আমাদের শরীয়তপুরে কিছু আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে, যেগুলো শরীয়তপুরের মানুষ এখনো বলে থাকেন, বিশেষ করে
আউগ্গায়া- এগিয়ে আসা, কুদায়া- তাড়াতাড়ি, হরমাইল- পাটখড়ি, নমাজ- নামাজ, পাহাল ঘর- পাকের ঘর, খুঁচের- নিচু, বালাতেল- রান্নার তেল (সোয়াবিন তেল), হউরা তেল- সরিষার তেল, আন্ডা-ডিম, বদা-ডিম, লাহান- মতো, উরুম- মুড়ি, কাইজ্জা- ঝগড়া, টমাটুম- টমাটো, জ্যাব- পকেট, হুতা- সুতা, কই- কোথায়, কুডা- খড়কুটো, জিংগোল- বাশের কঞ্চি, কইতর- কবুতর, কুয়া- ডোবা, টাইট- শক্ত করে বাঁধা, ব্লা্উজ-ব্যালাহুচ, ছিদ্র- ফুডা, ঠিল্লা- কলস, বিচোন- হাতপাখা, হারারাইত- সারা রাত্র, আইতাম- আসতাম, এল্লেইগা- এইজন্য, ছালম- তরকারি, মিছা কথা- মিথ্যা কথা, হাপের বাচ্ছা- সাপের বাচ্ছা, চটকানা- থাপ্পর, হজাগ- সজাগ, সিদা- সহজ সরল, পিছা- ঝাড়ু, নুন- লবন, গাঙ- নদী, হিং মাছ- শিং মাছ, কমফা- পেঁপে,হড়া- ঢাকনা, গাই- গাভী, কতা- কথা, হাক- শাক, গইয়া- পেয়ারা, খাওন- খাবার, দুহাইরা বেলা- দুপুর বেলা, ভেন্ডি- ঢেড়শ, উর্শি- সীম, আরমুজ- জামরুল।
হেগর- তাদের, জেইবলা- যেই সময়, ডাঙ্গর- বড়সড়, টেললা- ঠেলা।, বেইন্নালা- ভোরবেলা, বেইল- বেলা, হাইঞ্জাবেলা- সন্ধ্যাবেলা, অক্ষণে- এখন, জেরে- পরে, ইছা মাছ- চিংড়িমাছ, মইচ- মরিচ, পেইছ- পিঁয়াজ, রওন- রসুন, লাডিমাছ- টাকি মাছ, অলদি- হলুদ, দলা- সাদা, গতরধোয়া- গোসল, পুসকুনি- পুকুর, বিলাতী বাগুন- টমেটো, বাগুন- বেগুন, কাডল- কাঁঠাল, বিছুন- হাত পাখা, ডেগ- পাতিল, হাবান- সাবান, হাপ- সাপ, আন্ধার- আঁধার, হুদাই- অযথা, বোদাই- বোকা, বেক্কল- বোকা, চাক্কা- ঢিল, উরসি- শিম, কইতর- কবুতর, ঠ্যাং- পা, আত- হাত, টেহা- টাকা, পুত- পুত্র, কালহা- কালকে, আইজ্জা- আজকে, অহো- এসো, পিড়ন- জামা, ঢেহি- ঢেঁকি, লোদ- কাঁদামাটি, তহন- লুঙ্গি।
বান্দর- বানর, উম দেয়া- ডিমে তাপ দেয়া, বেলাজা- নিলর্জ্জ, পিন্দা- কাপড় পরা, গিবত- বদনাম, খামাহা- অনথর্ক, বেকতেমিল্লা- সবাই একসঙ্গে, কইতারি না- বলতে পারি না, হালা- শালা, হউর- শ্বশুর, হরি- শাশুড়ি, চঙ্গা- মই, বাইট্টা- ছোটখাটো, মুনডায় লয়- মনে চায়, ফাতরা- দুষ্ট, ডাউগ্গা- কলাপাতার ডগা, বরক- কলা পাতা, আগ্গুয়া আয়- সামনে আয়, কপি- বাতি, বাইন্দা- বেঁধে, ধানের হেজা- ধানের শীষ, নাও- নৌকা, নাঙল- লাঙ্গল, হিতান- বালিশের কাছে, ভেটকি মাইরা- হাসি দিয়ে, হান্দায়া- ডুকিয়ে দেয়া, কইডা- কতগুলো, বেকতে- সবাই, নাইতে- গোসল করতে। কচ্চা- সবুজ রং।
শরীয়তপুরের আঞ্চলিক ভাষার শব্দসমূহ অত্র অঞ্চলের সামগ্রিক ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। মানুষের উঠা-বসা, চলা-ফেরা, কৃষিকাজ, ব্যবসা- বানিজ্য এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় আঞ্চলিক এই শব্দগুলোর বহুমাত্রিক প্রভাব রয়েছে। আঞ্চলিক এই শব্দমালা মানুষ সহজে উচ্চরণ করে একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে থাকে। শরীয়তপুরের পদ্মা ও মেঘনা নদী বিধৌত চরাঞ্চলের মানুষ এই শব্দগুলো এখনো জোরেশোরে উচ্চারিত করে। তাই আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহারকারী মানুষকে অবজ্ঞা নয় সম্মানের সাথে দেখতে হবে, কেননা এই ভাষা তার মায়ের মুখ থেকে নিঃসৃত ভাষা।
পরিশেষে, আঞ্চলিক শব্দগুলো টিকে থাকুক আরো হাজার বছর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন