পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২২

ট্রুথ সিরাম (Truth Serum), গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক ব্যবহৃত সত্য বলার ঔষধ।

ট্রুথ সিরাপ (Truth_serum) সাধারণত মুখে বা শিয়ার মাধ্যমে প্রয়োগ করা হয়, যার

উদ্দেশ্য হলো মস্তিষ্কে প্রভাব বিস্তার করে মিথ্যা বলতে অক্ষম করে তোলা এবং একমুখী সত্য কথা বলতে সাহায্য করা। ট্রুথ সিরাপের ব্যাপক প্রয়োগ ও প্রচলন ঊনিশ শতকের শুরুতে আরম্ভ করা হয়। তবে প্রাচীনকালেও ট্রুথ সিরাপের ব্যবহারের নথি পাওয়া যায়। সে-সময় রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ট্রুথ সিরাপের বিকল্প হিসেব বিভিন্ন গাছের রস, ছাল, বাকল, ফুলের নির্যাস কিংবা ওয়াইন মিশ্রিত পানি পান করাত। তবে ঊনিশ শতকের শুরুতে ট্রুথ সিরাপ বা "ট্রুথ সেরাম" উৎপাদনে কয়েকটি সু-সংহত রাসায়নিক প্রস্তুত প্রণালী আবিস্কৃত হয়। বলা যায় যে ল্যাবে "ট্রুথ সেরাম" প্রস্তুত প্রণালী কেমিস্ট্রি ফর্মুলায় করা হতো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ, জার্মান নাৎসি বাহিনীর গেস্টাপো অপরাধী জিজ্ঞাসাবাদে উনিশ বিশ থেকে চল্লিশ দশকে "ট্রুথ সেরাম" এর ব্যবহার প্রচুর পরিমাণে বাড়িয়ে দেয়। তাদের ব্যবহৃত অনেকগুলো ফর্মুলা এখানো মেডিসিন বিশ্বে টিকে আছে। উদানিংকালে 'ট্রুথ সিরাম' মোশন সিকনেস বা গতিজনিত অসুস্থ্যতার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে অনেকক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কার্যকরী ফর্মুলার ভয়ংকর এই সমস্ত সিরাপপ্রাণঘাতী ইনজেকশনের হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

চিত্রঃ "ট্রুথ সেরাম" ঔষধের ট্যাবলেট ও ক্যান

ট্রুথ সিরাম হলো একটি ঔষুদের নাম যা সাইকোঅ্যাকটিভ পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত, ইহা এমন ব্যক্তিদের মধ্যে প্রয়োগ করা হয় যারা কোন না কোনভাবে অপরাধী হিসেবে সন্দেহের তালিকায় আছে এবং যারা স্বেচ্ছায় সত্য কথা বলতে অপরাগ। অন্য কথায় বলা যায় যে, ট্রুথ সেরাম হলো বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানে মিশ্রিত একটি সিরাপ যা গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক সত্য বিবৃতি বের করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

ট্রুথ সিরামের সক্রিয় রাসায়নিক উপাদান সমূহঃ
(ক) ইথানল
(২)স্কোপোলামিন
(৩) 3-কুইনুক্লিডিনাইল বেনজিলেট

(৪) শক্তিশালী শর্ট বা মধ্যবর্তী অ্যাক্টিং হিপনোটিক বেনজোডায়াজেপাইন যেমন (ক) মিডাজোলাম,  (খ) ফ্লুনিট্রাজেপাম (গ) অল্প এবং অতি-অল্প অ্যাক্টিং বার্বিটুরেটস,

ব্রান্ডের নামঃ (ক) পেন্টোথাল এবং (২) অ্যামোবারবিটাল (পূর্বে সোডিয়াম অ্যামাইটাল নামে পরিচিত ছিল)।

ডক্টর রবার্ট হাউসঃ ২০ শতকের শুরুকে ডক্তর রর্বাট হাউস প্রচার করেছিলেন যে, স্কোপোলমিন "ট্রুথ সিরাম" সিরাপ হিসেবে কার্যকর। তার প্রচারণায় অনেক ব্যক্তি উক্ত ড্রাগটি গ্রহণ করেছিলেন।



স্কোপোলামিন (Scopolamine) একটি গাছের বীজ থেকে আসে অথবা তার ফুল থেকে নিষ্কাষণ করা হয় যাকে স্থানীয় ভাষায় "গেট-ইউ-ড্রাঙ্ক" গাছ বলে। উক্ত ড্রাগটি বড়ি আকারে তৈরি করে মুখে গ্রহণ করা হয়। কোন ব্যক্তি যদি এই ঔষুধটি গ্রহণ করে তাহলে তার মস্তিষ্ক কার্যকারিতা লোপ পেয়ে ঘোরের মধ্যে থাকে এবং সে উদ্ভুট কথা বলতে থাকে। কিন্তু যখন তার মস্তিষ্ক পুরোপুরি সক্রিয় হয় তখন তার পূর্বের কথা মনে থাকেনা।


ট্রুথ সিরাম যে সমস্ত দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ব্যবহার করেঃ (১) ভারত, (২) রাশিয়া,(৩) আমেরিকা ও অন্যা্ন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থা গোপনে দোষী সাব্যস্ত অপরাধী কিংবা সন্দেহ ভাজন ব্যক্তির উপর ট্রুপ সেরাম প্রয়োগ করে থাকে। ২০০৮ সালে ভারতের মুম্বাই হামলায় অভিযুক্ত পুলিশের হাতে পাকরাও একমাত্র অপরাধী আজমল কাসাবকে (Ajmal_Kasab) জিঙ্গাসাবাদ করার জন্য সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (ভারত) কর্তৃক তার শিরায় বার্বিটুরেট ব্যবহার করেছে। তাছাড়া ২০০৮ সালে আরুষি-হেমরাজ হত্যা মামলার একজন প্রধান সাক্ষী কৃষ্ণের উপর ট্রুথ সেরাম প্রয়োগের নথি পাওয়া যায়।

রাশিয়ান কেজিবি জেনারেল ওলেগ কালুগিনের রেফারেন্সে একটি ম্যাগাজিন নিবন্ধ প্রকাশ করেছিল যাতে তিনি লিখেছিলেন কেজিবি গোয়েন্দা সংস্থা সন্দেহভাজন অপরাধীদের উপর ট্রুথ সেরাম প্রয়োগ করে। আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস অফিস অফ স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেস (ওএসএস) এলএসডি (LSD) কে একটি সম্ভাব্য 'ট্রুথ সিরাম' হিসাবে বিবেচনা করে। কিন্তু উক্ত মতের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করা হয়। তবে বিশ্বের সর্বাধিক গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে সিআই কর্তৃক 'ট্রুথ সিরাম' ব্যবহার নিয়ে মানুষ সন্দেহ করতেই পারে। কিছু অবিশ্বস্ত সূত্রে ১৯৫০ থেকে ১৯৬০ দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) প্রকল্প MKUltraএবং প্রকল্প MKDELTA সহ বেশ কয়েকটি তদন্ত চালিয়েছিল, যার মধ্যে LSD সহ 'ট্রুথ সিরাম' ওষুধের অবৈধ ব্যবহার জড়িত ছিল। কিছু বিশেষজ্ঞ ধারণা করেন আবু গারিব কারাগারে বন্ধিদের উপর ট্রুথ সিরাম (Truth Serum) প্রয়াগ করা হয়।

বাংলাদেশঃ বাংলাদেশে ট্রুথ সিরাম ব্যবহারের নথি পাওয়া যায়নি। যদিও বিশেষজ্ঞগণ ধারণা করেন, ডিবি, র‌্যাব কিংবা পিবিআই অপরাধীদের উপর ট্রুথ সিরাম প্রয়োগ করে থাকতে পারে। কিন্তু তা অনুমান নির্ভর। এই তথ্যের পক্ষ্যে কোন প্রমাণ নেই। তবে বাংলাদেশের গোয়েন্দা বাহিনীর হাতে মাঝেমধ্যে এলএসডির চালান আটক হয়। এলএসডি ছাড়াও ডিএমটি এবং ডিওবি  আটকের খবর পাওয়া যায়। তাছাড়া অতীতে জঙ্গিদের কাছ থেকে এলএসডির চালান উদ্ধার করা হয়েছে।

পরিশেষে, সত্যিকারের ট্রুথ সিরাম বা ট্রুথ সিরাপ (Truth Serum) মানুষের একটি আকাঙ্খিত রাসায়নিক যৌগ। যদিও মেডিকেলের ভাষায় ট্রুথ সিরামের অনেক ক্ষতিকর দিক (Side Effect) রয়েছে, তারপরেও গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের উপর ট্রুথ সিরাম ব্যবহারের ভালো দিকগুলো মানুষের খতিয়ে দেখা উচিত।

আরো পড়ুনঃ মিথ্যা কথা কাকে বলে, মিথ্যার কারণ, প্রকারভেদ, মিথ্যা নির্ণয় পদ্ধতি, মিথ্যার ভবিষ্যৎ এবং মিথ্যা প্রচারের মাধ্যম সমূহ

Reference: 1. 2 3

এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন