এয়ারপোর্ট রোড, ঢাকা। এই রোডটি বাংলাদেশে সবচেয়ে ভূতুড়ে এলাকা হিসেবে পরিচিত। কালেরকন্ঠসহ কয়েকটি
ছবি: প্রতিকী।
জাতীয় পত্রিকা উক্ত সড়কটির ভূতুড়ে কর্মকান্ড নিয়ে রিপোর্ট করেছে। সড়কটিতে রাতে ও দিনে প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। রাতে পাবলিক পরিবহন কম থাকার কারণে কর্মজীবী মানুষের যাতায়াত কমে আসে। লোকমুখে এই সড়ক নিয়ে প্রায়ই কর্মকান্ডের কথা শুনা যায়। সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় গাড়ির চালকদের। তাই সড়কটিতে যারা রাতে গাড়ি চালান তারা একটি অলিখিত নিয়ম মেনে চলেন। তা হলো গাড়ির স্পিড হাই রাখা। অনেক চালকগণ এই ভৌতিক কর্মকান্ডকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছেন। সড়কের চারপাশে প্রচুর এলইডি লাইট আছে। সড়ক বাতির আলোতে এখানকার গাড়ির চালকরা রাস্তার মাঝখানে একজন মধ্যবয়সী নারীকে বাতাসে চলাচল করতে দেখেন। সড়ক বাতি যেন এই দেখা সহজ করে দিয়েছে। অর্থাৎ 'অশরীরী আত্মা অন্ধকারে থাকতে পছন্দ করে' এই প্রবাদ এখানে খাটেনা। অনেকে এই বিষয়টি জানেন, তাই গাড়ির সামনে আসলে ততটা গুরুত্ব দেননা। কিন্তু সমস্যা হলো যারা নতুন তারা এই দৃশ্য দেখলে ভড়কে যান। এক্সিডেন্ট করে বসেন।এক্সিডেন্টের কারণ, অশরীরী নারীটি গাড়ির সামনে এসে মাঝেমধ্যে দাঁড়ায়, কখনো বাতাসে ভর করে হেঁটে আসে, আবার কখনো পিছনে থেকে তেড়ে এসে গাড়ির কাঁচের সাথে মিলিত হয়ে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে যান। আশ্চার্যের বিষয় হলো গাড়ির একেবারে কাছাকাছি আসলেও কাউকে শারীরিকভাবে ক্ষতি করেন না। ক্ষতি যা হওয়ার তা চালকগণ নিজেরটা নিজে করে থাকেন, অর্থাৎ গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটান। অশরীরী আত্মাটা যেন মানুষকে ভয় দেখিয়ে, এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পান। প্রথম অবস্থায় অনেক ড্রাইভার তাকে দেখে ভরকে যান। তাই মাঝেমধ্যে এই সড়কে দুর্ঘটনার খবর পত্রিকায় আসে। এই অশরীরী মানবীর বিচরণ স্থান হলো কুড়িল বিশ্বরোড থেকে উত্তরার জসিমউদ্দিন পর্যন্ত। রাতের বেলা লোকাল বাসের ড্রাইভাররা উক্ত রোডের চলাচল করার সময় মাঝপথে ব্রেক কষতে চাননা। মাঝপথে কোন যাত্রী নামাতে চাননা, উঠানো যেন অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। যাদের উঠা নামা একান্ত প্রয়োজন তাদের গন্তব্য খিলক্ষেত অথবা কাওলা। যাদের সড়কের মাঝখানে নামতে বা উঠতে প্রয়োজন তারা বাধ্য হয়ে হেঁটে বা অন্য কোন উপায়ে বাড়ি যান, তবে পথে দুয়া দুরুদ পড়তে ভুল করেন না। স্থানীয় অনেকে উক্ত অশরীরী মানবীকে দেখছেন বলে দাবি করেন। কেউ কেউ ধারণা করেন কয়েক বছর আগে গাড়ি দুঘটনায় একই পরিবারের কয়েকজন নিহত হন, তারমধ্যে একজন নারী ছিলো। এই নারীই হলেন অশরীরী মানবীর প্রোটো-টাইপ বা তার অতৃপ্ত আত্মা, যা এই এলাকায় বিচরণ করে থাকে। এই রোড দিয়ে যারা গাড়ি চালান তারা বিষয়টি মোটামুটি জানেন। অনেক চালক এয়ারপোর্ট রোড দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় মনে মনে ইষ্টনাম(সৃষ্টিকর্তার নাম) জপেন যেন অশরীরী আত্মার সামনে না পরেন। কিন্তু সদ্য লাইসেন্স পাওয়া ড্রাইভার হাসিবুর এই বিষয়টি জানতেন না। তিনি তার সাহেবকে কুর্মিটোলা হাসাপাতালে নামিয়ে উত্তরা ফিরে যাচ্ছেন। এয়ারপোর্ট রোডে রাতে গাড়িগুলো অনেক জোড়ে চলে। হাসিবুর সবার সাথে তাল মিলিয়ে গাড়ি জোড়ে টান দিলেন। কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর তিনি যা দেখলেন, তা প্রথম অবস্থায় বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি দেখলেন তার গাড়ি সামনে সাদা কাপড় পরিহিত একজন মহিলা দ্রুতবেগে এগিয়ে আসছে। তিনি হর্ণ দিলেন কিন্তু মহিলা কর্ণপাত করলেন না। মহিলা একেবারে গাড়ির সামলে এসে পড়েছে। উপায় না দেখে হাসিবুর দ্রুত ব্রেক কষলেন। কিন্তু পিছনের গাড়ি তাকে এসে সজোড়ে ধাক্কা দেয়। এতে তার গাড়ির প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতির শিকার হয়। কিন্তু যে মহিলাকে বাঁচানোর জন্য এতো তোরজোড়, ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেন সেই মহিলা মহুর্তেই হাওয়া হয়ে যায়, হাসিব এতে তাজ্জব বনে গেলেন।
এয়ারপোর্ট রোডে অনেকে পথচারী ভৌতিক ঘটনার সাক্ষী। তেমননি একজন জনাব আক্কাস। তিনি খিলখেট থেকে হেটে কাওলা যাবেন। হাতে সিগারেট, মাঝে মাঝে ফুঁকছেন আর ধোঁয়া ছাড়ছেন। আক্কাসের কিছুক্ষণ হাটার পর তার সিগারেট টানা শেষ হয়ে গেছে। ইদানি তিনি প্রচুর সিগারেট ফুঁকছেন। এই সিগারেট ফুঁকার অবশ্যই কারণ আছে। তার বিবাহিত জীবন তিন বছর অতিবাহিত হলে একদিন অধিক রাত্রে ঘরে ফিরেন। ঘরের দরজা টোঁকা দেয়ার পর স্ত্রী দরজা খুলতে দেরি করেন। সেদিন তার চুল ছিলো এলোমেলো। এতে তার সন্দেহ জাগে। খাটের নিচে উঁকি দিয়ে দেখতে পান তার বন্ধু রিপন খাটের নিচে লুকিয়ে আছে। প্রথম অবস্থায় চোর ভাবলেও পরে তার সম্মিত ফিরে আসে। বউ নীলাকে জিঙ্গেস করলে সবকিছু অকপটে স্বীকার করে। পরবর্তীতে সালিশের মাধ্যমে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। বউ ছাড়াছাড়ির পর তিনি প্রচুর সিগারেট ফুঁকেন। বউ তাকে রেখে তারই বন্ধুর সাথে অবৈধভাবে মিলিত হবে এটা তিনি কোনদিনই ভাবতে পারেননি। তিনি যৌন এবং দাম্পত্য জীবনে সুখী ছিলেন। আক্কাস মাঝে মধ্যে বন্ধু রিপনকে বিশ্বাস ঘাতকতার জন্য গালি দেন। আক্কাসের ধারণা রিপন তার বউকে ফুসলিয়ে ফাঁসলিয়ে পরোকীয়ায় প্ররোচিত করেছেন। এই ঘটনা মনে হলে আক্কাস এদিক ওদিক হাটাহাটি করেন। পাঁচ দশ টাকার গাড়ি ভাড়া তিনি হেটে বাড়ি ফিরেন। আজকে আক্কাসের সিগারেটের ফিল্টার ফেলতে মন চাচ্ছেনা, তার কারণ পকেটে একটিও সিগারেট নেই, কিন্তু অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাত থেকে ফিল্টার ফেলে দেন। আক্কাস হাঁটছেন, রোড দিয়ে প্রচুর গাড়ি চলাচল করছে। রাতের গাড়ি শা..শা করে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর তিনি সামনে তাকালেন, তারপর যা দেখতে পেলেন এক কথায় অবর্ণানীয়, তার সামনে থেকে একজন মধ্য বয়স্ক মহিলা হেঁটে আসছেন, যেন এই মাত্র মুর্দা গোসল দেয়ার পর পালিয়ে এসেছে। আক্কাস প্রথম বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে, কিন্তু নাকে আতর, গোলাপ জল আর লোবানের একটি মিশেল গন্ধ ভেসে আসল, যেমনটা মুর্দা গোসল দেয়ার সময় আসে। চোখ পড়তে একটি ভয়ংকর হাসি দিল। আক্কাসের শরীলের একটি ঝাঁকুনি দিয়ে পশম খাড়া হয়ে গেল। আক্কাস ভুতপ্রেত বিশ্বাস করেনা, তা সত্ত্বেও আক্কাস কে.. কে বলে ডাক দিল। ডাক শুনতেই যেন আরো দ্রুত বেগে সামনে চলে এসেছে, একেবারে হাতে কাছে। আক্কাস হাত মুষ্ঠি করে বাতাসে সজোরে ঘুষি মেরে চিৎকার দিয়ে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল। তারপর আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান যখন ফিরে এলো তখন তিনি নিজেকে হাসপাতালে আবিস্কার করেন। কে বা কারা পুলিশকে খবর দেয়, পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিন্তু হাসিব মনে করে এই কাজ বন্ধু রিপন করেছে। যার জন্য তার সংসার ভেঙ্গেছে। রিপন হয়ত নতুন চক্রান্তে মেতে উঠেছে। সে আমাকে জানে মেরে ফেলতে চায়। কিন্তু রিপনকে কিছুতেই ক্ষমা করা যাবেনা। পুলিশকে বিষয়টি জানাতে হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন