বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০২২

সুশাসন কাকে বলে, সুশাসনের প্রকৃতি ও ধরণ এবং প্রতিবন্ধকতা সমূহ।

সুশাসন : সুশাসন হচ্ছে এমন একটি কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতিফলন যেখানে শাসক ও শাসিতের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় থাকবে, সর্বোচ্চ স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকবে, আইনের শাসন থাকবে, নীতির গণতন্ত্রায়ন থাকবে, মানবাধিকারের নিশ্চয়তা থাকবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকবে , মতামত ও পছন্দের স্বাধীনতা থাকবে এবং থাকবে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। 
সুশাসন প্রত্যয়টি ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক উদ্ভাবিত আধুনিক শাসন ব্যবস্থার সংযোজিত রূপ । ম্যাককরনীর মতে– “ সুশাসন বলতে রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের, সরকারের সাথে শাসিত জনগণের, শাসকের সাথে শাসিতের সম্পর্ককে বুঝায় । ” 
  • অংশগ্রহণমুলক শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হয়- সুশাসন । 
  • সুশাসনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো— মৌলিক অধিকারের উন্নয়ন । 
  • সুশাসনের মাধ্যমেই নাগরিকগণ তাদের আগ্রহ বা আশা আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ করতে পারে , তাদের অধিকার ভোগ করে এবং তাদের চাহিদা মেটাতে পারে- UNDP  
  • নাগরিকগণ আশা - আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ ও অধিকার ভোগ করতে পারে – সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে । 
  • সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন— গণতান্ত্রিক চর্চা, মূল্যবোধের বিকাশ , উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব , অর্থনৈতিক ভারসাম্য, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা । 
  • সুশাসনে অংশগ্রহণ করতে হলে নাগরিকদের সচেতন হতে হবে - কর্তব্য , অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে । 
  • সুশাসনকে জনগণ ও সরকারের Win Win Game বলার কারণ এতে উভয়ের অংশগ্রহণ ঘটে এবং উভয়েরই লাভ হয় । 
  • রাষ্ট্রে সরকার তার নীতি বাস্তবায়ন করে আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে , তাই রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি দক্ষ ও শক্তিশালী আমলাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা আবশ্যক ।
  • “সুশাসন এমন এক সার্বজনীন ভূমিকা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাজের ধারা যা আপনা থেকেই নিয়ম কানুন ও সেসবের কার্যকারিতার সংঘাতকে নিয়ন্ত্রিত করে " Harris.
  • সুশাসন অগ্রাধিকার দেয় সমাজসেবা ও সমাজকল্যাণমূলক কাজকে । 
  • সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকারের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো— একটি প্রতিনিধিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ । 
  • “ সুশাসন মানবাধিকার ও আইনের শাসনকে নিশ্চিত করে জনপ্রশাসনে দক্ষতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে গণতন্ত্রের ভিতকে শক্তিশালী করে ” — কফি আনান । 
  • IMF - Good Governance ' এজেন্ডাটি গ্রহণ করে – ১৯৯৬ সালে । IDA সুশাসনের উপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে ১৯৯৮ সালে । 
  • ADB সুশাসনের উপর প্রতিবেদন প্রকাশ করে– ১৯৯৫ সালে । 
  • “ শাসক ও উন্নয়ন ” শীর্ষক প্রতিবেদন বিশ্বব্যাংক প্রকাশ করে —১৯৯২ সালে ।
  • “ শাসন ও ক্রমবর্ধমান মানবিক উন্নয়ন " শীর্ষক প্রতিবেদনটি জাতিসংঘ প্রকাশ করে ১৯৯৭ সালে ।
  •  UNDP সুশাসনের মূলনীতি প্রকাশ করে- ১৯৯৭ সালে । 
  • বিশ্বব্যাংক ২০০ টি অঞ্চল থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে নির্ধারণ করেছে সুশাসনের ৬ টি নির্দেশক । 
  • নাগরিকবৃন্দের শুভ চিন্তা , চেতনা ও প্রচেষ্টার অভিব্যক্তি হচ্ছে – সুশাসন ।
  • সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সুশাসনের অর্থনৈতিক দিকের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে । 
  • সুশাসন শব্দটি সর্বপ্রথম সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা করে– UNDP . 
  • Johannesburg Plan of Implemention সুশাসনের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব প্রদান করেছে – টেকসই উন্নয়নকে ।
সুশাসনের প্রকৃতি ও ধরন : সুশাসন হলো শাসন ব্যবস্থার ইতিবাচক দিক যা জনকল্যাণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে । সুশাসনের প্রকৃতি হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে মানবাধিকার নিশ্চিত করা ও মানবাধিকার সংরক্ষণ করা । বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত থাকলে প্রতিষ্ঠিত হয় সুশাসন । 
  • শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক কি হবে , রাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে , রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বা আদর্শ কী হবে তার একটি বিস্তৃত রূপরেখাই হলো সুশাসন । 
  • একটি রাষ্ট্রের আর্থ - সামাজিক , রাজনৈতিক , প্রশাসনিক ক্ষেত্রে বিরাজমান সকল জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে সর্বাধিক জনকল্যাণ নিশ্চিত করাই – সুশাসনের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য । 
  • সুশাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো— স্বচ্ছতা , জবাবদিহিতা , জনগণের নিকট গ্রহণযোগ্যতা , আইনের শাসন , স্বাধীন বিচার বিভাগ , স্বাধীন প্রচার মাধ্যম , জনবান্ধব প্রশাসন , দুর্নীতিমুক্ত শক্তিশালী বিরোধী দল , সুযোগের সমতা, মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি ইত্যাদি ।
  • রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করে – দুর্নীতি । 
  • সুশাসন দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় না— শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি ছাড়া ।
  • সুশাসনের জন্য প্রয়োজন — স্বাধীন ও শক্তিশালী সংবাদ মাধ্যম ।
  • সুশাসনের অন্যতম প্রধান ভিত্তি আইনের শাসন। 
  • রাষ্ট্রের পঞ্চম স্তম্ভ বলা হয় গণমাধ্যমকে। 
  • জনগণ , রাষ্ট্র ও প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ প্রত্যয় – সুশাসন । 
  • সুশাসন অলীক বস্তুতে পরিণত হয়— মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে । 
  • জনগণের সম্মতি ও সন্তুষ্টি হলো— সুশাসনের মানদণ্ড । 
  • সুশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে সাম্য হচ্ছে ব্যক্তির নিজস্ব অধিকার । 

সুশাসনের প্রতিবন্ধকতা : সুশাসনের ধারণাটি বিমূর্ত । এই ধারণাটি মূলত সরকারের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় । তাই এর প্রয়োগক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই কিছু প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত প্রতিবন্ধকতাসমূহ পরিলক্ষিত হয় । 

  • অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অভাব।
  • অসচেতনতা।
  • জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার অভাব আইনের শাসনের অনুপস্থিতি।
  • বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতার অভাব প্রাতিষ্ঠানিক রাজনীতির অভাব।
  • বিজ্ঞ নেতার অভাব।
  • অপ - রাজনীতি। 
  • অকার্যকর আমলাতন্ত্র ও প্রশাসন অপরিপক্ক গণমাধ্যম।
  • নাজুক স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা।
  • সামাজিক অসাম্য রাজনৈতিক অস্থিরতা অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতি।

এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Proposal for Sale of Commercial Lands- Sotterchaya