পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৩ মে, ২০২৩

মূলধন ব্যয় বা Capital Expenditure কাকে বলে? মূলধন ব্যয়ের ধারণা, প্রকারভেদ এবং মূলধন ব্যয় নির্ণয়ের তাৎপর্য- সত্যের ছায়া

মূলধন ব্যয় (Capital Expenditure): এটি একটি স্থায়ী সম্পদ অর্জনের উদ্দেশ্যে করা ব্যয়কে প্রতিনিধিত্ব করে যা সেখান থেকে মুনাফা অর্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে করা হয়। যেমন- অফিস ব্যবহারের জন্য কম্পিউটার কেনার জন্য প্রদত্ত অর্থ হল মূলধন ব্যয়। অনেক সময় মেশিনের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খরচ হতে পারে। এটিও একটি মূলধন ব্যয় হবে। মূলধন ব্যয় ব্যালেন্স শীটের অংশ। মূলধন ব্যয়ের মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি  সম্পদ ক্রয়, ক্রয় পরবর্তী সার্ভিস বা রক্ষণা-বেক্ষণ৷  নতুন নতুন সম্পদ ক্র‍য়ের মাধ্যমে সময়ের সাথে সামঞ্জস্যতা বিধান (তথ্য ও প্রযুক্তি, মেশিনারি) করা হয়।  এই ধরণের ব্যয়কে হিসাব বিজ্ঞানের ভাষায় ক্যাপেক্স বা CapEx ডাকা হয়। CapEx  তখনই সংঘটিত হয় যখন প্রতিষ্ঠান নতুন নতুন বিণিয়োগের ক্ষেত্র খুলে। এই বিনিয়োগ স্থায়ী মূলধন হতে ব্যবহারের প্রবণতা বেশি।

প্রতিটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব মূলধন ব্যয় থাকে। মূলধন ব্যয় বলতে বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত তহবিলের যে ব্যয় তাকে বুঝায়। সাধারণত তহবিলের যোগানদাতাদের প্রত্যাশিত আয় প্রতিষ্ঠানের জন্য মূলধন ব্যয় হিসেবে গণ্য হয়। দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের বিভিন্ন উৎস রয়েছে যেমন- দীর্ঘমেয়াদি ঋণ, বন্ড, ঋণপত্র, সাধারণ শেয়ার, অগ্রাধিকার শেয়ার ইত্যাদি। এরূপ প্রতিটি উৎস থেকে তহবিল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের একটি প্রত্যাশিত আয় থাকে। তহবিল সরবরাহকারীর জন্য যেটি প্রত্যাশিত আয়, সেটি তহবিল সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য মুলধন ব্যয়। উদাহরণস্বরূপ:
এসিআই ফরমূলা লিমিটেড যদি যন্ত্রপাতি কয় করার জন্য ব্যাংক থেকে ১২% সুদে ঋণ গ্রহণ করে, তাহলে তার মুলধন খরচ হবে ১২%। অধিকাংশ ব্যবসায় প্রতষ্ঠান বিনিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল একাধিক উৎস থেকে সংস্থান করে। এক্ষেত্রে সকল উৎসের মূলধন খরচের গড় হার উক্ত ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য মুলধন ব্যয় হিসেবে বিবেচিত হবে।

অতএব বলা যায়, বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত মূলধনের মালিকদের প্রত্যাশিত আয় মেটাতে প্রতিষ্ঠানকে তার বিনিয়োগের উপর সর্বনিম্নে যে হারে আয় প্রয়োজন, সে হারকে মূলধন ব্যয় বলা হয়। 

মূলধন ব্যয়ের প্রকারঃ মূলধন ব্যয় মূলত দুই প্রকার, যথা- (ক) চলমান রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় (খ) আয় বৃদ্ধির ব্যয়।

মূলধন ব্যয় নির্ণয়ের গুরুত্ব বা তাৎপর্য ঃ
১. বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন: বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন বলতে কোন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে হবে এবং কোন প্রকল্প বর্জন করতে হবে তা নির্ধারণ করাকে বুঝায়। প্রকল্পের আয়ের হারের সাথে মূলধন ব্যয়ের তুলনা করে বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। উদাহরনস্বরূপ, বিএসসি কোম্পানি লিমিটেড একটি নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার চিন্তাভাবনা করছে যার আয়ের হার ১৪% এবং মূলধন ব্যয় ১১%। যেহেতু আয়ের হার মুলধন ব্যয় হতে বেশি, সেহেতু প্রকল্পটিতে বিনিয়োগ করা উচিত। অতএব, সঠিক মূলধনি ব্যয় নির্ণয় সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।  

২. ঋণ নীতি নির্ধারণঃ  একটি কোম্পানির মোট মুলধনের কী পরিমাণ ঋণ সংগ্রহের মাধ্যমে করা হয় তাকে ঋণ নীতি বলে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে মালিকদের ইক্যুইটি অংশ এবং ঋণ এদ’ুটির যোগফলকে মোট মূলধন বলে। একটি প্রতিষ্ঠান তার মোট মূলধনের ৫০% নিজস্ব মূলধন বা ইক্যুইটি এবং ৫০% ঋণ অথবা ৪০% নিজস্ব মূলধন বা ইক্যুইটি এবং ৬০% ঋণ অথবা ৬০% নিজস্ব মূলধন এবং ৪০% ঋণ, এরূপ যেকোনো অনুপাতে সংগ্রহ করতে পারে। মূলধন কাঠামোতে ঋণ মুলধন ব্যবহার করার জন্য আয় বেড়ে যায়। কারণ সুদ হচ্ছে করবাদযোগ্য ব্যয় এবং কর সুবিধা পাওয়ার কারণে মুলধন ব্যয় কমে যায়। ঋণ মূলধন আর্থিক ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। ফার্মকে মূলধন কাঠামোতে ঋণ মুলধন ও ইক্যুইটি মূলধনের অনুপাত এমন হওয়া উচিত যাতে মূলধন ব্যয় সর্বনি¤œ হয় এবং ফার্মের মূল্য সর্বোচ্চ হয়। 


৩. লভ্যাংশ নীতি নির্ধারণঃ একটি কোম্পানি নিট আয় হতে কী পরিমাণ অর্থ লভ্যাংশ আকারে শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বন্টন করবে এবং কী পরিমাণ অর্থ সংরক্ষিত আয় হিসেবে রেখে দিবে তা নির্ধারণ করাকে লভ্যাংশ নীতি বলে। বিভিন্ন ফ্যাক্টর লভ্যাংশ প্রদানের পরিমাণকে প্রভাবিত করে থাকে তাই লভ্যাংশের পরিমাণ ভিন্ন হয়ে থাকে। সুতরাং লভ্যাংশ নীতি নির্ধারণে মুলধন ব্যয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  

৪. ফার্মের মূল্য নির্ধারণঃ ফার্মের মূল্য নির্ধারণ বলতে শেয়ারের বর্তমান মূল্য নির্ধারন করাকে বুঝায়। ফার্মের মূল্য নির্ধারনে মূলধন ব্যয় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে।
উপরিউক্ত কারণসমূহ ছাড়াও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ যেমন- চলতি মূলধন ব্যবস্থাপনা নীতিমালা, মূলধন বাজেটিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে মূলধন ব্যয় পরিমাপের গুরুত্ব অপরিসীম। 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন