পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০২২

আরব- আমেরিকার টিনের চশমা ও যুগে যুগে ফিলিস্তিনি শিশু হত্যার লাইসেন্স।

ইসরায়েল সরাসরি সন্ত্রাসে লিপ্ত হচ্ছে- অন্ততপক্ষে, কেমব্রিজ অভিধানের সংজ্ঞা অনুসারে ইসরায়েলের কর্মকান্ড সন্ত্রাসবাদের মধ্যে পড়ে।

সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক হামলা চালিয়েছিলো - যার কোডনাম অপারেশন ব্রেকিং ডন। আগস্টের শুরুতে তিন দিন ব্যাপী এই হামলায় ১৬ শিশু সহ কমপক্ষে ৪৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। ইসরায়েলি সরকারের মতে, আক্রমণটি ছিল প্যালেস্টাইনি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি "ধারাবাহিক" অভিযানের অংশ।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের উপর বোমা হামলার জন্য যে কোন অজুহাত খুঁজতে ছিলো। প্যালেস্টাইনি ইসলামিক জিহাদ গোষ্ঠীটি তাদের সেই অজুহাতের ষোলকলা পূর্ণ করেছে।

গাজায় ইসরায়েলের অপারেশনে “ভয়ঙ্কর ভোর”- একজন ইজরাইলিও নিহত হয়নি, অপর দিকে ১১ শিশু সহ কমপক্ষে ৪৪ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে দখলদার ইসরাইল। হতাহতের পরিসংখ্যানই একটি বিরাট পার্থক্য গড়ে তোলে, যাতে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি উপকূলীয় ছিটমহলের সাথে ইহুদিবাদী রাষ্ট্রের  বিমাতা সূলভ আচরণের স্পষ্ট চিত্র ফুটে উঠেছে। যদিও ২০০৫ সালে গাজা ভূখণ্ড থেকে ইসরায়েলের তথাকথিত সেনা প্রত্যাহার করার পরেও গাজায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর নিয়মিত নির্যাতন একটি রুটিন মাফিক কার্যক্রমের অংশ হয়ে দায়িছে। আপনাদের মনে করিয়ে দেই, ২০২১ সালের মে মাসে ১১ দিনের ইসরায়েলি হামলা “ব্রেকিং ডন” ছিল সবচেয়ে রক্তাক্ত পর্ব। এই হামলাকে অপারেশন গার্ডিয়ান অফ দ্য ওয়ালস নামে অভিহিত কর হয় - যাতে ৬৭ শিশু সহ ২৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে দখলদার ইসরাইল।

ইসরাইলের গণহত্যার সুচির দিকে তাকালে, আপনি অপারেশন প্রোটেক্টিভ এজ দেখতে পাবেন - যখন ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজায় ২,২৫১ লোককে হত্যা করেছিল, যার মধ্যে ৫৫১ জন শিশু ছিল। এর পরের অংশ ‘অপারেশন কাস্ট লিড’, একটি ২২ দিনের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ যা ২০০৮ সালে ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল, এতে প্রায় ১৪০০ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩০০ শিশু এবং তাদের বেশিরভাগই বেসামরিক। ‘কাস্ট লিডের’ সময় অবশ্য তিনজন ইসরায়েলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

অপারেশন সামার রেইন আপনাকে ভয়ংকর রোমান্টিক আকর্ষণের দিকে নিয়ে যাবে, যা জুন ২০০৬ সালে শুরু হয়েছিল এবং একই রকম কাব্যিক অপারেশন ‘অটাম ক্লাউডসকে’ ভয়ংকর পথ দেখিয়ে ছিলো। গাজা ইন ক্রাইসিস বইতে, মার্কিন পণ্ডিত নোয়াম চমস্কি এবং ইসরায়েলি পণ্ডিত ইলান পাপ্পে বলেছেন যে, অপারেশন সামার রেইন "১৯৬৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত গাজায় চালানো সবচেয়ে নৃশংস আক্রমণ"। এটি একটি "পরিকল্পিতভাবে হত্যাকান্ড" এই হত্যাকান্ড ধীরে ধীরে "সাধারণ হত্যার" পর্যায়ে নিয়ে আসছে। বিমান হামলা সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। ইসরাইলের এটি সাধারণ রুটিন মাফিক কার্যে পরিণত হয়েছে, এটি একটি রাস্ট্রের নীতির বাস্তবায়ন নয়"। অবশ্য, যদি আপনার রাষ্ট্রের নীতি সন্ত্রাসবাদ হয়, তাহলে আপাতদৃষ্টিতে  এই হত্যা বোধগম্যে এবং এটি পদ্ধতিগত হত্যা, যা একটি রাষ্ট্রের বাস্তবায়নের একটি উপায়।

কেমব্রিজ অভিধানের অনলাইন সংস্করণ সন্ত্রাসবাদকে "রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সহিংস কর্মকাণ্ডের হুমকি" হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। প্রকৃতপক্ষে, ১৯৪৮ ফিলিস্তিনি ভূমিতে সহিংসভাবে ইসরা্ইল নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় ১০০০ বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়। এক মিলিয়নের তিন-চতুর্থাংশ ফিলিস্তিকে তাদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করে, এবং প্রায় ৫০০ ফিলিস্তিনি গ্রাম সমূলে ধ্বংস করে সেখানে ইহুদি বস্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ তারপর থেকেই ইসরাইল রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সহিংস কর্মকাণ্ড দিনের পর দিন চালিয়ে আসছে। আঞ্চলিক শক্তি প্রতিযোগিতায় ইসরাইল নামক রাষ্ট্রটি সব সময় মার্কিন সমর্থন ও আনুকূল্য একচেটিয়াভাবে পেয়ে আসছে। মার্কিনিরা ইসরাইলকে নিন্দার পরিবর্তে আত্মরক্ষার আক্রমণ বলে প্রচার করছে। অপরদিকে ফিলিসন্তিদের প্রতিরোধ যুদ্ধকে "সন্ত্রাসবাদ" বলে নিন্দিত করছে।

 


গাজায় সম্প্রতি রক্তপাতের প্রতিক্রিয়ায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার "ইসরায়েলের নিরাপত্তার প্রতি সমর্থন... আক্রমণের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষা করার অধিকার" আছে বলে পুনরায় নিশ্চিত করেছেন। যা "জায়নবাদী" রাষ্ট্রের প্রতি পূর্ববর্তী মার্কিন নীতির প্রতিফলন, আর এই নীতি আশ্চায্যের কিছু নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ঘোষণা শুনলে মনে হবে ইসরায়েল স্থায়ীভাবে এবং সন্দেহাতীতভাবে আত্মরক্ষায় কাজ করছে! আর ফিলিস্তিনিরা সন্ত্রাসবাদ কাজে লিপ্ত। কিন্তু বাস্তবে তা নয়।

কিছু মনে করবেন না "আত্মরক্ষা" লাইনটি সত্যিই কেঁদে কেঁদে মরে যখন আপনি সেই লোকদের বিরুদ্ধে "আত্মরক্ষা" করেন যাদের জমি আপনি নিষ্ঠুরভাবে দখল করেছেন এবং যাদের আপনি পর্যায়ক্রমে প্রচুর পরিমাণে হত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পশ্চিমা কর্পোরেট মিডিয়াও সত্যের পরিবর্তে সব সময় ইসরায়েলী প্রেসক্রাইবড প্রোপাগান্ড প্রচার করে। আর এই প্রোপাগা্ন্ডা প্রচার করার মাধ্যমে তারাও (পিশ্চিমা মিডিয়া) ফিলিস্তিনি হত্যায় এক ধরণের অংশ গ্রহণ করে। দুই পক্ষের মধ্যে যখন অসম "সংঘর্ষ" চলে তথন নিশ্চিতভাবেই সিএনএন, রয়টার্স সহ পশ্চিমা মিডিয়াগুলো ঘটনাকে এমনভাবে উপস্থাপন করে যা দেখলে মনে হবে, আসলে ফিলিস্তিনে কিছুই হয়নি, সব ক্ষয়-ক্ষতি ইসরাইলের হয়েছে। আর ক্ষয়ক্ষতি থেকে নিজেদেরকে রক্ষার জন্য ফিলিস্তিনিদেরকে নির্বিচারে মেরে ইসরাইল তার নৈতিক অধিকার ভোগ করতেছে।

বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষ আশা করে, ইসরাইল ফিলিস্তিনের সংঘাত অচিরেই বন্ধ হবে। কিন্তু এ সংঘাত বন্ধ করতে হলে ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরাইলের স্যাটেলাইট (বস্তি) স্থাপন বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘকে ১৯৬৭ সালের চুক্তি অনুযায়ী দুই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় কার্যকর ভূমিকা নিত হবে। এখন প্রশ্ন হলো জাতিসংঘ চালায় কে?

মুলঃ বেলেন ফার্নান্দেজ, সম্পাদক- জ্যাকবিন ম্যাগাজিন।

ছবিঃ অলাইন থেকে সংগ্রহীত।

এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন