পৃষ্ঠাসমূহ

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২৩

সভার কার্য বিবরণী কাকে বলে? সভার কার্য বিবরণী লেখার নিয়ম ও লেখার পর করণীয়- সত্যের ছায়া

কোন সভার আলোচ্যসূচি অনুযায়ী উপস্থিত সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাপক আলাপ আলোচনা পর সর্ব-সম্মতভাবে যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, সেই সিদ্ধান্তের লিখিত রুপকে সভার কার্য বিবরণী (Meeting Minutes) বলে।

সভার কার্য বিবরণী লেখার নিয়মঃ

১। সভার কার্য বিবরণীতে কোম্পানির নাম থাকতে হবে এবং নির্দিষ্ট সভার সংখ্যা, সভার ধরন, এবং দিন, তারিখ, স্থান, শুরু এবং সভা সমাপ্তির সময় উল্লেখ থাকবে। যদি একটি সভা আহ্বান করা হয় তা কোরামগত কারণে স্থগিত হয়ে যায় তাহলে সেটি কার্য বিবরণীতে উল্লেখ করতে হবে।

২। সভার কার্য বিবরণীতে নোটিশ পাঠ এবং এই নোটিশ যে সবাই অবগত ছিলেন- এই বিষয়ে একটি বিবৃতি থাকবে।

৩। চেয়ারম্যান উদ্বোধনী বক্তব্যে সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত সার-সংক্ষেপ থাকবে।

৪। কার্য বিবরণীতে পরিচালকদের নাম রেকর্ড করতে হবে, সদস্য, কোম্পানি সচিব এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা যারা সভায় যোগদান করেছে তাদেরও নাম অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। আদেশ বা জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরিচালকদের নাম বর্ণানুক্রমিকভাবে তালিকাভুক্ত করতে হবে। প্রথমে চেয়ারম্যান, তারপর ভাইস-চেয়ারম্যানের নাম থাকবে, জৈষ্ঠতার ভিত্তিতে তারপর পরিচালকদের নাম।

৫। মিনিটের সংক্ষিপ্ত পটভূমি উল্লেখ করতে হবে। কার্য-বিবরণীতে প্রস্তাব, আলোচনার সারসংক্ষেপ এবং যুক্তি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আলোচ্য সূচিতে অন্তর্ভুক্ত বিষয় সমূহ ধারাবাহিকভাবে রেকর্ড করতে হবে। তবে বিশেষ কোন সিদ্ধান্ত থাকলে তা রেজুলেশন আকারে (ডিসিআর) রেকর্ড করতে হবে। যেখানে এটি বিধিবদ্ধভাবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

৬। কার্যবিবরণীতে সভার কার্যবিবরণীর সারাংশ থাকবে, কার্য বিবরণীটি ন্যায্য ও সঠিকভাবে রেকর্ড করতে হবে।বিবরণীর পদ বাক্য সম্পূর্ণ ও দ্ব্যর্থহীনভাবে গঠন করতে হবে। সভার কার্য বিবরণী অবশ্যই তৃতীয় ব্যক্তি দ্বারা অতীত কাল শব্দ ব্যবহার করে লিখতে হবে।

৭। যদি সভার চেয়ারম্যান হঠাৎ কোন কারণে উপস্থিত থাকতে না পারেন অথবা কোন নির্দিষ্ট এজেন্ডা আলোচনার সময় তিনি যদি উপস্থিত থাকতে না পারেন তাহলে তার পরিবর্তে যে পরিচালক (ডাইরেক্টর) চেয়াম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন তার নাম সুর্নিদিষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।

৮। সভায় আলোচ্য সূচিতে থাকা প্রতিটি ব্যবসায়িক আইটেম, সিদ্ধান্ত, কার্য বিবরণীতে থাকতে হবে। ভবিষ্যৎ রেফারেন্সের সুবিধার জন্য তথ্যের বিষয়ভিত্তিক সূচক, ক্রস রেফারেন্স এবং রেফারেন্স যথাযথভাবে উল্লেখ থাকবে। রেফারেন্স বা সূত্রে উল্লেখিত তথ্যের প্রমাণ সাপেক্ষে ডকুমেন্টস আলাদাভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যেতে পারে।

৯। যদি কোনো পূর্ববর্তী রেজোলিউশন বা সিদ্ধান্ত বাতিল বা পরিবর্তন করে বর্তমানে নতুন করে রেজুলেশন বা সিদ্ধান্ত,

সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাহলে তাও সূত্রের মাধ্যমে উল্লেখ করতে হবে।

১০। উদ্ভূত বিষয় (Matter Arising) আলোচ্য সূচিতে অন্তুর্ভুক্ত থাকে তাহলে উদ্ভূত বিষয়ে (Matter Arising) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য উল্লেখ করতে হবে। উদ্ভূত বিষয়টি (Matter Arising) আলোচ্যসূচির ২নং সূচিতে (Agenda- 2) রাখা যেতে পারে।

সভার কার্য বিবরণী লেখার পর করণীয়ঃ

১।মিটিংশেষ হওয়ার পর থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে মিনিট লিখতে হবে এবং স্বাক্ষর করতে হবে। যদি একটি সভা মুলতবি (স্থগিত) করা হয়, তাহলে মূল সভার বিষয়ে কার্যবিবরণী সেটি লিখতে হবে। সেইসাথে সংশ্লিষ্ট সভার তারিখ থেকে ত্রিশ দিনের মধ্যে মুলতবি সভা অনুষ্ঠিত হতে হবে।মিনিটস বইয়ের পৃষ্ঠাগুলিতে ধারাবাহিকভা সংখ্যা লিখতে হবে অর্থাৎ পেইজ নাম্বার লিখতে হবে। মিটিং শেষ হওয়ার ত্রিশ দিনের মধ্যে সভার চেয়ারম্যান দ্বারা সভার কার্য বিবরণীতে স্বাক্ষর করে নিতে হবে। যদি উক্ত ত্রিশ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান দ্বারা স্বাক্ষরিত না হয়, আর যদি চেয়ারম্যান কোন কারণে মৃত্যু, মানুষিক ও শারীরিক অক্ষমতা ঘটে তাহলে একজন পরিচালক দ্বারা যিনি সভায় উপস্থিত ছিলেন তার স্বাক্ষর নিতে হবে, এবং সেই স্বাক্ষর বোর্ড দ্বারা অনুমোদিত হবে।

২। চেয়ারম্যান কার্য বিবরণীর(মিনিটের) প্রতিটি পৃষ্ঠা পাঠ করবেন এবং ইনিশিয়ার স্বাক্ষর করবেন, সর্বশেষে তিনি মিনিটের শেষ পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর করবেন এবং যে তারিখে তিনি কার্যবিবরণীতে স্বাক্ষর করেছেন সেই তারিখে স্বাক্ষরের সাথে যুক্ত করুন।

৩। যদি সভার কার্য বিবরণী একবার স্বাক্ষরিত হয় এবং মিনিট বইতে তা প্রবেশ করে তাহলে তা আর পরিবর্তন করা যাবে না। যাইহোক, স্বাক্ষর হওয়ার পরও ছোটখাটো ত্রুটি হতে পারে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের দ্বারা সংশোধন করে তাতে চেয়ারম্যান ইনিশিয়ার স্বাক্ষর করবেন।

৪। মূল মিনিটস বইয়ে আলাদা মিনিটস লিখে তাতে নতুন করে ছাপানো যাবেনা, অর্থাৎ কোন ধরণের মুছা, কাটা, নতুন বাক্য সংযুক্ত করা যাবেনা। তাছাড়া আলাদাভাবে মিনিটস লিখে তাও মূল বইতে সংযুক্ত করা যাবেনা।

৫। মিনিটস যদি আলগা-পাতার আকারে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় তাহলে যথাযথ পদ্ধতিতে এবং যুক্তিসঙ্গত ভাবে তা আবদ্ধ করে রাখতে হবে।

মিটিং মিনিটিস বা সভার কার্য-বিবরণীর নমুনাঃ

 

মার্টিন এন্ড কুপার কোম্পানী লিমিটেড

মার্টিন এন্ড কুপার কোম্পানী লিমিটেডের বোর্ড অফ ডিরেক্টরস সভার কার্যবিবরণী, যা সকাল ১৪ জুন, ২০২২ইং তারিখে সকাল ১১:০০ টায কোম্পানির ২৩০, গুলশান্স্থ কর্পোরেট অফিসে বোর্ড কক্ষে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়।

উপস্থি প্রতিনিধিগণ:
০১।   জনাব এ.এম. হোসেন, পরিচালক- চেয়াম্যান, মার্টিন এন্ড কুপার কোম্পানী লিমিটেড।
০২।    জনাব আকতার হোসেন, পরিচালক, মার্টিন এন্ড কুপার কোম্পানী লিমিটেড।
০৩।   জনাব মোঃ কিবরিয়া হোসেন, পরিচালক মার্টিন এন্ড কুপার কোম্পানী লিমিটেড।
০৪।   জনাবা, শাম্বী হোসেন, পরিচালক মার্টিন এন্ড কুপার কোম্পানী লিমিটেড।

আমন্ত্রিত অতিথিঃ
১। জনাব, বিলকিস আরা বানু, স্বতন্ত্র পরিচালক, মার্টিন এন্ড কুপার কোম্পানী লিমিটেড।
২। জনাব নোমান বিন সাদিক, জেনারেল ম্যানেজার, মার্টিন এন্ড কুপার কোম্পানী লিমিটেড।
৩। জনাব মোঃ সাহাবুদ্দিন কালু – কোম্পানি সচিব।

স্বাগত মন্তব্যঃ কোরাম থাকায় নির্ধারিত সভা শুরু হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান জনাব এ এম হোসেন, চেয়ারম্যান মহোদয় পরিচালনা পর্ষদ এবং অন্যান্য আমন্ত্রিতদের স্বাগত জানান এবং তিনি মিটিং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য  আদেশ ও সভা আহ্বান করেন। চেয়ারম্যন মহোদয় বোর্ড পরিচালক জনাব কমর‌উদ্দিন খানের অনুপস্থিতির ছুটি গ্রহণ করেন।

সভার বিজ্ঞপ্তিঃ সভার নোটিশটি সকল সদস্যদের কাছে পাঠ করা হয়েছে।

আনোচ্য সূচি-১ (সর্বশেষ বোর্ড সভার কার্য বিবরণী নিশ্চিত করণ): ২৭ মার্চ, ২০২২ তারিখের শেষ বোর্ড সভার কার্যবিবরণী নিশ্চিত (Confirm) করা হয়। এখানে উ্রল্লেখ্য যে, ২৭ মার্চ, ২০২২ তারিখের অনুষ্ঠিত শেষ বোর্ড সভার কার্যবিবরণীগুলিকে পাঠ গ্রহণ করা হয় এবং সেখানে কার্যধারার রেকর্ড হিসাবে সামান্য সংশোধনের পর তা নিশ্চিত করা হয়েছিল।

আনোচ্য সূচি-২ ( উদ্ভূত বিষয় (Matter Arising): ২৭ মার্চ, ২০২২ তারিখের -এ অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বোর্ড সভা থেকে উদ্ভূত বিষয় সমূহঃ

১। এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের জমি ও ভবনের পুনর্মূল্যায়নের প্রস্তাবঃ ড্যান্ডি অ্যান্ড কোম্পানিকে মূল্যায়নের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে এবং ইতিমধ্যেই সাইট ভিজিট সহ মার্টিন বুকস অ্যান্ড রেকর্ডস বিশ্লেষণের কাজ শুরু করেছে। যেখানে এনগেজমেন্ট ফি: 25 লক্ষ (ভ্যাট ব্যতীত) এবং 4 লক্ষ ভ্রমণ এবং অন্যান্য খরচের জন্য। প্রজেক্ট সমাপ্তির প্রত্যাশিত তারিখ: ৩২ কার্যদিবস।

২। হেড অফিসের পুরাতন অপ্রচলিত জেনারেটরের বিক্রি অবসর অথবা বিক্রিঃ খুলনার হেড অফিসে অবস্থিত পুরানো অব্যবহৃত জেনারেটরটি মেসার্স কামাল মেরিন সার্ভিসের কাছে ৫০০০০.০০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হয়েছে।

আনোচ্য সূচি-৩ (অনিয়মকৃত জমিগুলোর শুদ্ধিকরণের একটি প্রক্রিয়া ও উপায়): ইতিমধ্যে ডিকে ট্রেডিং এজেন্সী কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কাজ শুরু করতে গিয়ে তারা দেখতে পেয়েছেন যে, মার্টিন এস্টেট ডির্পাটমেন্ট থেকে ইতিমধ্যে অনিয়মকৃত জমি ক্রয়ের যে ৫৩টি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে তাতে কিছু জমি ক্রয়ের ভুল আছে আর বাকী গুলোতে এখনো ভুল সঠিকভাবে বুঝা যায়না। ভুলভ্রান্তি এড়ানো জন্য ডিকে ট্রেডিং এজেন্সী, মার্টিন এস্টেট এবং ড্যানিয়েল এন্টারপ্রাইজ মাধ্যমে যে জমি কিনেছে তার দলিলের ফটোকপি চাচ্ছেন। ডিকে ট্রেডিং এজেন্সী কর্তৃক অনিয়মকৃত জমিগুলো গুলো যদি ড্যানিয়েল কিংবা মার্টিন এস্টেট ডিপার্টমেন্ট করে থাকে তাহলে তার জন্য এক ধরণের এ্যাকশন প্লান হবে আর যদি ক্রয় করে না থাকেন তাহলে তার জন্য আরেক ধরণের একশন প্লান হবে। কিন্তু ডাইরেক্টর, এস্টেট- মূল দলিলের ফটোকপির পরিবর্তে শুধুমাত্র উত্থাপিত আপত্তি/ত্রুটি জমিগুলের মধ্যে যদি কোন জমি পরবর্তীতে ক্রয় করা হয় তার একটি তালিকা (যে তালিকায় দলিল নং, তারিখ এবং কার থেকে কতটুকু কিনেছেন তার তথ্য থাকবে) যদি একেকে ম্যানেজমেন্ট সম্মত হয় তাহলে সরবরাহ করার পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেন। সকলে একমত প্রকাশ করেন।

আনোচ্য সূচি-৪ (অন্য কোন বিষয়ে চেয়ারম্যানের অনুমতি সাপেক্ষে): সভাতে অন্য কোন বিষয় আলোচনা হয়নি।  অন্য কোন ব্যবাসায়িক কার্যক্রম আলোচনা না থাকায় সভাপতির ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সভা শেষ করেন।

জনাব মার্টিন এস স্যামুয়েল

চেয়ারম্যান

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন