শরীয়তপুরের গোসাইরহাট সহ সারা বাংলাদেশে এমন কতগুলো কু-সংস্কার আছে যেগুলো আমরা চাইলেও এতোতারাতাড়ি দূর করতে পারবো না। এর জন্য আমাদের দীর্ঘ কাল অপেক্ষা করতে হবে এবং বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আরো ত্বরান্বিত করতে হবে।
গোসাইরহাটে মাঝে মধ্যে যে পালাগান হয় সেটি চাকমা ও গারোদের।
শরীয়তপুরের গোসাইরহাট ও অন্যান্য উপজেলার চরাঞ্চলের মানুষ- ভাব ও খনার বচনে বিশ্বাসী,যাত্রার শুভাশুভ সম্পর্কে তাদের বিশ্বাস খনার বচনের অনুরুপ, যেমন- যাত্রাকালে হোঁচট খাওয়া, পিছুডাক, টিকটিকির ডাক, মৃত্যু সংবাদ, লাশ দেখা, মরাডালে কাকের ডাক, শূণ্য/পূর্ণ কলস দেখা ইত্যাদি। এই কু-সংস্কারগুলো আবার ওঁরাওরা উপজাতিরা মেনে চলে।
ওঁরাওরা র্পূব দিক হতে হাল চাষ করা শুরু করে এবং শুভ দিন দেখে গৃহ নির্মান করে- যেটি আমাদের গোসাইরহাট শহ শরীয়তপুরের সব চরাঞ্চলে দেখা যায়।
রাতে কেশ বিণ্যাস করা, মহিলাদের চুল বাইরে ফেলা, সূর্যাস্তে ঘর ঝাড় দেওয়া, সন্ধ্যাবেলা কাউকে কিছু দেওয়া, রাতে পেচার ডাক, কুকুরের কান্না ইত্যাদি গোসাইরহাটের মানুষের নিকট অশুভ। যেগুলো ওঁরাওরা এবং মগ উপজাতিরাও অশুভ হিসেবে বিবেচনা করে থাকে।
রমণী বর্শীকরণ, গাভীর প্রথম দোহানের দুধ দানা করা, প্রসূতি ও ঋতুবর্তীর গোলাশয়ে না যাওয়া, ভাসুরের নাম উচ্চারণ না করা, মন্ত্রতন্ত্র- ওঝা বিশ্বাস করা আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, যেগুলো মনিপুরী, চাকমা ও মারমাও পালন করে থাকে।ওঁরাওরা আদিবাসীরা এই নিয়মগুলো খুব মেনে চলতে দেখা যায়।
গোসাইরহাটের মানুষ গর্ভবর্তী কাউকে খোলা চুলে বাইরে যেতে দেয় না, রাতে দূরে কোথাও যাওয়া এবং নদী বা সাঁকো পার হওয়া তাদের জন্য নিষিদ্ধ । এই নিয়মগুলো ধর্মীয় জ্ঞানে পালন করে থাকে মনিপুরী সম্প্রদায়গুলো।
গোসাইরহাটের মানুষ বিশ্বাস করে থাকে বিবাহ ও প্রসবের সময় মা ও শিশুকে ভূতে ধরতে পারে সেজন্য তারা সব সময় সতর্ক থাকে। এটি মালপাহাড়িদেরও বিশ্বাস।
ওঁরাওরা সম্প্রদায় শস্য বপনের সময় ভূমিকে প্রণাম করে থাকে শরীয়তপুরের মানুষ তার বদলে সালাম করে।
ওঁরাওরা সম্প্রদায় বিবাহ পূর্বে পানচিনি, গায়ে হলুদ ইত্যাদি পালন করে থাকে এবং বিবাহের দিন উভয় পক্ষের মেয়েরা বিয়ের গীত গায়, সেগুলো শরীয়তপুরের চরাঞ্চলে আগে প্রকট থাকলেও এখন কিছুটা কমে আসছে।
ওঁরাওরা ও মনিপুরীরা ধান, দূর্বা দিয়ে গায়ে হলুদ ও বরকনে কে বরণ করে যেগুলো এই অঞ্চলে মানুষ এখনও ধরে রেখেছে।
মনিপুরীরা আমাবশ্যা, পূর্ণিমা গ্রহনে বিবাহ নিষিদ্ধ করে থাকে যা চাকমারাও পালন করে এটি নিয়মগুলো শরীয়তপুর সহ গোসাইরহাটের সমস্ত এলাকাতে দেখা যায়।
খাসিয়ারা মা ও মুরুব্বিদের আর্শীবাদ নিয়ে পাগড়ি ও ধূতি/পায়জামা পড়ে মাতৃগৃহ ত্যাগ করে কনের বাড়ি যায় যেটি এই অঞ্চলের মানুষ অবশ্যই কতব্য হিসেবে পালন করে থাকে।
সাওতাল ও ওঁরাওরা মেয়েরা হাত, পা, নাক, কান ও গলায় গহণা পড়ে, চূড়া করে চুল বাঁধে এবং টিকলি পড়ে। যা শরীয়তপুর সহ গোসাইরহাট এবং সারা বাংলাদেশের মেয়েরা পড়ে থাকে।
ওঁরাওরা আদিবাসীরা নবজাতকের মুখে প্রথমে দেয় ছাগী কিংবা মায়ের দুধ অন্যরা দেয় মধু এবং প্রসূতিকে দেয় হলুদের পানে যা গোসাইরহাটের মানুষ ও পালন করে থাকে।
ওঁরাওরা উপজাতি এবং মগরা- অপশিক্ত ও অশরীরী আত্মা থেকে মা ও শিশুকে রক্ষার জন্য ঘরের চর্তুরদিকে বেড়া ও কাঁটা দেয় এবং ওঝা ও ফকির দিয়ে ঝাড় ফুক দেয়া হয় যা আমাদের শরীয়তপুরের গোসাইরহাট এবং অন্যান্য উপজেলার চরাঞ্চলেও করা হয়।
ওঁরাওরা শিশুর জম্নের পর কানে লতি ফুঁ দেয় তার বদলে এখানকার মানুষ আজান দেয়।
ওঁরাওরা, গারো ও চাকমারা বিয়ের সময় উলু ধ্বনি দেয় তার বদলে গোসাইরহাটে মানুষ “আল্লা রসূল বল.. বল. বল.... মিয়া আলা.. হে.... আলা..” বলে থাকে।
আমি এখানে মাত্র গুঁটি কয়েক কু-সংস্কারের কথা তুলে ধরতে পেরেছি বলে মনে হয় ।আমাদের সমাজে আরো এমনি রকম শত শত কুসংস্কার আছে যেগুলো আমাদের প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম বয়ে বেড়াবে। তাই আসুন আমরা এখুনি কুসংস্কার দূরীকরণে পদক্ষেপ গ্রহন করি এবং সমাজ সচেতনতায় অংশ গ্রহন করি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন