পানি চক্র বা জল (Water Cycle) চক্রকে ইংরেজীতে হাইড্রোলজিক্যাল সার্কেল (hydrologic cycle), বলে। পানি চক্রের মাধ্যমে পানি, পানির কনা সমূহ বিভিন্ন স্থানে
সমুদ্র এই পানি চক্রের মধ্যে প্রধান ভূমিকা পালন করে, কারণ বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্পের
৪৪% সমুদ্র হতে আসে এবং অধঃক্ষেপনের অর্থাৎ বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, শিশির প্রভূতির ৭৪%
সমুদ্র বক্ষে পতিত হয়। বায়ুমন্ডলের জলীয় বাষ্প দ্বারাই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে মেঘশক্তি
সঞ্চারিত হয় এবং একই সাথে পানি নিজেও বাহিত হয়। জলীয় বাষ্প শীতল হয়ে বৃষ্টি বা তুষারপাত হিসাবে ভূ-পৃষ্ঠে নেমে আসে। পানি চক্রের মূল চালিকা শক্তি হলো সূর্য।
পানি চক্র সম্পাদন প্রক্রিয়াঃ
জল চক্রকে প্রায়শই বাষ্পীভবন, ঘনীভূতকরণ এবং
বৃষ্টিপাতের একটি সাধারণ বৃত্তাকার চক্র হিসাবে শেখানো হয়। যদিও এটি একটি দরকারী মডেল
কিন্তু বাস্তবতা অনেক বেশি জটিল। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে,
(ক) বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ায় সমুদ্র
এবং নদী, হ্রদ এবং পানির সংস্থা থেকে বায়ুমণ্ডলে ৯০% আর্দ্রতা সরবরাহ করে। বাষ্পীভবন
প্রক্রিয়া বলতে সাধারণত সূর্যের তাপে পানিকে গ্যাসে (জলীয় কণায়) রুপান্তর করাকে বুঝায়।
(খ) অবশিষ্ট ১০% এর বেশিরভাগই শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে উদ্ভিদ দ্বারা নির্গত হয়। উদ্ভিদ প্রথম অবস্থায় তার মূল বা শিকড় দিয়ে পানি গ্রহণ করে, তারপর প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় পানিকে তার পাতার নিচের দিকে ছোট ছোট ছিদ্র দিয়ে ছেড়ে দেয়। উদাহরণস্বরূপ, ১ একর আয়তনের একটি ভুট্টা ক্ষেত প্রতিদিন ৪,০০০ গ্যালন জল সঞ্চালন করতে পারে।
বায়ুমণ্ডলীয় আর্দ্রতার প্রাথমিক রূপ হলো জলীয় বাষ্প, বাষ্পীভবন ও গাছের প্রস্বেদন প্রক্র্রিয়ায় জলীয় বাষ্প কণাগুলো পরমানন্দের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। । শিশির, হিম, কুয়াশা, মেঘ এবং বৃষ্টিপাতের জন্য জলীয় বাষ্প অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ট্রপোস্ফিয়ার (6 থেকে 8 মাইল [10 থেকে 13 কিলোমিটার] উচ্চতার নীচের অঞ্চল) সীমাবদ্ধ থাকে। জলচক্রে পৃথিবী এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে জলের ক্রমাগত চলাচল দেখায়। এটি একটি জটিল সিস্টেম যা অনেকগুলি বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করে। প্রক্রিয়াগুলো হলো-(১) তরল পানি জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়, (২)জলীয় বাষ্প বায়ূমন্ডলে প্রবেশ করে ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে (ঘনীভবন) (৩) মেঘ থেকে বৃষ্টি ও তুষার আকারে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে। পৃথিবীতে বিভিন্ন পর্যায়ে পানি পরিবাহিত হয় (পরিবহন)। প্রথমে, তরল জল ভূমি জুড়ে প্রবাহিত হয়, দ্বিতীয়ত, ভূমিতে (অনুপ্রবেশ এবং পারকোলেশন) এবং ভূমির মধ্য দিয়ে ভূগর্ভস্থে চলে যায়। তৃতীয়ত, ভূগর্ভস্থ জল উদ্ভিদ মূল দিয়ে টেনে নেয় এবং উদ্ভিদ সেই জল বায়ুমণ্ডলে বাষ্পীভূত করে (বাষ্পীভবন)। কঠিন বরফ এবং তুষার সরাসরি গ্যাসে পরিণত হতে পারে (পরমানন্দ)। গ্যাস (জলীয় বাষ্প) শক্ত হয়ে মেঘ হয়ে যায় (জমা)।শীতল বাতাসে, জলীয় বাষ্প গ্যাস থেকে তরলে ঘনীভূত হয়ে মেঘের ফোঁটা পড়া সম্ভাবনা বেশি থাকে। মেঘের ফোঁটা বাড়তে পারে এবং বৃষ্টিপাত তৈরি করতে পারে (বৃষ্টি, তুষার, ঝিরিঝিরি, হিমায়িত বৃষ্টি এবং শিলাবৃষ্টি সহ), যা বায়ুমণ্ডল থেকে পৃথিবীর পৃষ্ঠে জল পরিবহনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া। চক্রের বিভিন্ন পর্যায়ে, পানির কিছু অংশ পানীয়, ধোয়া, সেচ এবং অন্যান্য বিভিন্ন ব্যবহারের জন্য মানুষ বা অন্যান্য জীবের দ্বারা আটকানো হয়। পানি চক্রে আমরা যা শিখলামঃ
ঘনীভবন (Condensation): বাষ্প
অবস্থা থেকে তরল অবস্থায় রূপান্তর প্রক্রিয়াকে ঘনীভবন বলে। বর্তমান তাপমাত্রায় বাষ্পীভবনের
মাধ্যমে একটি মুক্ত জলের পৃষ্ঠ থেকে বাতাসে যতটা জলীয় বাষ্প পাওয়া যায় তার চেয়ে
বেশি জলীয় বাষ্প ধারণ করার সাথে সাথে ঘনীভবন ঘটতে পারে। এই অবস্থা হয় শীতল বা বিভিন্ন
তাপমাত্রার বায়ু ভরের মিশ্রণের পরিণতি হিসাবে ঘটে। ঘনীভবনের মাধ্যমে, বায়ুমণ্ডলে
জলীয় বাষ্প নির্গত হয় যাতে বৃষ্টিপাত হয়।
বাষ্পীভবন/বর্ষণ
(Precipitation): বাষ্পীভবন বলতে সাধারণত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, অধঃক্ষেপনকে বুঝায়। তাই
বাষ্পীভবন
হলো পৃথিবীর জলচক্রের মধ্য দিয়ে কীভাবে জল চলে, সমুদ্র, ভূমি এবং বায়ুমণ্ডলকে সংযুক্ত
করে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান৷ কোথায় বৃষ্টি হয়, কতটা বৃষ্টি হয় এবং বৃষ্টি,
তুষার বা শিলাবৃষ্টির চরিত্র জানার ফলে বিজ্ঞানীরা স্রোত, নদী, ভূপৃষ্ঠের প্রবাহ এবং
ভূগর্ভস্থ জলের উপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন। ঘন ঘন এবং বিস্তারিত
পরিমাপ বিজ্ঞানীদের মডেল তৈরি করতে এবং পৃথিবীর জল চক্রের পরিবর্তনগুলি নির্ধারণ করতে
সহায়তা করে।
বায়ূর আর্দ্রতা (Humidity): বায়ূর
আর্দ্রতা বলতে বুঝায় কোন নির্দিষ্ট স্থানে কি পরিমাণ জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি আছে তার
পরিমান। অর্থাৎ বায়ূর আদ্র্রতা হলো একটি নির্দিষ্ট স্থানে জলীয় বাষ্পের ঘণমাত্রা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন