বা অঙ্গিকারনামার শর্ত পালনে তারা বাধ্য থাকিবে।

এতদ্বার্থে, স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে সুস্থ’ শরীরে, সরল মনে অন্যের বিনা প্ররোচনায় অত্র ধার গ্রহনের অঙ্গীকারনামা দলিলের যাবতীয় মর্ম ও ফলাফল অবগত হইয়া উপস্থিত স্বাক্ষীগণের উপস্থিতিতে আমি ২য় পক্ষ নিজ নাম সহি স্বাক্ষর করিলাম। ইতি, তারিখঃ ১৮/০৪/২০১৮ইং।

 প্রথম পক্ষের নাম ও স্বাক্ষরঃ                   দ্বিতীয় পক্ষের নাম ও স্বাক্ষর

  

প্রথম পক্ষের স্বা্ক্ষীগণের নাম ও স্বাক্ষর            প্রথম পক্ষের স্বা্ক্ষীগণের নাম ও স্বাক্ষর

 শেষকথাঃ চু্ক্তি সম্পাদনের সময় অবশ্যই শর্তগুলো ভালোভাবে উল্লেখ করতে হবে। দেশের প্রচলিত আইনী কাঠামোর উপর ভিত্তি করে চুক্তি সম্পাদন করা প্রয়োজন। চুক্তি শর্ত দেশের প্রচলিত আইন বিরোধী হলে উক্ত চুক্তি আদালত কর্তৃক বাতিল হতে পার।

 

এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন