সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০২২

যৌন শিক্ষা বা সেক্স এডুকেশন কি? যৌন শিক্ষার বর্তমান অবস্থা, প্রয়োজনীয়তা, চ্যালেঞ্চ সমূহ এবং কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়।

যৌন শিক্ষা বা সেক্স এডুকেশনঃ যৌন শিক্ষা বলতে মানব শরীলের(স্ত্রী ও পুরুষ) যৌন বিষয়ক সম্পর্ক যেমন বয়ঃসন্ধিকালে মানসিক ও দৈহিক স্বাস্থ্য, হরমোনগত (টেস্টোস্টেরন) নিঃসরন ও শারীরিক আচরণগত পবিবর্তণ, ছেলেদের স্বপ্নদোষ ও মেয়েদের মিনোপজ বা ঋতুস্রাব, যৌন প্রজনন, শারীরিক সম্পর্কের সম্মতি, আচরণগত পবিবর্তণ,

প্রজনন অধিকার, জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও জন্ম নিয়ন্ত্রন পদ্ধতির শিক্ষা, অরক্ষিত যৌন সম্পর্ক পরিত্যাগ এবং নিরাপদ যৌন সম্পর্ক স্থাপন কে বুঝায়। তাছাড়া যৌন শিক্ষা হলো নারী ও পুরুষকে বয়ঃসন্ধিকালে যৌনতা সম্পর্কে অন্যের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে তা নির্দেশ করা। যৌন শিক্ষা মানুষের যৌন আচরণের সাথে সম্পর্কিত যা বয়ঃসন্ধিকালে দৈহিক ও মানুষিক আচরণ, নিরাপদ যৌন চর্চা, হস্তমৈথুন, বিবাহপূর্ব যৌনতা, এবং যৌন নৈতিকতা, অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করে। তবে যৌন শিক্ষা টার্ম নিয়ে বিভি্ন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে তভেদ থাকতে পারে বিশেষ করে রক্ষণশীল ও ধর্মীয় গোষ্ঠীর মধ্যে, তারা সাধারণত যৌন শিক্ষা বলতে নারী পুরুষের অবাধ মেলা মেশাকে বুঝান। কিন্তু যৌন শিক্ষার মূল ও মর্ম আরো অনেক গভীর এবং এটি  অধিক আলোচনার অবকাশ রাখে। 

যৌনশিক্ষার বর্তমান অবস্থাঃ প্রাচীনকালে যৌনশিক্ষা একটি ট্যাবু বা অতি গোপনীয় বিষয় ছিলো। এ বিষয়ে মানুষ প্রকাশ্যে আলোচনা রতে চাইতেন না। পারিবারিক ও সামাজিকভাবে যৌন শিক্ষার বিষয়গুলো কঠিন ভাবে এড়িয়ে গেছেন। অতীতে রাষ্ট্রীয়ভাবে যৌন শিক্ষার কোন উদ্যোগ নেয়া য়নি। বয়ঃসন্ধিকালে ছেলে ও মেয়েরা নতুন ও ভয়াবহ বিষয়ের সম্মুখীন হতেন। কিশোরীদের আতঙ্কের মাত্রা ছিলো আরো অনেক বেশি। ঋতুস্রাব কালীন সময়ে তাদের মারাত্মক অভিজ্ঞতা অর্জণ করতে হয়। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে যৌন শিক্ষার বিষয়টি নিয়ে অনেক আলাচনা সমালোচনা হচ্ছে। সরকারীভাবে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যৌন শিক্ষাকে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সীমিত আকারে হলেও পাঠ্যপুস্তকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। মিডিয়াতে নানা রকম প্রোগ্রাম প্রচার করা হচ্ছে। কনডমের বিজ্ঞাপন সেই নব্বই সাল থেকে দেখানো হচ্ছে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির বিজ্ঞাপন অতি জনপ্রিয়তা লাভ করছে। তাছড়া সরকার ইতিমধ্যে জেনারেশন ব্রেক থ্রু'র প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।

যৌনশিক্ষা কেন এবং কখন প্রয়োজনঃ সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর ও কিশোরীদের টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণের ফলে একে অপরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। তাদের মধ্যে যৌন আকাঙ্খা বা কামবোধ জাগ্রত হয়। এ সময় কিশোরদের স্বপ্নদোষ এবং কিশোরীদের মাষিক বা ঋতুস্রাব ঘটে। ফলে তাদের মনে বিচিত্র প্রশ্ন উদয় ও নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাছাড়া তখন তারা একে অপরের সাথে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করে। অনেক সময় তারা অনিরাপদ ও অরক্ষিত যৌন সম্পর্কে জড়ায়। ফলে কিশোরীদের অকাল ও অরক্ষিত গর্ভ ধারণের বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। অনাকাঙ্ক্ষিত ও অরক্ষিত গর্ভধারণের ফলে কিশোরীদের উপর পারিবারিক ও সামাজিক চাপ অব্যাহত থাকে। এসময় মেয়েদের নৈতিক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। সমাজ তাদের কে হেয় চোখে দেখে। অনেক সময় মেয়েরা প্রত্যারণার শিকার হয়। ফলে আত্মহত্যার মতো ঘটনাও ঘটে। বর্তমানে কিশোরীদের বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ক বা ধর্ষণের মত অনেক কেইস আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের যৌন হয়রানি অহরহ ঘটে থাকে। তাছাড়া যৌন শিক্ষার অভাব থাকার কারণে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে যৌন শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। 

যৌন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ সমূহঃ উন্নয়নশীল ও অনুন্নত বিশেষ যৌন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে গেলে নানাবিধ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। প্রথমে যে বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাহলো রক্ষণশীল গোষ্ঠীর তীব্র আপত্তি ও প্রতিরোধ। প্রতিটি দরিদ্র দেশে ধর্মীয় ও রক্ষণশীল গোষ্ঠী ব্যাপকভাবে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ফলে সে সমস্ত দেশের সরকার যৌন শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে গড়িমসি বা দীর্ঘ সূত্রীতার সৃষ্টি করে। অনেক প্রকল্প আলোর মুখ দেখার আগেই নাই হয়ে যায়। জনগণের অজ্ঞতা, অশিক্ষা ও কুশিক্ষার মতো বিষয়গুলো যৌন শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে বা প্রকাশ্যে শিক্ষা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো থেকে যৌন শিক্ষা বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়।  যৌনশিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে দারিদ্রতা ও সরকারী পর্যায়ে পয়োজনীয় আর্থিক সংস্থাপনের অভাব রয়েছে।

বাংলাদেশে যৌন শিক্ষা কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থাঃ বাংলাদেশের  জাতীয় পাঠ্যপুস্তক পাঠ্যক্রমে ২০১৩ সাল থেকে পাঠ্যসূচিতে যৌন শিক্ষার কিছু টার্ম রয়েছে, তবে পাঠ্য পুষ্তকের পঠিত বিষয়গুলো কিশোর ও কিশোরীদের মধ্যে ব্যাপক আকারে প্রভাব ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে। ৬-১০ শ্রেণীর শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পাঠ্যক্রমে যৌন শিক্ষা কার্যক্রমের অধ্যায়গুলো সন্নিবেশিত হয়েছে। অধ্যায়গুলোতে বয়ঃসন্ধিকালীন শারীরিক পরিবর্তন, বাল্যবিবাহ, প্রাপ্তবয়স্ক গর্ভাবস্থা, সহিংসতা, এইচআইভি/এইডস, মানসিক স্বাস্থ্য এবং বয়ঃসন্ধিকালে ঝুঁকিপূর্ণ আচরনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে তা আন্তর্জাতিক ও বৈজ্ঞানিক স্ট্যান্ডার্ডের মান অনুযায়ী হয়নি বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন। যৌন শিক্ষার জন্য এখনও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র রয়ে গেছে, যেমন- স্যানিটারি ন্যাপকিন, নিশাচর নির্গমন, হস্তমৈথুন, লিঙ্গ বৈষম্য, সাদা স্রাব, বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ বা শারিরীক সম্পর্ক, ব্যক্তিত্ব উপস্থাপন, পরিণত বয়সে আত্মবিশ্বাস, সঠিক সঙ্গী নির্বাচন, দাম্পত্যকালীন জীবনে সামাজিক আচরণ, সঠিক সময়ে দৈহিক মিলন ইত্যাদি।


কিভাবে যৌনশিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা যায়ঃ যৌন শিক্ষা কার্যক্রম  আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাস্তবায়ন যায়। আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে হাইস্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ক্লাসে পাঠদানকে বুঝানো হয়েছে। যৌন শিক্ষা বিষয়টি জীববিজ্ঞান, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, গার্হস্থ্য অর্থনীতি এবং শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে অন্তুর্ভুক্ত করা যায়। সরকারী পর্যায়ে ও এনজিও এর মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে এ বিষয়ে প্রশ্ন ও পরামর্শ বিভাগ চালু করা, যৌন শিক্ষা বিষয়ক কলাম ছাপানো, বিশেষ ফিচার প্রকাশ এবং বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে গোল টেবিল বৈঠক আয়োজন হতে পারে। কিশোর ও কিশোরীদের মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তিগত রিসোর্সের মাধ্যমেও প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন, এ্যানিমেশনের মাধ্যমে বিশেষ কার্টুন বা প্রোগ্রাম নির্মান করে তা দেখানোর ব্যবস্থা করা যায়। ইতিমধ্যে উপরে উল্লেখিত মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার ও প্রচারনা শুরু হয়ে গেছে। ফলে অরক্ষিত যৌনতার পরিমাণ বহুলাংসে হ্রাস পেয়েছে। অল্প বয়সে গর্ভধারণ ও গর্ভপাতের মতো বিষয়টি কমে এসেছে। অনানুষ্ঠানিক যৌন শিক্ষা বলতে বলতে সাধারণত পিতামাতা, বন্ধু, ধর্মীয় নেতার সাথে এ বিষয়ে আলোচনাকে গুরুত্ব দেওয়াকে বুঝানো হয়। ভবিষ্যৎ মানব সম্পদ তৈরী ও পরিকল্পিত জাতি গঠনে একটি আধুনিক যৌন শিক্ষা প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে পরিবারের অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে।

এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Proposal for Sale of Commercial Lands- Sotterchaya