রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বমি কি, বমির কারণ ও চিকিৎসা।

আমাদের প্রায়ই বমি বমি ভাব হয় এবং বিভিন্ন কারণে বমি করে থাকি। আসলে বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া নির্দিষ্ট কোন রোগ নয় বরং এটি বিভিন্ন রোগের লক্ষণ।


বমি বিভিন্ন কারণে হতে পারে যেমন খাদ্যে বিষক্রিয়া, ভ্রমণ জনিত অসুস্থতা (মোশন সিকনেশ), পরিমাণের চাইতে বেশি খাওয়া, সংক্রমণ ("পাকস্থলী ফ্লু"), অন্ত্রে গন্ডগোল, মস্তিষ্কের আঘাত, অ্যাপেন্ডিসাইটিস এবং মাইগ্রেন। সুতরাং বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া বলতে সাধারণত পেটের ভিতর থেকে বিষাক্ত কোন বস্তু বা রাসায়নিক উপাদান স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছাকৃতভাবে খালি করাকে বুঝায়।

বমি বমি ভাব এবং বমি কি কখনও কখনও গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে? 

উত্তরঃ অবশ্যই হ্যা। কখনো কখনো বমি বমি ভাব এবং বমি করা গুরুতর রোগের লক্ষণ হতে পারে। বমি বমি ভাব বিভিন্ন রোগের ইঙ্গিত দেয়। এই গুরুতর রোগগুলোর মধ্যে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বা লিভারের ব্যাধি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি, মস্তিষ্কের টিউমার এবং কিছু ধরণের ক্যান্সার অন্যতম।

বমির কারণ কিঃ 

উপরের আলোচনা থেকে পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে যে বমির বিভিন্ন কারণ রয়েছে; এই কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- বদহজম, খাদ্যে বিষক্রিয়া, মাথাব্যথা, সংক্রমণ (ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস রোগের সাথে যুক্ত), গর্ভাবস্থা-সম্পর্কিত, সকালের অসুস্থতা (মর্ণি সিকনেস), গতি জনিত অসুস্থতা (মোশন সিকনেশ), ভুল ঔষুধ সেবন, ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, কেমোথেরাপি, অতিরিক্ত খাওয়া, ক্রোনের রোগ, পেটে কৃমি হওয়া ইত্যাদি।

বমি বমি ভাব এবং বমি কখন গুরুতর হিসেবে বিবেচনা করা হবে? 

সাধারণত বমি করার পর যদি নিচের লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহলে বমিকে গুরুতর হিসেবে চিহ্নিত করে দ্রুত ডাক্তারের সরাপন্ন হতে হবে এবং জরুরী চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। খাদ্যে প্রাণঘাতীর উপস্থিতি বা খাদ্যে বিষক্রিয়া সন্দেহ, এক দিনের বেশি বমি করা, পেটে তীব্র ব্যথা, বমির মাধ্যমে রক্ত বের ​​হওয়া (হেমেটেমেসিস নামে পরিচিত), আলসার ফেটে যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রির উপরে উঠা ইত্যাদি। রক্ত বমি হলে অবিলম্বে ডাক্তারকে কল করুন বা নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান।

বমির পর নিম্নলিখিত উপসর্গ দেখা দিতে পারে যেমন, শুকনো ঠোঁট এবং মুখ, মগ্ন চোখ, দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস, গাঢ় প্রস্রাব, প্রস্রাব হ্রাস, মাথাব্যথা, স্মৃতি বিভ্রান্তি (সাময়িক), শরীল দূর্বলতা, ক্লান্তি এবং অবসাদ।

বমির চিৎিসা কি? 

ভ্রমণ জনিত বমি বা বমিবমি ভাব হলে সাধারণ বমি হিসেবে গণ্য করা হয়। কিন্তু রক্ত বমি হলে সাধারণত হার্ট অ্যাটাক, কিডনি বা লিভারের ব্যাধি, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি, মস্তিষ্কের টিউমার এবং কিছু ধরণের ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। তাই দেরি না করে ডাক্তার দেখানো উচিত। সেই ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী মেডিসিন সেবন করতে হবে। তবে সাধারণ বমির জন্য নিম্ন লিখিত ট্যাবলেট যেমন ইমিসট্যাট, অফরান, জয়ট্রিপ, কুলগার্ট, (Emistate, Ofran, Joytrip Coolgut) খেলে বমি ভালো হয়ে যায়। রক্ত বমি হলে ডাক্তার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবেন কি কারণে বমি হয়েছে, তারপর সেই রোগ অনুযায়ী রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করবেন।

বমির ঘরোয়া চিকিৎসা কি? 

আমাদের দেশে বমির ঘরোয়া চিকিৎসায় সাধারণত আদা কুচি কুচি করে চিবানো হয়। এতে বমি বমি ভাব কিছুটা কমতে পারে। তাছাড়া লবঙ্গ মুখে দিয়ে চিবানো, এলাচা মুখে নিয়ে চাবানো বা গন্ধ নেয়া প্রাচীন চিকিৎসা। অনেকে লেবুর রসের সাথে সামান্য লবণ ও চিনি অথবা গুড় মিশিয়ে সরবত করে খেয়ে থাকেন।

বমি কি নাপাক? 

কোরআন হাদিসে বমি নাপাক প্রমাণ হওয়ার যথেষ্ট কোন প্রমাণ নাই। নাপাক মানে না জায়েজ সুতরাং ইসলামি স্কলারগণ এ ব্যাপারে ফতোয়া দিয়েছেন যে, মুখ ভরে বমি করলে বমি যদি গায়ে লাগে তাহলে তা ধূয়ে নিলেই চলবে। তবে সাধারণ বমি হলে শুধু মুখ গড়গড়া করে নিলেই পাক হয়ে যাবে।

ডা. সৈয়দ জাকির হোসাইন
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
ইবনে সিনা ডায়গনিষ্টিক কনসালটেশন সেন্টার , বাড্ডা।




***
এই আর্টিকেলটি যদি আপনাদের সামন্য উপকারে আসে তাহলে মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই আমাদের জানাবেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Recent Post

DECLARATION ABOUT OVERDUE CLASSIFIED LIABILITY & MORTGAGE

DECLARATION ABOUT OVERDUE CLASSIFIED LIABILITY & MORTGAGE