বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০২৩

মঙ্গল শোভাযাত্রা ধর্ম, বিজ্ঞান এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী

প্রতি বছর ঢাক-ডোল পিটিয়ে জন্তু জানোয়ারের প্রতিকৃতি নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয় মানুষ এবং সমাজের মঙ্গল কামনার জন্য,


অপশক্তি বিনাশ করার জন্য। অথচ, দেশে প্রতি বছর  নানা ধরণের অমঙ্গল ঘটনা ঘটেই চলছে এবং অপশক্তি ক্রিয়াশীল আছে। এই তো কিছু দিন আগে বঙ্গ বাজারে আগুন লেগে সাধারণ মানুষের জানমালের বিশাল ক্ষতি হয়েছে।  উপরন্ত মানুষের মধ্যে পশুত্বের আচরণ প্রকাশ পাচ্ছে দিনকে দিন।

মূল কথা হচ্ছে, যে শোভাযাত্রা মানুষের মঙ্গল করতে পারেনা, অপশক্তি দমন করতে পারেনা, এমন শোভাযাত্রা মানুষের পালন করা দরকার নেই। তারচেয়ে মানুষ উক্ত সময়টা উৎপাদনমূলক কাজে লাগালে কিছু অর্থ উপর্জণ করতে পারবে। আর মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করার জন্য রাষ্ট্র লজিষ্টিক সাপোর্টের বিনিময়ে যে টাকা ব্যয় করে তা বেকারদের কল্যাণে ব্যয় করলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

শোভাযাত্রায় যে টাকা ব্যয় হয় সে টাকা যদি দরিদ্র ছাত্রদের মাঝে বন্টিত হয় তাহলে জাতি অনেক উপকৃত হবে।  শোভাযাত্রায় সময় রাস্তা ব্লকড হবে, এতে যান চলাচলে এবং স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হবে। তাই মানুষ কে ভোগান্তিতে ফেলার দরকার আছে বলে আমি মনে করিনা।

এবার আসুন বাস্তবতার নিরেখে জেনে নিই কিসের মাধ্যমে সমাজে মঙ্গল প্রতিষ্ঠা  এবং অপশক্তি দূর করা সম্ভব।

আইন এবং কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে-

(ক) পৃথিবীতে মানুষ, সমাজ বা রাষ্ট্রের মঙ্গল হতে পারে কেবল দেশে সু-শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে,  মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা গেলে এবং মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত থাকলে।

(খ) ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে অশুভ শক্তি দমন করা সম্ভব। কিন্তু  মঙ্গল শোভাযাত্রা কিভাবে অশুভ শক্তি প্রতিরোধ করবে তা-সুর্নিদিষ্টভাবে উল্লেখ নেই। আর  অশুভ শক্তি বলতে কাকে বুঝানো হয় তা নির্দিষ্ট করে বলা নাই।

আমি যদি এখন অশুভ শক্তি হিসেবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরা কে বলি তাহলে একশো তে একশো সঠিক। হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরা তো একাত্তরে পরাজিত হয়েছে। তাহলে আবার  নতুন করে দমন করার কি আছে!  যদি বলা হয় জামায়াত এখনো ক্রিয়াশীল এবং এদেশের অপশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। এক্ষেত্রে বলতে হয়, এই অপশক্তি একাত্তরে ক্রিয়াশীল ছিলো এখনো আছে। তাহলে কি মঙ্গল শোভাযাত্রার এই অশুভ শক্তির কাছে প্রতি বছর পরাজিত হচ্ছে! 

তাহলে মঙ্গলস শোভাযাত্রা পালন করে লাভ কি? অর্থাৎ মঙ্গল শোভাযাত্রা কাগুজে কলামে বা মুখে মুখে মঙ্গল কামনা করলেও বাস্তবে মঙ্গল শোভাযাত্রা কিছুই করতে পারেনা। যারা এই অপশক্তির বিরুদ্ধে শোভাযাত্রা কে দাঁড় করাচ্ছেন তারা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট করার চেষ্টা করছেন। কেননা এই অপশক্তি কে মুক্তিযোদ্ধারা দমন করেছেন স-শরীলে অস্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধ করে। এখন যেহেতু আমরা স্বাধীনতা অর্জণ করে ফেলেছি তাই আপাতত জামায়াতের বিরুদ্ধে অস্ত্র যুদ্ধের প্রয়োজন নেই। তার (জামায়াতের বিরুদ্ধে) আমাদের জাতীয়তাবোধ, মুক্তিযুদ্ধের অর্জন দাঁড় করাতে পারি। আর এর দাড় করানোর দায়িত্ব এদেশের তরুন প্রজন্ম নিবে।  ৭১ এ কিন্তু এই শোভাযাত্রা মাথা গজায়নি। সেই সময় মানুষ নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য অপশক্তির বিরুদ্ধে মিছিল করেছিল। এখন যদি কেউ মানুষ অধিকার(মঙ্গল) প্রতিষ্ঠা করতে চায় কিংবা অপশক্তি দূর করতে চায় তাহলে অবশ্যি মিছিলের মাধ্যমে করতে হবে, আন্দোলনের মাধ্যমে করতে হবে।

আসল কথা হলো জামাত কিন্তু এখনো  বিনাশ হয়নি। তারা দিন দিন মোটাতাজা হচ্ছে। তাহলে তো এখানে মঙ্গল শোভাযাত্রা ব্যর্থ হচ্ছে বলা যায়। আর এই অশুভ শক্তি যেকোন সময়ের চেয়ে বর্তমানে আর্থিক সমৃদ্ধি অর্জণ করেছে।  এবং দল হিসেবে অলিখিত তৃতীয় পজিশনে আছে।

জামায়াত বাদ, এবার যদি বলি হেফাজত অশুভ শক্তি! তাহলে বলব মঙ্গল শোভাযাত্রা এখানে একশতে একশো ফেল। কেননা শাপলা চত্ত্বরের দাবড়ানি খাওয়া ব্যতীত তাদের সাম্প্রতিক সময়ে সাফল্য ব্যাপক। নাস্তিক বিরোধী বা এন্টি ইসলাম বিরোধীদের প্রতি তাদের যে প্রচারণা সেটাতে তারা সফলতা দেখিয়েছে। এমনকি তারা পাঠ্য পুস্তকে পর্যন্ত হাত দিয়েছে। তাছাড়া সরকারী দল এবং বিরোধী দল আগের যেকোন সময়ের চাইতে এখন তাদের বেশি তোয়াজ করে।

হেফাযত বাদ, এবার আসি হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি, হিযবুত তাওহিরি কিংবা অন্যান্য উগ্রবাদী ধর্মীয় সংগঠনের প্রতি।

এই সমস্ত সংগঠন কিন্তু অতীতে ছিলোনা। আর এদেশের মানুষ এখনকার মতো অতীতে এতো উগ্রবাদীতে জড়ায়নি। যখন থেকে এই সমস্ত শোভাযাত্রা কিংবা প্রগতির নামে প্রথা বা সমাজ বিরোধী তৎপরতা শুরু করা হয় তখন থেকে এদেশে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। অর্থাৎ অপ-ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি হয়। তাছাড়া জঙ্গিবাদ দমনে যদি কেউ ক্রেডিট নিতে চায় বা দাবিদার হয় তাহলে সেটা নিতে পারে একমাত্র সরকার। কোন শোভাযাত্রার জঙ্গিবাদ দমনে ভূমিকা নাই, আর থাকার কথা না।

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে-

(ক) নতুন নতুন প্রযুক্তি  কেবল আবিস্কারের মাধ্যমে মানব জাতির মঙ্গল নিহিত হতে পারে। তবে সে প্রযুক্তি কে অবশ্যি মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করতে হবে। এখানে মঙ্গোল শোভা যাত্রা কে প্রযুক্তির বিকল্প হিসেবে ব্যবহারের অপশন নাই।

(খ) অশুভ শক্তি দমনে: প্রযুক্তির মাধ্যমে এবং মেডিক্যাল সাইন্সের কল্যাণে মানুষ রোগ, শোক থেকে মুক্তি পাচ্ছে। দুর্যোগ, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস হলে মানুষ আগাম সর্তকতা পাচ্ছে। এতে বিপদ মোকাবেলায় মানুষ আগেভাগে প্রস্তুতি নিতে পারে। সেই সময় কিন্তু শোভাযাত্রা নিষ্ক্রিয় থাকে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে- একমাত্র আল্লাহ, ঈশ্বর কিংবা ভগমান পারেন মানুষ কে মঙ্গল করতে এবং সকল অশুভ শক্তির বিপদ থেকে রক্ষা করতে।

বলা হয়ে থাকে-

মঙ্গল শোভাযাত্রা’’ অশুভ শক্তির বিরূদ্ধে শান্তি, গণতন্ত্র ও বাঙ্গালী জাতিসত্বার ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত। ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে বছরের প্রথম দিনে ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’’ মাধ্যমে অপশক্তির অবসান এবং বাংলাদেশের মানুষ কল্যাণময় ভবিষ্যতের আশা ব্যক্ত করে চলেছে।- ইউকিপিডিয়া।

বাঙ্গালি জাতির উদ্ভব প্রায় চার হাজারে পূর্বে, আর বাঙালী জাতির উদ্ভবের পূর্বে এদেশে যদি কোন জাতি বসবাস করে থাকে তাহলে তারাও তো অশুভ শক্তির মোকাবেলা করেছে। আমি আবার রিপিট করছি- ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা অশুভ শক্তির বিরূদ্ধে শান্তি, গণতন্ত্র ও বাঙ্গালী জাতিসত্বার ঐক্যের প্রতীক হিসেবে পরিগণিত তাহলে মুক্তিযুদ্ধ কি?

তারপর বলা আছে,

১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে বছরের প্রথম দিনে ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’’ মাধ্যমে অপশক্তির অবসান এবং বাংলাদেশের মানুষ কল্যাণময় ভবিষ্যতের আশা ব্যক্ত করে চলেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কার কাছে কল্যাণের আশা ব্যক্ত করা হচ্ছে? সমাজের এবং মানুষের এই কল্যাণ করবে কে

মূল কথায় আসি, মানুষের সু- শিক্ষা নিশ্চিত করা গেলে, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা গেলে, সু-শাসন নিশ্চিত করা গেলে এবং মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা গেলে মানুষের কল্যান বয়ে আনবে। তাহলে আর বাঁশের কঞ্চি, খড় কুটো এবং মাটির ভাস্কর্যের মাধ্যমে শোভাযাত্রা করে মানুষের কল্যাণ কামনা করা লাগবে না। 

দেশের শাসন ব্যবস্থায় সুশাসন এবং জবাদিহিতা নিশ্চিত করা গেলে মানুষ এমনিতেই সুখে, শান্তিতে, সমৃদ্ধিতে বসবাস করতে পারবে এবং এদেশ হবে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র।

পরিশেষে, মঙ্গল শোভাযাত্রা কে  র‍্যালি, বর্ষবরণ পদযাত্রা কিংবা আনন্দ যাত্রা বললে কারো কোন আপত্তি থাকবেনা। আর থাকার কথাও না। এতে অনুষ্ঠানটি সার্বজনীতা লাভ করবে। কিন্তু আশি বা নব্বই দশকে নব্য আবিস্কৃত একটি শোভাযাত্রা কে অশুভ শক্তি দূর করার প্রতীক, কিংবা মঙ্গল অথবা কল্যাণের প্রতীক বললে বা শোভা যাত্রার মাধ্যমে কোন করুণা, কল্যাণ চাওয়া হলে এনিয়ে মানুষ দ্বিধা দ্বন্দে পড়বে। জাতি আজীবন বিভক্ত হয়ে থাকবে। প্রতিক্রিয়া হিসেবে নতুন কোন রেওয়াজ গড়ে উঠতে পারে। তখন কামড়া কামড়ি আরো বাড়বে বৈ কমবেনা।

বি:দ্র: আমি এখানে মঙ্গল শোভাযাত্রা নানা দিক আলোচনা-সমালোচনার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেউ বইলেন না যেন, আমি বাঙলা নতুন বছরের কিংবা পহেলা বৈশাখের এজমালি  বিরোধিতা করেছি। বাঙালি, বাংলা নববর্ষ হাজার বছরের কিন্তু শোভাযাত্রা এই তো সেদিন প্রসব করেছে মাত্র। অর্থাৎ এখন যাদের জন্ম ১৯৯০ দশকে তাদের বাপ দাদারা শৈশবে শোভাযাত্রা পালন করেনি।  অথচ বাপ দাদারা গাইতেন "আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম"। সবাই কে বৈশাখের শুভেচ্ছা। সৃষ্টি কর্তা সবাইকে মঙ্গল করুক।


কোন প্রশ্ন থাকলে মন্তব্য করুণ। পোষ্টটি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে অন্যদেরকে দেখার সুযোগ করে দিন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

Proposal for Sale of Commercial Lands- Sotterchaya