পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ১৭ মে, ২০২৩

বাদশাহ্ ও বাদীর কাহিনী।

বাদশাহ্ ও বাদীর কাহিনী


এক বাদশাহ শিকারে গেলে পথে এক অপরূপ সুন্দরী যুবতীকে দেখতে পান । তাকে দেখামাত্র বাদশাহ তার আসক্ত হয়ে পড়েন এবং তাকে অনেক টাকা দিয়ে খরিদ করে আনেন। সুন্দরী রাজপ্রসাদে এসে আরও সুন্দর হওয়ার কথা দূরে থাকুক, দিন দিন শুকায়ে যেতে লাগল। বাদশাহ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। বড় বড় ডাক্তার-বৈদ্য আনা হল । কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। রোগিনী ভাল হয় না। তিনি আল্লাহর নিকট অনেক কান্নাকাটি করতে লাগলেন। আল্লাহর করুণায় বাদশাহ এর গায়েবি চিকিৎসকের সন্ধান পেলেন। ঐ চিকিৎসক এসে সুন্দরীকে একান্তে অনেক পরীক্ষা করলেন। তিনি বললেন, সুন্দরীর দেহে কোন রোগ নেই, কিন্তু তার মনে রোগ রয়েছে। সে একজনের প্রেমাসক্ত। সে একজন স্বর্ণকারকে ভালবাসত। বাদশাহ তাকে স্থানান্তরিত করায় তার ভালবাসায় ছেদ পড়ে। ফলে সে মানসিক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। অনেক খোজ-খবর করে বাদশাহ ঐ স্বর্ণকারকে প্রসাদে নিয়ে আসলেন এবং সুন্দরীর সঙ্গে তার মিলন ঘটায়ে দিলেন । তারা দু'জন ইচ্ছামত দৈহিক আনন্দ উপভোগ করল। কিন্তু স্বর্ণকার রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ল। তার দৈহিক সৌন্দর্য লোপ পেতে লাগল। এর সঙ্গে সঙ্গে তার প্রতি সুন্দরীর প্রেমে ভাটি পড়ল। একদিন ঐ স্বর্ণকার প্রাণত্যাগ করল। তার মৃত্যুর পর সন্দরী সম্পূর্ণ রোগমুক্ত হয়ে গেল এবং বাদশাহ সুন্দরীকে নিয়ে আনন্দে-আহ্লাদে দিন গুজরান করতে লাগলেন ।

এখানে মৌলানা রুমি মানুষের রুহকে বাদশাহ, নফসকে সুন্দরী বাঁদী এবং দুনিয়াকে স্বর্ণকাররূপে কল্পনা করেছেন। রুহ নফসের আসক্ত হয়। কিন্তু নফস দুনিয়ার আসক্ত থাকে । যতক্ষণ পর্যন্ত দুনিয়ার আসক্তি তার হৃদয় হতে লোপ না পায়, ততক্ষণ পর্যন্ত নফস সুন্দরীকে তার কব্জায় আনতে পারে না। দুনিয়ার প্রতি নফসের আসক্তির পরিসমাপ্তি ঘটলে রুহ আধ্যাত্মিক মার্গে উপনীত হতে পারে। এশকে হাকিকি অর্থাৎ প্রকৃত প্রেম ও এশকে মাজায়ি অর্থাৎ দৈহিক আকর্ষণ এক নয়। এ কাহিনীর শেষভাগে রুমি বলেন

عشق نبود عاقبت ننگی بود

عشق هایی کز پی رنگی بود

এশ্ক্ব হা’য়ী কায্ পেইয়ে রাঙ্গী বোভাদ 
এশ্ক্ব নাবোভাদ্  অক্ৰেবাত নাঙ্গী বোভাদ্

বাহ্যিক রূপ-রস নিয়ে যে প্রেমের সৃষ্টি হয়, সেটা প্রকৃত প্রেম নয় এবং তা পরিণামে লজ্জার কারণ হয়ে পড়ে। যৌবনরূপী বিক্ষুব্ধ সাগরের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে কত কত যুবক-যুবতী যে দৈহিক আকর্ষণকে এশকে হাকিকি অর্থাৎ প্রকৃত প্রেম মনে করে মরে ভেসে উঠছে, তার ইয়ত্তা নেই।

 (সূত্র: মসনভি, ১ম খণ্ড, অধ্যায়-৯ এবং সৈয়দ আহমদুল হক রচনাবলি)।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন