পৃষ্ঠাসমূহ

বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২

ঘাম কি? ঘাম কেন হয় এবং তা প্রতিরোধ করার উপায়- Sotterchaya

ঘাম কি?
যখন পারিপার্শ্বিক চাপ, কাজ এবং অসুস্থ্যতা জণিত প্রদাহের ফলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে একক্রাইন গ্রন্থি এবং অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি থেকে তরল নির্ঘত হয় তখন এই নির্গত তরলকে ঘাম বা sweat বলে।

ঘাম গ্রন্থি কত প্রকার ও কি কি?

ঘাম গ্রন্থি দুই প্রকার, যথাঃ (ক) একক্রাইন গ্রন্থি (Eccrine Sweat Gland) এবং (খ) অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি (Apocrine Seat Gland)।

(ক)একক্রাইন গ্রন্থি Eccrine_sweat_gland) ঃ একক্রাইন গ্রন্থি মানব শরীলের বেশিরভাগ অংশ জুড়ে বিস্তৃত। একক্রাইন গ্রন্থি মানব শরীলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে। আপনার শরীল যখন অতিরিক্ত তাপ, চাপ কিংবা কাজের ধকল সইতে থাকে তখন শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। দেহের এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এই একক্রাইন গ্রন্থিগুলো ত্বকের পৃষ্ঠদেশে খোলে যায়, অর্থাৎ আপনার ত্বকের মাধ্যমে সে উন্মুক্ত হয়ে পরে এবং তরল নির্গত করে, উক্ত তরল বাষ্পীভূত হয়ে শরীলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে।


(খ) অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থি Apocrine_sweat_gland):  অ্যাপোক্রাইন গ্রন্থিগুলো আপনার বগল এবং কুঁচকিতে থাকে। খেয়াল করলে দেখা যাবে যে, এই গ্রন্থিগুলো যেখানে ঘন চুল আছে সেখানে বেশি দেখা যায়। মানব শরীল যখন অতিরিক্ত চাপ, তাপ সহ্য করে তখন এই গ্রন্থিগুলো তরল নির্ঘত করে। এই তরল আবার ব্যাকটেরিয়ার সাথে মিলিত হয়ে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। এই দুর্গন্ধ নাকে এসে অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি করে। সুতরাং, ঘাম+ব্যাকটেরিয়া= দুর্গন্ধ। অথবা, দুর্গন্ধ= ঘাম+ব্যাকটেরিয়া।

ঘামের লক্ষণঃ একজন মানুষ তাপমাত্রা পরিবর্তণ কিংবা কাজের চাপের কারণে ঘামতে পারেন, ইহাকে স্বাভাবিক ঘাম বলে। স্বাস্থ্যগত, হরমোনগত, জিনগত এবং পরিবেশগত পার্থক্যের কারণে কোন মানুষ একটু কম ঘামেন আবার কেউ একটু বেশি ঘামে। ইহাতে কোন সমস্য নেই। কিন্তু যদি দেখেন;
১। স্বাভাবিক তাপমাত্রা ও চাপে পরিমানের চাইতে অধিক ঘামেন কিংবা কম ঘামেন। ২। ঘামের কারণে আপনার স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হচ্ছে। ৩। রাতে ঘেমে আপনার বালিশ, বিছানা ভিজে যাচ্ছে। ৪। ঘামে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ থাকলে। ৫। শরীল থেকে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ বের হলে; ৬। হঠাৎ শরীল গরম হয়ে ঘাম আসলে; ৭। কোন রোগের চিকিৎসার পর কিংবা ঔষধ খাওয়ার পর অতিরিক্ত ঘাম আসলে; তাহলে ডাক্তারের সাথে অতি তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করুণ। ডাক্তার ঘামার কারণ বের করে চিকিৎসা দিবেন।

মানুষ কখন ঘামায়? মানুষ দুই ভাবে ঘামাতে পারেন; (ক) সাধারণ ঘাম, (খ) বিশেষ ঘাম।

সাধারণ ঘামঃ সাধারণ ঘাম বলতে সেই ঘাম কে বুঝায় যখন মানুষ শরীরের সহনশীলের অধিক তাপ, কাজ, মানুষিক চাপ সহ্য করার ফলে ঘামতে থাকে। এই ঘাম কিন্ত পরিমাণের চাইতে অতিরিক্ত ভক্ষম করলেও আসে।

বিশেষ ঘামঃ বিশেষ ঘাম বলতে সাধারণত কোন কারণ ছাড়া অন্য কোন কারণ যেমন, লিম্ফ্যাটিক সিস্টেমের ক্যান্সার, টিউমার, ডায়াবেটিস, হাইপোগ্লাইসেমিয় কারণে যে ঘাম আসে তাকে বুঝায়।  এই বিশেষ ধরণের ঘাম কিছু মেডিসিন সেবনে হতে পারে। কর্মহীনতা বা দুশ্চিন্তার কারণে মানুষ মাঝেমধ্যে ঘেমে থাকে, তাছাড়া বদ হজমের কারণেও মানুষ ঘামতে পারেন, হঠাৎ ভয় কিংবা উদ্বেগের কারণে মানুষ ঘামেন। জ্বরের কারণে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে প্রচুর ঘাম আসে।

কোন কোন অঙ্গ বেশি ঘামায়ঃ দেহের যে সমস্ত অঙ্গ বেশি ঘামায় সেগুলো হলো, বগল, পা, কুঁচকি, মলদ্বার, কানের লতি, নাকের ডগা ইত্যাদি।

ঘাম থেকে বাঁচার উপায়ঃ আসলে ঘাম একটি প্রাকৃতিক বিষয় এবং মানুষ তা অর্জণ করেছে হাজার হাজার বছর ধরে অভিযোজনের ফলে। তাই পরিশ্রম, অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে স্বাভাবিক ঘাম আসলে তাতে প্রতিরোধ কিংবা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করাই উত্তম। আপনি যদি ঘাম গ্রন্থির ঘাম নিঃস্বরণ জোর করে যেমন মেডিসিন বা অন্য কোন উপায়ে বন্ধ করতে চান তাহলে আপনার জন্য সেটা অনেক ক্ষতিকর এবং Side effect কারণ হতে পারে। আর যদি সেটা করেন তাহলে আপনার শারীরিক ক্ষতির সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। এতে আপনার প্রাকৃতিকভাবে শারীরিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। 

অতিরিক্ত ঘাম থেকে বাঁচার উপায়ঃ স্বাভাবিক ঘামের চাইতে যদি অতিরিক্ত ঘাম বের হয় তাহলে প্রথমত আপনাকে বের করতে হবে কেন অতিরিক্ত ঘামাচ্ছেন। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন; স্বাস্থ্যগত সমস্যা, জিনগত সমস্যা, হরমোনগত সমস্যা, বিশেষ রোগ, অতিরিক্ত মানষিক চাপ, হঠাৎ পরিবেশ পরিস্থিতি আনুকূল্যে না থাকা, হঠাৎ ভয়, আবেগ তাড়িত হওয়া, এবং স্বাভাবিকের চাইতে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় থাকা ইত্যাদি । তবে আপনি চাইলে আপনার ঘাম আসাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন সেক্ষেত্রে:

১। ঋতু অনুযায়ী পোষাক পড়াঃ প্রতিটি দেশে প্রাচীনকাল থেকেই ঋতু ভিত্তিক পোষাক পড়ার ট্রেন্ড প্রচলিত আছে। ফ্যাশন হাউসগুলো ঋতুভিত্তিক পোষাক মার্কেটে ছাড়ে। সাধারণত শীতকালে উল ও মোটা কাপড়ের পোষাক পড়া হয় এবং গ্রীষ্পকালে সূতি ও পাতলা কাপড়া পরিধান করে। গ্রীষ্পকালে সাদা কালারের পোষাক পরিধান করা আরামদায়ক, কেননা সাদা রং অন্যান্য রং থেকে বেশি আলো শোষণ করতে পারে। ফলে সূতি ও সাদা কালার সূর্যের অতিরিক্ত তাপ থেকে রক্ষা করে আপনার শরীলের তাপমাত্রা ও ঘাম নিয়ন্ত্রণ করে।

২। পোষাক পরিবর্তণঃ গ্রীষ্মকালে ঘন ঘন পোষাক পরিধান করা ভালো, কেননা একটি পোষাক একবার পড়লে সে পোশাক ঘামে ভিঁজে যায়, উ্ক্ত পোষাক যদি আবার পড়া হয় তাহলে দ্বিতীয় বার ঘাম ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এসে দুর্গন্ধের সৃষ্টি করে। তাই গ্রীষ্পকালে একবার পোশাক পরিধান করে সেই পোশাক ধুয়ে পুনরায় সেই পোশাক পরিধান করতে হবে। 

৩। রৌদ্রে বেশিক্ষণ অবস্থান না করাঃ প্রয়োজন ছাড়া রৌদ্রে বেশিক্ষণ অবস্থান করা যাবেনা। যদি গ্রীষ্মকালে বাইরে যেতে হয় তাহলে মাথায় ক্যাপ, ছাতি এবং সান গ্লাস পরিধান করে বের হতে হবে।

৪। ঔষধ প্রয়োগঃ ঔষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে হয়ত খানিকের জন্য আপনার ঘাম গ্রন্থিগুলোর কার্যক্ষমতা কমিয়ে আনা যাবে। তবে এ ধরণের মেডিসিন সাধারণত নির্দিষ্ট (যেমন নাকের ডগা, কিংবা মুখ) হাইপারহাইড্রোসিসের জন্য প্রয়োগ করা হয়। তবে এই মেডিসিন প্রয়োগ করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হবে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এগুলো প্রয়োগ না করাই ভালো।  

৫। বডি স্প্রে ব্যবহারঃ বাজারে কিছু বডি স্প্রে পাওয়া যায় যেগুলো প্রয়োগ করলে একক্রাইন গ্রন্থি নিয়ন্ত্রণ করে ঘাম প্রতিরোধ করে। তবে এগুলোর কার্যকারিতা খুব অল্প সময় থাকে। তবে এদের সুগন্ধি ও গন্ধ নাশক থাকার কারণে মানুষ এগুলো প্রচুর ব্যবহার করে থাকে।

৬। পাউডার ব্যবহারঃ ঘাম থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য মানুষ অনেক আগে থেকেই পাউডার ব্যবহার করে আসছে। এই পাউডারের আবার ঘামাচি প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। তবে অতিরিক্ত ঘামালে এই পাউডার অস্বস্তির কারণ হয়।

৭। ভাঁজাপোড়া এবং উচ্চ ক্যালারিযুক্ত খাবার বর্জণঃ আপনি ভাজা-পোঁড়া এবং উচ্চ ক্যালারিযুক্ত খাবার বর্জণ করলে ঘাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। অনেক সময় অতিরিক্ত পানাহারও ঘামের কারণ হয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের কারণে ঘাম আসে। তাই অতিরিক্ত পানাহার বর্জণ করতে হবে।


কখন ডাক্তার দেখাবেন? অস্বাভাবিক ঘাম বা একে বারে কম ঘাম। রাতে জ্বর আসার পর ঘেমে বিছানা ভিজে গেলে। কোন কারণ ছাড়াই মাঝরাতে অতিরিক্ত ঘাম আসলে, ঘামে অতিরিক্ত দুর্গন্ধ থাকলে, ওষুধ খাওয়ার পর অস্বস্তি ও ঘাম আসলে। স্বাস্থ্যগত, জিনগত ও হরমোনগত সমস্যা কারণে ঘাম আসলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাতে হবে। ডাক্তার ঘামের কারণ বের করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দিবেন।

মনে রাখতে হবে স্বাভাবিক ঘাম কোন অসুখ নয়, ঘামের সাথে দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়। তাই স্বাভাবিক ঘাম নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই 






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন